ডেস্ক নিউজ
রাজধানীতে যানজট সমস্যা দীর্ঘদিনের। এই যানজটের কারণেই নগরবাসীর নষ্ট হচ্ছে দৈনিক কর্মঘণ্টা। ভোগান্তি নিরসনের কোন পদক্ষেপই কাজে আসে না। যানজটের এই জটিল সমস্যা থেকে সমাধানের পথ খুঁজতে রাজধানীর ভেতরের তিনটি বাস টার্মিনাল সরানোর ব্যাপারে একমত সবাই। এ ছাড়া ট্রাক টার্মিনালের জন্য পৃথক স্থান নির্ধারণ করা হয়।
পরিবহন মালিক-শ্রমিক, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্টরা চান উদ্যোগটির দ্রুত বাস্তবায়ন। এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা। ইতোমধ্যে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন তুলে ধরা হয়। তবে যাতায়াতের ব্যবস্থা না করে টার্মিনাল স্থানান্তরে লাভের চেয়ে ভোগান্তি বেশি হবে বলে মনে করছেন পরিবহন বিশেষজ্ঞরা। আন্তঃজেলা টার্মিনাল স্থানান্তরের পরিকল্পনা ভালো। কিন্তু নিশ্চিত করতে হবে রাজধানীর বাইরে নেমে যাত্রীরা এমন গণপরিবহন পাবেন, যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে শহরে ঢুকতে পারেন।
ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের সাম্প্রতিক চূড়ান্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, টার্মিনাল ও ডিপো নির্মাণের জন্য চিহ্নিত এলাকাগুলোকে ডিটেইল এরিয়া প্ল্যানে (ড্যাপ) পরিবহন অবকাঠামো হিসেবে চিহ্নিত করতে রাজউককে চিঠি দেয়া হয়েছে।
গত রোববার সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় চূড়ান্ত প্রতিবেদনের ওপর প্রেজেন্টেশন হয়। এর তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীর উপকণ্ঠের ৯টি এলাকার ১৬টি স্থানে জরিপ শেষে ১০টিকে আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল এবং লোকাল বাস ও ট্রাকের ডিপো নির্মাণের জন্য চিহ্নিত করা হয়।
জানা গেছে, মহাখালী, সায়েদাবাদ ও গাবতলী টার্মিনালে মাত্র ৮০০ বাসের ধারণক্ষমতা রয়েছে। এই তিন টার্মিনালে এখন ৯ হাজার ২৯৮টি বাস রাখা হয়। আরও কয়েক হাজার বাস টার্মিনালের আশপাশের রাস্তায় পার্কিং করা হয়। এতে যানজট হয়। তেজগাঁওয়ে রেলের জমিতে এবং সায়েদাবাদে সিটি করপোরেশনের জায়গায় ট্রাকের ডিপো রয়েছে। অবৈধভাবে গড়ে ওঠা দুই ডিপো উচ্ছেদে অনেকবার কথা হলেও বিকল্প না থাকায় তা করা যায়নি।
গাবতলী, সায়েদাবাদ ও মহাখালী থেকে বাস টার্মিনাল সরিয়ে কেরানীগঞ্জের বাঘাইর, সাভারের হেমায়েতপুর ও বিরুলিয়া, নারায়ণগঞ্জের ভুলতা, কাঁচপুর সেতু ও কাঁচপুরের মদনপুরে ৬টি আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। এতে ১২ হাজার ৫১১ কোটি ৭৭ লাখ টাকার ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। অগ্রাধিকারভিত্তিতে কাঁচপুর উত্তর (কাঁচপুর ব্রিজ সংলগ্ন স্থান) ও কাঁচপুর দক্ষিণে (মদনপুর) টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। ফলে আসলে পাঁচটি টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তাব রয়েছে চূড়ান্ত প্রতিবেদনে। কাঁচপুর উত্তরে আন্তঃজেলা টার্মিনালের সঙ্গে লোকাল বাসের ডিপোও হবে। এ ছাড়া পূর্বাঞ্চলের কাঞ্চন এবং কেরানীগঞ্জের আটিবাজারের ভাওয়াল এলাকায় লোকাল বাস ডিপো হবে। আশুলিয়ার বাইপাইল ও গাজীপুরে হবে বাস ও ট্রাকের ডিপো। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে এমন প্রস্তাব করা হয়েছে।
গাবতলী টার্মিনালে ২২ একর, মহাখালীতে ৯ একর এবং সায়েদাবাদে ১০ একর জমি রয়েছে। কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগার সংলগ্ন বাঘাইরে ৩৩ দশমিক ৬৩ একর জমি অধিগ্রহণ করে নতুন টার্মিনাল নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে। হেমায়েতপুরে ৪৫ একর, বিরুলিয়ার ভাটুলিয়ায় ২৬ দশমিক ৭ একর, কাঁচপুর দক্ষিণে ২৬ দশমিক ৭ একর, কাঁচপুর উত্তরে ১৫ দশমিক ৫ একর এবং ভুলতায় ২৪ দশমিক ২ একর জমি অধিগ্রহণ করতে হবে টার্মিনাল নির্মাণে। ছয়টি আন্তঃনগর টার্মিনাল নির্মাণে যে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে তার বড় অংশই যাবে জমির জন্য। আট হাজার ২০২ কোটি লাগবে জমি অধিগ্রহণে।
হেমায়েতপুরে টার্মিনাল নির্মাণে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে তিন হাজার ১২৩ কোটি টাকা। জমির জন্য লাগবে দুই হাজার ১০২ কোটি টাকা। টার্মিনাল নির্মাণে ৫৬৪ কোটি এবং জমি ভরাটে ২৫৯ কোটি টাকা লাগবে। কাঁচপুর উত্তরে টার্মিনাল ও ডিপো নির্মাণে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে এক হাজার ২৭ কোটি টাকা। জমির জন্যই লাগবে ৭৮৯ কোটি টাকা। প্রতিবেদনে ট্রাক টার্মিনাল বাইপাইল এবং গাজীপুর স্থানান্তরের প্রস্তাব করা হয়েছে। এ জন্য বাইপাইলে ৩৭ দশমিক ১ একর এবং গাজীপুরের টঙ্গীতে ১১ দশমিক ৭ একর জমি লাগবে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, পুনর্বিন্যাস কমিটির সদস্য সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, রাজধানীর অভ্যন্তরীণ রুটে বাসগুলো রাখার জায়গা নেই। রাস্তায় পার্ক করায় সমস্যা হয়। পূর্বাঞ্চল, আটিবাজার ও কাঁচপুরে ডিপো হলে এ সমস্যা থাকবে না।
বাস রুট পুনর্বিন্যাস কমিটির আহ্বায়ক ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস সম্প্রতি বলেছেন, রাজধানীর প্রবেশপথে হবে চারটি আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল। রাজধানীতে ঢুকতে পারবে না দূরপাল্লার বাস।