ডেস্ক নিউজ
তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারার ব্যস্ততম সড়ক বঙ্গবন্ধু বুলবার্ড। আসা-যাওয়ার পথে রাস্তাটির এই মোড়ে এসে অনেকেরই আটকে যায় চোখ। বাঙালিরা থমকে দাঁড়ান, অনেকেই বেশ খানিকটা সময় এখানে বসে জিরিয়ে নেন। কারণ বুলবার্ডের এই চার রাস্তার মোড়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আবক্ষ ভাস্কর।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আতিকুল ইসলামের প্রচেষ্টায় এই আবক্ষ ভাস্কর্য নির্মাণ করা হয়। এর পরেই বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ ভাস্কর্য ও পার্ক নির্মাণের ব্যাপারে উদ্যোগ নেয় আঙ্কারা সিটি করপোরেশন। ২০২০ সালের শেষের দিকে শুরু হয় এর নির্মাণকাজ। এর নকশা তৈরি করেন তুরস্কের বিখ্যাত ভাস্কর ‘মিস্টার মের্ট কিলিন’। গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর আবক্ষ ভাস্কর্যটি উদ্বোধন করা হয়। বুলবার্ডে জাতির জনকের এই আবক্ষটি উদ্বোধন করে আঙ্কারা সিটি করপোরেশন। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন, ডিএনসিসির মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম, আঙ্কারার মেয়র মনসুর ইয়াভাসসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ওই সময় উপস্থিত ছিলেন।
তুরস্কে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র জানিয়েছে, শহরের বঙ্গবন্ধু বুলবার্ডের এই চত্বরটি এখন বঙ্গবন্ধু চত্বর হিসেবেই এখন পরিচিত। অবসর সময়ে অনেকেই ঘুরতে আসেন এখানে। অনেকটা বিনোদন কেন্দ্রে রূপ নিয়েছে বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ ভাস্কর্য সংলগ্ন এলাকাটি। দৃষ্টিনন্দন স্থানটি
প্রবাসী বাঙালিসহ স্থানীয়দের মুগ্ধ করেছে।
তুরস্কে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মসয়ূদ মান্নান ভোরের কাগজকে বলেন, তুরস্কে বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ স্থাপন করতে পেরে আমরা আনন্দিত। এর মাধ্যমে তিনি শুধু বাংলাদেশ নয়, সারা বিশ্বের অসংবাদিত নেতায় পরিণত হয়েছেন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তুরস্কের বিভিন্ন স্থানে কিছু ভাস্কর্য ও একটি জাদুঘর নির্মাণের পরিকল্পনা চলছে বলেও জানান তিনি।
গতকাল শুক্রবার স্থানীয় সময় দুপুর ১২টায় সরজমিন দেখা গেছে, বুলবার্ডের মোড়ে পাথরের স্ট্যাকচারের ওপর পোক্ত করে কালো আকৃতির পিতলের তৈরি বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ ভাস্কর্যটি বসানো হয়েছে। কাঠামোর নিচের অংশের পুরো দেয়ালজুড়ে তুর্কি ভাষায় বঙ্গবন্ধুর পরিচিতি লেখা সবুজ রঙের মোটা অক্ষরে। নিচের ভেজা মাটিতে বিভিন্ন প্রজাতির ফুলের গাছ। চারপাশে দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে বসার জায়গা।
প্রবাসী আবু জাফর স্ত্রী আর দুই সন্তানকে নিয়ে এসেছেন বুলবার্ডের মোড়ে। দূর দেশে জাতির জনকের আবক্ষ নিয়ে তার অনুভূতি জানতে চাইলে বলেন, সুযোগ পেলে এখানে আসি। সেই কবে দেশে গিয়েছিলাম মনে নেই। তবে এখানে এসে বঙ্গবন্ধুর মুখের দিকে তাকালেই মনে হয় দেশের মাটিতেই আছি। বাচ্চাদের এনে দেশের মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে ধারণা দেই। মাঝেমধ্যে পরিচিতজনদের নিয়ে আসি। বঙ্গবন্ধুকে দেখেই দেশের জন্য তিনি যে ত্যাগ স্বীকার করে গেছেন সেটা নিয়ে গল্প করি। বলতে বলতে বঙ্গবন্ধু মুখটার দিকে তাকিয়ে দুচোখ ভিজে গেল জাফরের। এর মধ্যেই কয়েকজন তুর্কি নাগরিক হাতের ইশারায় বঙ্গবন্ধু বলতে বলতে সামনের রাস্তা ধরে পাশ কেটে চলে গেলেন।
এদিকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট বঙ্গবন্ধু বুলবার্ড (সড়ক)। সড়কটি ১৯৯৭ সাল থেকেই বঙ্গবন্ধুর নামে রয়েছে। সড়কটি অনেক পুরনো হলেও দীর্ঘদিন ধরে এটি অবহেলিত ছিল। বর্তমানের বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ ভাস্কর্যটি নির্মাণের পর সড়কের বিভিন্ন স্থানে নাম উল্লেখ করে সাইনবোর্ড স্থাপন করে দেয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুধু বাংলাদেশের নন, তিনি বিশ্বের নির্যাতিত ও নিপীড়িত মানুষের অবিসংবাদিত নেতা। তার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতেই আঙ্কারা সিটি করপোরেশন এ উদ্যোগ নেয়। আমরা সব দেশে জাতির জনকের চিহ্ন পৌঁছে দিতে কাজ করছি। আঙ্কারার মতো শহরে জাতির জনকের আবক্ষ নির্মাণ করতে পেরে আমরা গর্বিত। পর্যায়ক্রমে পৃথিবীর সব শহরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি স্থাপনের জন্য আমি কাজ করব।
তিনি আরো বলেন, আমরাও ডিএনসিসি এলাকায় তুরস্কের জাতির জনক কামাল আতাতুর্কের নামে একটি পার্ক ও আবক্ষ ভাস্কর্য নির্মাণ করব। যদিও ডিএনসিসিতে কামাল আতাতুর্কের নামে একটি সড়ক রয়েছে। এই উদ্যোগ দেশের বাইরে জাতি হিসেবে আমাদের বাংলাদেশের মান উজ্জ্বল করেছে।
তিনি জানান, ঢাকার বনানী এলাকায় কামাল আতাতুর্ক সরণি রয়েছে। সড়কটি সংলগ্ন পার্কও কামাল আতাতুর্কের নামে নামকরণের সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমরা তুরস্ককে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তারা যখন সময় দেবে তখন সেটি উদ্বোধন করা হবে।
সূত্র জানায়, তুরস্কের জাতির জনক কামাল আতাতুর্কের সঙ্গে বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। দুই নেতার এই সম্পর্ক আরো গভীর করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কামাল আতাতুর্কের নামানুসারে তার এক ছেলের নাম রাখেন শেখ কামাল। দুই নেতার এই সম্পর্ক স্মরণীয় করে রাখতে ডিএনসিসি ও আঙ্কারা সিটি করপোরেশন উদ্যোগী।