ডেস্ক নিউজ
নতুন বছরের শুরুতেই জনপ্রশাসনে তিন স্তরে (অতিরিক্ত সচিব, যুগ্মসচিব ও উপসচিব) পদোন্নতির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যুগ্মসচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পদে ৩০০, উপসচিব থেকে যুগ্মসচিব পদে ৩৫০ ও সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে উপসচিব পদে ৩৫০ করে মোট ১ হাজার কর্মকর্তা পদোন্নতিযোগ্য হয়েছেন। এই ১ হাজার কর্মকর্তার চাকরি জীবনের যাবতীয় তথ্য যাচাই-বাছাই ও বিশ্লেষণ করছে পদোন্নতির সুপারিশকারী কর্তৃপক্ষ সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি)। ১৪ ফেব্রুয়ারি অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির জন্য মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সভাপতিত্বে এসএসবির প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় আজ (বুধবার) আবারও বৈঠকে বসবে এসএসবি। বৈঠকে পদোন্নতিযোগ্য কর্মকর্তাদের কর্মজীবনের সব নথি পর্যালোচনা করা হবে। বিশেষ করে প্রয়োজনীয় নম্বর, চাকরি জীবনের শৃঙ্খলা, দুর্নীতি বিষয়সহ সামগ্রিক বিষয় পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের গতকালের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমান প্রশাসনে অতিরিক্ত সচিবের কমবেশি ২০০ পদে কর্মকর্তা রয়েছেন ৪১৯ জন। যুগ্মসচিবের ৪০০টি পদে রয়েছেন ৭৬১ জন কর্মকর্তা। সুপারনিউমারারী পদসহ উপসচিবের অনুমোদিত পদসংখ্যা ১৪২০টি। তবে কর্মরত আছেন ১৭৩৬ জন। অর্থাৎ প্রতিটি স্তরেই পদের দ্বিগুণ কর্মকর্তা রয়েছে। তারপরও যথারীতি এ বছরও তিন স্তরের পদোন্নতি দিতে বৈঠক শুরু করেছে এসএসবি। প্রথমে যুগ্মসচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব, তারপর উপসচিব থেকে যুগ্মসচিব এবং সিনিয়র সহকারী সচিব থেকে উপসচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্টরা আভাস দিয়েছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, যুগ্মসচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতিতে নিয়মিত হিসেবে ১৫তম ব্যাচকে বিবেচনা করা হচ্ছে। প্রশাসন ক্যাডারের পাশাপাশি অন্যান্য ক্যাডার থেকেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মকর্তাকে এ পদে পদোন্নতি দেওয়া হবে। এ ছাড়া যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও আগে পদোন্নতি না পাওয়া বিভিন্ন ব্যাচের কিছু কর্মকর্তাকেও পদোন্নতির জন্য বিবেচনা করা হতে পারে। ফলে এবারের অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির জন্য যুগ্মসচিব পদমর্যাদার প্রায় ৩০০ জন কর্মকর্তাকে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নিয়মিত ১৫তম ব্যাচের রয়েছেন ৯৮ জন (ইকোনমিক ক্যাডারসহ) কর্মকর্তা। বিভিন্ন সময়ে পদোন্নতি না পাওয়া (লেফট আউট) ১৪৭ জন এবং অন্যান্য ক্যাডারের রয়েছেন ৫০ জন। ১৫তম ব্যাচের কর্মকর্তাদের নিয়োগ প্রক্রিয়া ১৯৯৩ সালে শুরু হয়। ২০১৫ সালে যুগ্মসচিব হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করলেও তাদের পদোন্নতি হয়েছে ২০১৮ সালে। যুগ্মসচিব হিসেবে দুই বছর চাকরি করলেই অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জিত হয়। সে হিসাবে এ ব্যাচের অতিরিক্ত সচিব হওয়ার যোগ্যতা হয়েছে ২০২০ সালে। প্রশাসনে সবচেয়ে বেশি সময় অর্থাৎ দীর্ঘ চার বছর যুগ্মসচিব থাকার পর এ ব্যাচটি পদোন্নতি পেতে যাচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ১৫তম ব্যাচের একাধিক কর্মকর্তা জানান, তাদের অন্তত তিন-চারজন কর্মকর্তা এ বছরের শেষের দিকে অবসরে যাবেন। তাই দেরিতে পদোন্নতি হওয়ায় তারা সচিব হওয়ার দৌড়ে তো থাকতেই পারবেন না, যারা সেই দৌড়ে থাকবেন তারাও সচিব হয়ে বেশি দিন থাকতে পারবেন না। তাই তারা অধীর আগ্রহে এসএসবির দিকে তাকিয়ে আছেন।
ইতোমধ্যে যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতির প্রক্রিয়া শুরু করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এ পদে গত বছর ২০তম ব্যাচের আংশিক পদোন্নতি দেওয়া হয়। অবশিষ্ট কমবেশি ৭৫ কর্মকর্তার পদোন্নতির জন্য তথ্য চেয়ে পাঠিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এপিডি শাখা। এবারও নিয়মিত ব্যাচ ধরা হয়েছে ২০তম ব্যাচকেই। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রশিক্ষণ, সিআর, শৃঙ্খলা এবং পিএসিসি শাখায় চিঠি পাঠানো হয়। এবারের পদোন্নতিতে প্রশাসন ক্যাডারের ২০তম ব্যাচ পর্যন্ত (লেফট আউটসহ) ১৮৭ এবং অন্যান্য ক্যাডারের ১৭৮ জনকে বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। তবে ১৫তম ব্যাচের পদোন্নতির আগে ২০তম ব্যাচসহ যুগ্মসচিবদের পদোন্নতি হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। উপসচিব পদে পদোন্নতির জন্য আগ্রহী বা যোগ্য বিভিন্ন ক্যাডারের ২৮তম ব্যাচ পর্যন্ত কর্মকর্তাদের তালিকা চেয়ে ক্যাডার নিয়ন্ত্রণকারী মন্ত্রণালয়গুলোকে চিঠি পাঠিয়েছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। উপসচিব পদে পদোন্নতির জন্য নিয়মিত ব্যাচ ধরা হয়েছে ২৮ ব্যাচের প্রশাসন ক্যাডারের ১৬৩ জন। এ ছাড়া সদ্য অন্তর্ভুক্ত হওয়া ইকোনমিক ক্যাডারের কর্মকর্তারাও বিবেচনায় আসবেন। আগের বঞ্চিতরাসহ সব মিলে সাড়ে তিন শ’র বেশি কর্মকর্তার আমলনামা যাচাই-বাছাই করছে সংশ্লিষ্টরা।