ডেস্ক নিউজ
করোনার মধ্যেও রাজস্ব আহরণে চমক দেখিয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ২৭ হাজার ২৮৪ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। প্রবৃদ্ধি প্রায় ২৬ শতাংশ। যা এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ। আমদানি বৃদ্ধি, দ্রুত পণ্য শুল্কায়ন, মিথ্যা ঘোষণায় শুল্কফাঁকি রোধে নিবিড় তদারকি, অসাধু আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এবং জালিয়াত চক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ায় রাজস্ব আদায় বাড়ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
এ ধারা অব্যাহত থাকলে অর্থবছরের শেষে ৬৪ হাজার ৭৫ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব হবে বলেও আশা করছেন তারা। রাজস্ব আহরণ বাড়লে সরকারের নানা কার্যক্রমের ব্যয় নির্বাহ সহজ হয়। ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেয়ার প্রয়োজন তেমন হয় না। এর ফলে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবাহ বাড়ে। তাতে দেশে বিনিয়োগ এবং কর্মসংস্থানও বাড়ে সমানতালে। সুদৃঢ় হয় দেশের অর্থনীতি। আর তাই রাজস্ব বৃদ্ধির এ প্রবণতাকে অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআরের অধীন দেশের সবচেয়ে বড় রাজস্ব আদায়কারী প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস। দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর ভিত্তিক এ রাজস্ব আদায়কারী প্রতিষ্ঠান রাজস্ব আহরণে অতীতের সকল রেকর্ড অতিক্রম করেছে। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথমার্ধে অর্থাৎ জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে ২৭ হাজার ২৮৪ দশমিক ০৪ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে।
যা আগের অর্থবছরের ওই সময়ের তুলনায় পাঁচ হাজার ৬১৯ দশমিক ৬৬ কোটি টাকা বেশি। রাজস্ব আহরণের প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ২৫ দশমিক ৯৪ শতাংশ। তবে এ সময়ে এনবিআর এর বেঁধে দেয়া লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে চার হাজার ২৮৫ দশমিক ৯২ কোটি টাকা কম রাজস্ব আদায় হয়েছে। ছয় মাসে রাজস্ব আদায়ের টার্গেট ছিল ৩১ হাজার ৫৭০ কোটি টাকা। করোনা মহামারীর মধ্যেও গত ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫১ হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। রাজস্ব আদায় প্রবৃদ্ধি ছিল ২৩ দশমিক ২০ শতাংশ। যা বিগত এক যুগে সর্বোচ্চ এবং ২৫ বছরে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। করোনা মহামারী মোকাবেলা করে অর্ধ লাখ কোটি টাকা রাজস্ব আহরণের মাইলফলক অতিক্রম করায় চলতি অর্থবছরে রেকর্ড ৬৪ হাজার ৭৫ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে এনবিআর। রাজস্ব আহরণের এ ধারা অব্যাহত থাকলে টার্গেট অর্জন সম্ভব বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
বিশেষ করে মিথ্যা ঘোষণায় মোটা অঙ্কের শুল্কফাঁকির অপচেষ্টা রোধ করা গেলে রাজস্ব আয় আরও বাড়বে। কঠোর নজরদারির মধ্যেও থেমে নেই মিথ্যা ঘোষণায় শুল্কফাঁকি। যত সংখ্যক চালান ধরা পড়ছে তার চেয়ে কয়েকগুণ নিরাপদে গন্তব্যে চলে যাচ্ছে। জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে শুল্কফাঁকি দিয়ে পণ্য খালাসের ঘটনাও ঘটছে। এরমধ্যে দুয়েকটি ঘটনা ধরাও পড়েছে।
তবে কাস্টমস সংশ্লিষ্টরা জানান, সাম্প্রতিক সময়ে রাজস্ব ফাঁকির বড় বড় চালান ধরা পড়েছে। তাৎক্ষণিক এসব অসাধু আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বিভাগীয় মামলার পাশাপাশি অর্থপাচার আইনেও মামলা হচ্ছে। বেশ কয়েকটি সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে। শুল্কফাঁকির ঘটনা ধরা পড়ায় কয়েকগুণ হারে জরিমানা আদায় করা হচ্ছে। এতে অসাধু আমদানিকারক চক্রের অপতৎপরতা কমে এসেছে। আগের তুলনায় দ্রুত সময়ে শুল্কায়ন হচ্ছে। রাজস্ব আদায়ে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হচ্ছে। এর ফলে রাজস্ব আহরণে ইতিবাচক সুফল মিলছে।
দেশের অর্থনীতির মূলচালিকাশক্তি চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বেড়েছে। বন্দরে এখন জাহাজ বা কন্টেইনারের কোন জট নেই। আমদানি পণ্যবাহী জাহাজ এসেই ভিড়তে পারছে জেটিতে। বন্দর গতিশীল হওয়ায় রাজস্ব আহরণেও গতি এসেছে। করোনার ধকল কাটিয়ে আমদানি-রফতানি সচল হয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এখন পুরোদমে সচল। আর তাতে বাড়ছে রাজস্ব আদায়।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার মো. ফখরুল আলম বলেন, সার্বিকভাবে আমদানি বাড়ছে। এর পাশাপাশি রাজস্বফাঁকি রোধে কঠোর নজরদারি, দ্রুত শুল্কায়ন এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত হওয়ায় রাজস্ব আদায় বাড়ছে। দেশের অর্থনীতিও এখন পুরোদমে সচল। এ ধারা অব্যাহত থাকলে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব বলে জানান তিনি