ডেস্ক নিউজ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সেবার গুণগত মান উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করে অন্যের ওপর নির্ভরতা কমানোর এবং নতুন প্রযুক্তি শিক্ষা গ্রহণে মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী গতকাল বুধবার সকালে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বলাকা ভবনে মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
kalerkanthoপ্রধানমন্ত্রী বলেন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস প্রথমবারের মতো সম্পূর্ণ নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় এবং দক্ষ জনবল দ্বারা অত্যাধুনিক বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর উড়োজাহাজের ল্যান্ডিং গিয়ার রিপ্লেসমেন্ট এবং বোয়িং ৭৮৭-এর সি-চেক কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছে।
এতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হয়েছে।
অতীতে দুরবস্থা থাকলেও বর্তমানে একটি দক্ষ এবং অত্যন্ত কার্যকর গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং ইউনিট গড়ে তোলা হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত সততা ও দক্ষতার সঙ্গে যেন গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং করতে পারে, সেদিকে নজর দেওয়ার জন্য বিমান কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেন। এ জন্য প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় লোকবল যেমন দরকার, তেমনি যত দ্রুত সম্ভব এ ইউনিট তৈরি করা দরকার বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমাদের কাস্টমস সিস্টেমটাও সম্পূর্ণ ডিজিটাইজড করতে হবে। কারণ মানুষ যখন বিদেশ থেকে আসে, হয়তো কিছু পণ্য ক্রয় করে নিয়ে আসতে চায়। ’ তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রায় এক কোটির মতো প্রবাসী আছেন। তাঁরা বিভিন্ন সময়ে ছুটিতে আসেন। তাঁরা এসে যেন বিমানবন্দরে হয়রানির শিকার না হন। তাঁদের যথাযথ সেবা নিশ্চিত করতে হবে। ’
বিমানের আধুনিকায়নে তাঁর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আগামী মার্চ ২০২২-এর প্রথম সপ্তাহ থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস বিশ্বনন্দিত এয়ারলাইনস সেবা প্রযুক্তি তথা পিএসএসের (প্যাসেঞ্জার সার্ভিস সিস্টেম) মাধ্যমে অনলাইন টিকেটিং, রিজারভেশন, বিমানবন্দরে পৌঁছার আগে চেক-ইনসহ অত্যাধুনিক সেবা গ্রহণের পথ উন্মোচন করতে যাচ্ছে। এতে আমাদের সুনাম বাড়বে। ’
বাংলাদেশ বিমানের রুট আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল রুটের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হওয়ায় আমাদের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগ রক্ষা এবং যোগাযোগ সম্প্রসারণের অনেক সুযোগ রয়েছে উল্লেখ করে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ফ্লাইট পরিচালনা বৃদ্ধির বিষয়েও গুরুত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রতিবেশী দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ আরো বাড়ানো দরকার। ঢাকা-মালদ্বীপ বেসরকারিভাবে ফ্লাইট চালু হয়েছে। বিমানও যেন ফ্লাইট চালু করতে পারে সে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ’ সব জায়গার সঙ্গে যোগাযোগব্যবস্থা চালু এবং কার্গো পরিবহনের বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে বিমানের নিজস্ব কার্গো বোয়িং রাখার প্রয়োজনীয়তারও উল্লেখ করেন তিনি ।
সারা দেশে ১০০ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলে সেখানে বিনিয়োগের জন্য বিদেশিদের আহ্বান জানানো হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যোগাযোগব্যবস্থা যদি সুন্দর হয়, দ্রুত হয়, বিনিয়োগকারীরা এখানে আসবে, বিনিয়োগ করবে। সেদিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারের সময়ে দেশের বিমান পরিবহন খাতে একঝাঁক অত্যাধুনিক বিমান সংযোজন এবং অতীতের সরকারগুলোর সময়কার বিমানের দুরবস্থার কথাও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে বিমানকে পরিণত করে দুর্নীতি আর লুটপাটের স্বর্গরাজ্যে। চরম লোকসান আর অব্যবস্থাপনায় বিমান মুখ থুবড়ে পড়ে। তিনি বলেন, ‘তখন বিমানে উইন্ডো সিটে বসলে ওপর দিয়ে এসির পানি পড়ত, ছিল না কোনো বিনোদনের ব্যবস্থা। ’ প্রধানমন্ত্রী সে সময়ের বিমানকে ‘জরাজীর্ণ ঝরঝরে বিমান’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মোকাম্মেল হোসেনও বত্তৃদ্ধতা করেন। বিমান পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান সাজ্জাদুল হাসান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বাংলাদেশ বিমানের অতীত ও বর্তমান কর্মকাণ্ড নিয়ে একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি পরিবেশিত হয়। সূত্র : বাসস