ডেস্ক নিউজ
প্রায় পাঁচ বছর আগে ঢাকার আশপাশের আটটি ইউনিয়নকে উত্তর সিটি করপোরেশনের সাথে যুক্ত করা হয়। যেগুলোকে ১৮টি ওয়ার্ডে রূপান্তর করা হয়েছে। এত দিন এসব এলাকা রাজধানীর সাথে যুক্ত থাকলেও উন্নয়নের কোনো ছিটাফোঁটাও লাগেনি। এমনকি প্রায় দুই বছর আগে ২০২০ সালের ১৪ জুলাই চার হাজার ২৫ কোটি ৬২ লাখ টাকার একটি প্রকল্প একনেকে পাস হলেও অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে সেই অর্থ ছাড় না হওয়ায় ওই সব এলাকায় এতদিনেও উন্নয়ন শুরু করতে পারেনি ডিএনসিসি। অবশেষে গ্রামীণ এসব এলাকায় উন্নয়নের ছোঁয়া লাগতে যাচ্ছে। গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন করার পর শুরু হতে যাচ্ছে বিশাল কর্মযজ্ঞ। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এটি বাস্তবায়িত হলে নতুন ১৮টি ওয়ার্ড হবে রাজধানীর অন্যতম আধুনিক এলাকা। সেখানে বসবাসরতদের জীবনমানের অভূতপূর্ব উন্নতি হবে।
সাবেক বাড্ডা, ভাটারা, সাঁতারকুল, বেরাইদ, ডুমনি, উত্তরখান, দক্ষিণখান ও হরিরামপুরÑ এ আটটি ইউনিয়নকে ১৮টি ওয়ার্ডে রূপান্তর করে ২০১৭ সালের জুলাই মাসে ঢাকা উত্তর সিটির সাথে যুক্ত করা হয়। কিন্তু গত পাঁচ বছরেও ওই এলাকায় উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নয়ন কাজ করেনি ডিএনসিসি। শুধু একটি ওয়ার্ডে একটি সড়ক এবং একটি ওয়ার্ডে কয়েকটি বাজারের সামনের রাস্তা আরসিসি ঢালাইয়ের কাজ হয়েছে। কোন রাস্তা মেরামত করা হয়নি, হয়নি কোনো নতুন ড্রেন। দীর্ঘ দিন কোনো উন্নয়ন কাজ না হওয়ায় ভাঙাচোরা রাস্তা, বৃষ্টিতে হাঁটুপানি হয়ে এলাকা ডুবে যাওয়া, ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা, মশার যন্ত্রণাসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত এ ওয়ার্ডগুলো। এর মধ্যে দক্ষিণখানে ওয়াসা নতুন পাইপ বসানোর ফলে মূল সড়ক, ওলিগলির সব সড়ক নষ্ট হয়ে আছে। এর মধ্যে দুইবার মেয়র ও কাউন্সিলর নির্বাচন অনুষ্ঠিতও হয়েছে। কিন্তু এলাকাবাসীর ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয়নি। ফলে সীমাহীন দুর্ভোগ-ভোগান্তির মধ্যে জীবনযাপন করছেন ওই এলাকার বাসিন্দারা। তবে দীর্ঘদিনের জটিলতা কাটিয়ে অবশেষে শুরু হতে যাচ্ছে নতুন ১৮টি ওয়ার্ডের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড। দক্ষিণখানের কসাইবাজার থেকে উত্তরখানের কাঁচকুড়া বাজার পর্যন্ত রাস্তার উন্নয়ন কাজের মধ্য দিয়ে শুরু হবে ১৮ ওয়ার্ড ঘিরে মেগা প্রজেক্টের কাজ। এ রাস্তাটি ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ ৭২ ফুট প্রশস্তের চার লেনের সড়ক হবে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, ‘ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে নতুনভাবে অন্তর্ভুক্ত ১৮টি ওয়ার্ডের সড়ক অবকাঠামো ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা নির্মাণ ও উন্নয়ন (ফেজ-১) শীর্ষক প্রকল্পটির আওতায় ১৮৩ কিলোমিটার পাকা রাস্তা নির্মাণ ও উন্নয়ন করা হবে। যার মধ্যে প্রায় ৩৩ কিলোমিটার চার লেনের সড়ক নির্মাণ করা হবে। দুই লেনের সড়ক নির্মাণ করা হবে প্রায় ৪১ কিলোমিটার। নির্মাণ হবে ২৩৪ কিলোমিটার স্টর্ম ড্রেন ও ইউটিলিটি। এসব ওয়ার্ডে কোনো সেবা সংস্থার তার দৃশ্যমান থাকবে না। এসব লাইন সংযোগ দেয়া হবে মাটির নিচে ইউটিলিটি ডাক্ট নির্মাণের মাধ্যমে। মোট ৯৭.২৮ কিলোমিটার ইউটিলিটি ডাক্ট নির্মাণ করা হবে। ওই সব এলাকার দীর্ঘদিনের অন্ধকার দূর করতে স্থাপন করা হবে ১২ হাজার ২১৮টি স্মার্ট সড়কবাতি। সিটি করপোরেশনের কার্যালয়ে বসে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে এসব বাতি। জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য ২৯ কিলোমিটার খাল উন্নয়ন করা হবে। কংক্রিটে বাঁধাই খালের দুই পাড়ে থাকবে ৫৮.৫৯ কিলোমিটার দৃষ্টিনন্দন হাঁটার রাস্তা ও বাইসাইকেল লেন। এ ছাড়া থাকবে সবুজায়নের জন্য আলাদা জায়গা।
জানা যায়, মোট ৮৬টি প্যাকেজের আওতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকবে উত্তর সিটি করপোরেশন ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২৪ ইঞ্জিনিয়ার কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড। বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে (জিওবি) বাস্তবায়িত তিন বছরমেয়াদি প্রকল্পের কার্যকাল ধরা হয়েছে ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। যার এক বছর ইতোমধ্যেই পার হয়ে গেছে।
ডিএনসিসির মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, ডিএনসিসির নতুন অঞ্চলের উন্নয়নে ২৬ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে সরকার চার হাজার ২৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। রাজউকের বিশদ উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং সেবা সংস্থাগুলোর ১০০ বছরের মাস্টারপ্ল্যানের সাথে সমন্বয় করে প্রকল্পটির ডিজাইন করা হয়েছে। ফলে অন্য প্রকল্প থেকে এটি ভিন্ন ধাঁচের। উন্নয়ন প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে সেখানে বসবাসরতদের জীবনমানের অভূতপূর্ব উন্নতি হবে।