নিউজ ডেস্কঃ
সোনার ফসলের দুর্গে পোকার আক্রমণে স্বপ্ন মলিন হতে বসেছে কৃষক সোরহাবের। ফোন রিসিভ করে সমস্যা শোনার পর যথাযথ সমাধানও দিলেন দায়িত্বরত কর্মকর্তা। কিছুটা স্বস্তি নিয়ে ফোন রাখলেন তিনি। দেশের নানা প্রান্ত থেকে প্রতিদিন অসংখ্য কৃষক এবং কৃষি সংশ্লিষ্ট মানুষের ফোন আসে এই কৃষি কলসেন্টারে। মিলছে নানা ধরনের সমস্যার সমাধানও। কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ বিষয়ে সকাল ৭টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বিভিন্ন প্রশ্নের সমাধান দিচ্ছেন কৃষিবিদরা। আর একটি নম্বরে ফোন করে সমাধান পাওয়ায় দিন দিন কলসেন্টারের প্রতি আগ্রহ বেড়েই চলেছে। হাতের মুঠোর কৃষিসেবায় বাড়ছে উৎপাদনও। কমেছে কৃষকদের তথ্যগত হয়রানি।
এই কলসেন্টার এমন একটি মাধ্যম যার দ্বারা যে কোন ধরনের সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান এবং এর ভোক্তাদের মধ্যে মনোযোগ সাধিত হয়। দেশের কৃষকদের মধ্যে কৃষিভিত্তিক সর্বাধুনিক প্রযুক্তি, সেবা এবং তথ্য ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে ২০১২ সালের জুন মাসে ‘কৃষি কলসেন্টার’ এর পরীক্ষামূলক যাত্রা শুরু হয়। কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীনে কৃষি তথ্য সার্ভিস রাজধানীর খামারবাড়ি থেকে এটি পরিচালনা করছে। ২০১৪ সালের জুন মাস থেকে ৫ ডিজিটের একটি শর্ট কোডের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে এ সেন্টারটির কার্যক্রম নতুনভাবে শুরু হয়েছে। কৃষি কলসেন্টারের শর্ট কোড নম্বর ১৬১২৩। যেখানে কৃষি বিষয়ক বিভিন্ন সমস্যার সমাধান পেতে কৃষকদের কাছ থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে পাঁচশর্ত কল আসে। ভবিষ্যতে এটি আরও আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণের চিন্তাও রয়েছে মন্ত্রণালয়ের।
কৃষি কলসেন্টারে কেউ ফোন করলে অটো রেকর্ডের মাধ্যমে স্বাগতম জানিয়ে কোন বিষয়ে তথ্য দরকার সেটি জানতে চাওয়া হয়। কৃষি হলে ১, মৎস্য হলে ২ এবং প্রাণী হলে ৩ চাপতে বলা হয়। সব লাইন একত্রে ব্যস্ত থাকলে কিছুক্ষণ সময় অপেক্ষা করতে বলা হয় বা একটু পর আবার চেষ্টার কথাও বলা হয়। এই অপেক্ষার মাত্রা তুলনামূলকভাবে কমিয়ে আনার কথা বলেছেন কৃষক ও কৃষি সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, ২০১৪ সালে আনুষ্ঠানিক যাত্রার পর থেকে বছর বছর জ্যামিতিক হারে বেড়েছে ফোন কল আসা। সেই সঙ্গে নানা প্রান্তের নানা মানুষ বিভিন্ন প্রশ্ন করে সমাধানের মাধ্যম হিসেবে এটি ব্যবহার করছেন। বর্তমানে কৃষকদের কাছে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে অধিকাংশ মানুষের হাতে নিয়ে যায় মুঠোফোন। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে দেশে মোবাইল গ্রাহকের সংখ্যা ছিল ১৫ কোটি ৬৯ লাখ ৮৯ হাজার।
২০১৮ সালেই যুক্ত হয়েছে নতুন ১ কোটি ২০ লাখ গ্রাহক। দেশের উচ্চবিত্তদের মতো এখন প্রান্তিক পর্যায়ের ক্ষেতে খামারে কাজ করা কৃষকের হাতেও মোবাইল। যার কারণে যে কোন ফসলের তাৎক্ষণিক সমাধান বা কোন করণীয় বিষয়ে ধারণা পেতে কলসেন্টারে ফোন দিচ্ছেন। অনেক সময় জেলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের কাছে না গিয়ে কৃষকরা নিজের জমি থেকে ফসলের সুবিধা অসুবিধা জানতে পারেন মুঠোফোনে। এ কারণেই কলসেন্টারটি কৃষকদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে উঠে দ্রুত। বিভিন্ন ঋতুভিত্তিক সবজি ফল বা অন্যান্য ফসল বিষয়ে পরামর্শ মিলছে। এই কলসেন্টারের কার্যক্রমে সহায়তা করছেন আন্তর্জাতিক এনজিও প্র্যাকটিক্যাল এ্যাকশন, বাংলাদেশ। কলসেন্টারের মধ্যে ৫ হাজার প্রশ্নোত্তর সংবলিত কম্পিউটারভিত্তিক ডাটাবেজ রয়েছে বলেও জানা যায়।
সুবিধাভোগী কৃষকরা বলছেন, ১৬১২৩ নম্বরটি তাদের জীবন মানকে বদলে দিয়েছে। আগে কৃষি সমস্যায় নানাজনের নানা কথা অনুযায়ী ক্ষতিকর ওষুধ প্রয়োগ করায় উপকারের চেয়ে অপকার হতো বেশি। কিন্তু এখন ফসলের ক্ষেতে বসেই ওই নম্বরে কল দিয়ে তাৎক্ষণিক সেবা পাচ্ছেন তারা। তাতে আগের চেয়ে উৎপাদন অনেক বেড়েছে। এছাড়াও কমেছে ব্যয়, সময়ও রক্ষা হচ্ছে।
কলসেন্টারটি স্থাপনে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি অথরিটির দেয়া গাইডলাইন অনুসরণ করা হচ্ছে। কলসেন্টারে দুটি স্ট্যান্ডবাই সার্ভার, ফোনকল পরিচালনার জন্য আইভিআর এবং কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম এ্যান্ড ক্ল্যায়েন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমসহ ১টি অত্যাধুনিক সফটওয়ার রয়েছে। বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ থাকলেও অন্তত ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত কার্যক্রম নিরবচ্ছিন্নভাবে চালাতে বিদ্যুতের ব্যাকআপ রয়েছে। কলসার্ভারটি একসঙ্গে ৩০টি কল রিসিভ করে সেবা দিতে পারে।
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ভারতে কিষান কলসেন্টার গ্রাহক কলসেবা দিচ্ছে। এতে কৃষকরা উপকৃত হচ্ছে। শ্রীলঙ্কা, নেপাল এবং কেনিয়াও সাফল্যজনকভাবে এগিয়ে চলছে কৃষি কলসেন্টারের কার্যক্রম। পার্শ্ববর্তী দেশগুলোর মতো বাংলাদেশেও দিন দিন এর জনপ্রিয়তা বাড়ছে এবং কৃষকরা উপকার পাচ্ছেন বলেও কৃষি সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।