ডেস্ক নিউজ
মোবাইল আর্থিক সেবার আওতা বাড়াল বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন থেকে ব্যাংকের বাইরেও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এ সেবা দেয়া যাবে। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মেনে লাইসেন্স নিতে হবে নতুন প্রতিষ্ঠানকে। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে নতুন এক নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে মোবাইলের মাধ্যমে আর্থিক সেবা আরো বেড়ে যাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠানগুলোকে মোবাইল ব্যাংকিং করার অনুমোদন রয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমোদনের পর থেকে এ পর্যন্ত ১৩টি ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান মোবাইল ব্যাংকিং করে আসছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, গত ডিসেম্বর শেষে ১৩টি সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে ৭১ হাজার ১৮২ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। আগের ডিসেম্বরে তা ছিল ৫৬ হাজার ৫৫৬ কোটি টাকা। এ হিসাবে গত এক বছরে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ১৪ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। শতকরা হিসাবে এক বছরে লেনদেন বেড়েছে প্রায় ২৬ শতাংশ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে সারা দেশে আর্থিক লেনদেন বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি কর্মসংস্থানও ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে। গত ডিসেম্বর শেষে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন করার জন্য ১১ লাখ ২৩ হাজার ৪৫৮ জন এজেন্ট নিয়োগ পেয়েছেন। এক বছর আগে এজেন্ট সংখ্যা ছিল ১০ লাখ ৫৮ হাজার ৮৯৭ জন। এ হিসাবে এক বছরে এজেন্ট সংখ্যা বেড়েছে ৬৪ হাজার ৫৬১ জন, যা শতকরা হিসাবে ৬ দশমিক ১০ ভাগ।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, মোবাইল ব্যাংকিং সেবার পরিধি আরো বাড়ানোর জন্য ব্যাংকের বাইরে ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে আগ্রহ প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে। সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে মোবাইলের মাধ্যমে লেনদেন বাড়ানোর জন্য নতুন করে আওতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর আলোকে ব্যাংকের মতো ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সরকারি অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সহযোগী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেও লেনদেন করা যাবে। এজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা মেনে লাইসেন্স নিতে হবে। লাইসেন্স পাওয়ার শর্ত হলো, কোনো প্রতিষ্ঠানের সহযোগী প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স পেতে হলে ৫১ ভাগের মালিকানায় থাকবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বাকি ৪৯ শতাংশ মালিকানায় থাকবে সহযোগী প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তারা।
এ ছাড়া অন্যান্য নির্দেশনা অপরিবর্তিত থাকবে। সর্বশেষ গত মে মাসে গ্রাহকের অর্থ সুরক্ষা করতে একটি নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল, গ্রাহকদের অর্থের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এখন থেকে মোবাইল ব্যাংকিং, পস মেশিন, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অর্থ লেনদেনের নিষ্পত্তি করার এজেন্ট কেউই গ্রাহকদের হিসাবে জমা থাকা অর্থ কোনোক্রমেই ব্যবহার করতে পারবে না। দিন শেষে হিসাবে জমার পুরো অর্থই কোন বাণিজ্যিক ব্যাংকে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের হিসাবে জমা করতে হবে। এ নির্দেশনা অমান্য করলে জরিমানা, কারণ দর্শানোর নোটিশ, লাইসেন্স স্থগিত বা বাতিল করার মতো শাস্তি ভোগ করতে হবে লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, গত দুই বছর যাবৎ বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে অর্থনীতি গতি শ্লথ হয়ে পড়েছে। অর্থনৈতিক লেনদেন কমে গেছে। বিশেষ করে ব্যাংকিং চ্যানেলে লেনদেনের ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে এক শ্রেণীর মানুষ ব্যাংকে সশরীরে আর ব্যাংকে যাচ্ছেন না। তারা ঘরে বসেই মোবাইল ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করছেন। এতে বেড়ে যাচ্ছে এর কলেবর। সাধারণ গ্রাহকের অর্থের সুরক্ষা দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ওই সময় নতুন নীতিমালাটির নাম দেয়া হয় গাইডলাইন্স ফর ট্রাস্ট ফান্ড ম্যানেজমেন্ট ই পেমেন্ট অ্যান্ড সেটেলমেন্ট সার্ভিসেস। এর আওতায় গ্রাহকদের জমা পুরোটাই ট্রাস্ট ফান্ড হিসাবে জমা রাখতে হবে। তবে এসব অর্থ প্রতিষ্ঠানগুলো সরকারি খাতের বিভিন্ন ট্রেজারি বিল ও বন্ড এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের বিল বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারবে। এ থেকে যেসব অর্থ আয় হবে এগুলো প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের প্রয়োজনে খরচ করতে পারবে। তবে কোনোক্রমেই গ্রাহকের হিসাবে জমা অর্থ নিজেদের প্রয়োজনে খরচ করতে পারবে না।