নিজস্ব প্রতিবেদক:
দক্ষিণ সুদানে বাংলাদেশিদের জন্য রয়েছে ব্যবসা-বাণিজ্য ও কৃষি খাতে বিনিয়োগের দারুণ সুযোগ। সেখানে বসবাসরত বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা জানান, সহায়ক কর নীতিমালা এবং পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে রপ্তানির সম্ভাবনার কারণে সেখানে ব্যবসা ও বিনিয়োগ বড় সুযোগ হতে পারে। বর্তমানে দেশটিতে আইটি খাতের ব্যবসার অর্ধেকের বেশি অংশ বাংলাদেশি কয়েকজন ব্যবসায়ীর নিয়ন্ত্রণে। বাংলাদেশি আইটি প্রতিষ্ঠানের বিলবোর্ড রয়েছে সেখানকার রাজধানী জুবার বিভিন্ন সড়কে।
সম্প্রতি দক্ষিণ সুদান সফরকালে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা হয় বাংলাদেশ প্রতিদিনের। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল এস এম শফিউদ্দিন আহমেদ দক্ষিণ সুদানে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের বাংলাদেশের কন্টিনজেন্টগুলো পরিদর্শন করেন। এসময় স্থানীয় একটি হোটেলে তাঁর সম্মানে ব্যবসায়ীদের দেওয়া এক মধ্যাহ্নভোজে তারা দেশটিতে ব্যবসা- বাণিজ্য বিকাশে বাংলাদেশ সরকার ও সেনাবাহিনীর সহায়তা কামনা করেন। দক্ষিণ সুদানে শান্তিরক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন মানবিক কর্মকাে র জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের দারুণ সুনাম রয়েছে। এ অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে ব্যবসা ও বিনিয়োগ সহায়ক পরিবেশ সৃষ্টির জন্য তারা অনুরোধ জানান। ব্যবসায়ীরা জানান, তারা সেখানে বাংলাদেশের একটি দূতাবাস চান। সেই দূতাবাস হওয়ার আগ পর্যন্ত সেখানে কনস্যুলেট অফিস চান। তারা মনে করেন, দক্ষিণ সুদানের কেউ একজন যদি অনারারি কনস্যুলার হয়ে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের স্বার্থে কথা বলেন তাহলে এটি অনেক কার্যকরী ও ফলদায়ক বিষয় হবে। বর্তমানে ইথিওপিয়ার আদ্দিস আবাবা বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে দক্ষিণ সুদানসহ আফ্রিকার কয়েকটি দেশের ভিসা প্রক্রিয়া নিষ্পত্তি করা হয়। বাংলাদেশের চেয়ে পাঁচগুণ বড় আয়তনের দেশটিতে জনসংখ্যা মাত্র সোয়া কোটি। কিন্তু এ বিশাল ভূখ ও তাদের জনগোষ্ঠীর খাবার জোগাতে পারে না। আসলে চাষাবাদের তেমন প্রচেষ্টাও নেই দেশটিতে। বাংলাদেশ সেদেশের কৃষি খাতে ভালো করতে পারে বলে বিশ্বাস বাংলাদেশি স্থানীয় ব্যবসায়ীদের। গত ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে দেশটির দুইজন মন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করে গেছেন। সফরকালে তারা বাংলাদেশ সরকার ও ব্যবসায়ীদের সেখানে কৃষিভিত্তিক শিল্প খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানান। খুব শিগগিরই কৃষি মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল দক্ষিণ সুদানের বিনিয়োগ সম্ভাবনা দেখতে দেশটি সফরের কথা রয়েছে। দক্ষিণ সুদানে আইটি খাতে বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা অনেক ভালো করছেন। তাদের মধ্যে জুবা নেটওয়ার্কের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সোহেল মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, বিজেক্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ শাহীন, ফার্স্টনেটের অপারেশন ম্যানেজার এ এস এম সাজ্জাদুল আমিনসহ কয়েকজন আইটি ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা হয় বাংলাদেশ প্রতিদিনের। তারা জানান, সরকারি উদ্যোগ যোগ হলে দক্ষিণ সুদানে ভালো ব্যবসা করা সম্ভব। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোকে টার্গেট করে এখানে বিভিন্ন খাতের শিল্প কারখানা গড়ে তুলতে পারে বাংলাদেশ।
ফার্স্টনেটের এ এস এম সাজ্জাদুল আমিন বলেন, এখানে আসলে কিছুই উৎপাদন হয় না। পুরোটাই আমদানি করতে হয়। এখানে কৃষি খাতে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। মৎস্য ও পশুখাদ্যের প্লান্ট হতে পারে। চাষাবাদ করে লাভবান হওয়ারও প্রচুর সুযোগ রয়েছে। এখানে আমদানি পণ্য আসে পার্শ্ববর্তী কেনিয়ার বন্দর দিয়ে, উগান্ডা হয়ে। এতে খরচ অনেক বেড়ে যায়।
জুবা নেটওয়ার্কের উদ্যোক্তা সোহেল আবদুল্লাহ বলেন, আমরা এখানে ব্যবসা করতে এসে কিছু সমস্যা ফেস করি। আমরা সরাসরি সরকারের সঙ্গে কথা বলতে পারি না। নিজেরা অনেক কিছু সমাধান করতে পারি না। এখানে যদি একটি দূতাবাস স্থাপন করা হয় আমরা তার সুফল পাব। প্রাথমিকভাবে অন্তত একটি কনস্যুলার অফিসের অনুমোদন দেওয়া যায়। এদেশের কেউ যদি আমাদের স্বার্থের কথা বলে সেটা অনেক বেশি কার্যকর হয়।
দক্ষিণ সুদানে পিরোজপুরের আবুল হাসান আছেন গত সাত বছর ধরে। নিজের একটি দোকান চালান ইউএন গেটের সামনে। বাংলাদেশের প্রাণ ও সজীব করপোরেশনের বিভিন্ন পণ্য পাওয়া যায় তার দোকানে। তিনি বলেন, ২০১৩ সালে প্রথম আসি এ দেশে। প্রথমে এসেছিলাম কাজের জন্য। পরে এসে ব্যবসা শুরু করি। এখানে ব্যবসার ভালো সুযোগ রয়েছে। প্রায় ৩৫০ বেসামরিক ব্যক্তি ব্যবসা করে ভালো আছেন। তিনি জানান, তার খালাতো ভাই আছেন এখানে। তার মাধ্যমেই ভিসা নিয়ে আসেন। ট্যাক্সের কোনো ঝামেলা নেই। মাল আমদানি করি, বিক্রি করি। বাড়তি ট্যাক্স কিংবা চাঁদাবাজির কোনো ঝামেলা নেই। সম্প্রতি কানাডার ভিসা পেয়েছেন। বললেন, ভাবছি, কানাডা গিয়ে কী করব? এখানে মাসে ২-৩ লাখ টাকা সহজেই আয় করি। কানাডা গিয়ে এই পরিমাণ টাকা আয়ের সুযোগ পাওয়া কঠিন হয়ে যাবে। তাই যাব না ভাবছি। তিনি বলেন, এখানে এসে কেউ যদি মাছের ব্যবসাও করেন তার দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা আয় করা কঠিন কিছু নয়।
স্থলবেষ্টিত (ল্যান্ডলক) দক্ষিণ সুদানের চার পাশে রয়েছে সুদান, সেন্ট্রাল আফ্রিকা রিপাবলিক, গণতান্ত্রিক কঙ্গো, উগান্ডা, কেনিয়া এবং ইথিওপিয়া। এর মধ্যে সেন্ট্রাল আফ্রিকা রিপাবলিক, গণতান্ত্রিক কঙ্গো এবং উগান্ডায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে রয়েছে আমাদের শান্তিরক্ষীরা। ইথিওপিয়ায় রয়েছে বাংলাদেশের দূতাবাস, যেখান থেকে দক্ষিণ সুদানসহ আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের ভিসা কার্যক্রম তদারকি করা হয়। প্রবাসী ব্যবসায়ীরা বলেছেন, পার্শ্ববর্তী দেশগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করে দক্ষিণ সুদানে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর এখনই সময়।