ডেস্ক নিউজ
সারা দেশে শ্রদ্ধা ভালোবাসায় নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০২তম জন্মবার্ষিকী এবং জাতীয় শিশু দিবস উদযাপিত হয়েছে। দিনটি উপলক্ষে ধানমন্ডিতে জাতির পিতার প্রতিকৃতি ও টুঙ্গিপাড়ায় সমাধি সৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন, শিশু সমাবেশ, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, গ্রন্থমেলা, কেক কাটা, স্বেচ্ছায় রক্তদান, বিনামূল্যে চিকিৎসা, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনসহ সরকারি-বেসরকারি নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে গতকাল সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঐতিহাসিক ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত বাসভবন এবং টুঙ্গিপাড়ায় মাজারে নেমেছিল শ্রদ্ধা জানাতে আসা সর্বস্তরের মানুষের ঢল। সারা দেশেই ব্যাপক আনন্দমুখর কর্মসূচিতে সর্বস্তরের মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখ করার মতো। সর্বত্র নানা আয়োজনে মানুষের ঢল নেমেছিল। দিবসটি উপলক্ষে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণের পাশাপাশি রাজধানীসহ সারা দেশে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও আদর্শের ওপর আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বইমেলা, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, বঙ্গবন্ধুর ওপর তৈরি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান এবং মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হয়। প্রতিটি অনুষ্ঠানেই বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত স্বপ্ন ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা বিনির্মাণের দৃপ্ত শপথও উচ্চারিত হয়েছে সবার কণ্ঠে। গতকাল ভোর সাড়ে ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন ও দেশব্যাপী আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন পালনের কর্মসূচি শুরু হয়। সরকারের পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকালে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে রক্ষিত বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর দেশের প্রতিষ্ঠাতার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাতে প্রধানমন্ত্রী সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় বিউগলে করুণ সুর বেজে ওঠে। বাংলাদেশ সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর একটি চৌকশ দল এ সময় গার্ড অব অনার প্রদান করে। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মবার্ষিকীতে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় তাঁর সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের নিয়ে দলের পক্ষ থেকে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর মাজারে আরেকটি পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। মন্ত্রিসভার সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য এবং আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। পরে জাতীয় সংসদের পক্ষ থেকে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীও বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। দেশজুড়ে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন ছাড়াও বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনের কেক কাটা, র্যালি, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল, মোনাজাত, প্রার্থনা, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা, বইমেলা, স্বেচ্ছায় রক্তদান, বিনামূল্যে চিকিৎসা, পুরস্কার বিতরণ, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন, বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ প্রচার করা হয়েছে। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও জেলা শিশু একাডেমির উদ্যোগে দেশব্যাপী সব জেলা ও উপজেলা সদরে শিশু সমাবেশ, শোভাযাত্রা, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারসহ সব গণমাধ্যম বিশেষ অনুষ্ঠানমালা প্রচার করে। তথ্য মন্ত্রণালয়, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্র, চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদফতর এবং গণযোগাযোগ অধিদফতরের আয়োজনে জেলা ও উপজেলা সদরে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও মহান মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক সপ্তাহব্যাপী পুস্তক ও ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হচ্ছে। ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশব্যাপী সব ধর্মীয় উপাসনালয়ে বিশেষ প্রার্থনা সভার আয়োজন করা হয়। বিদেশে বাংলাদেশ দূতাবাসসমূহে দিবসটি যথাযথভাবে উদ্্যাপন করা হয়।
ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে মানুষের ঢল : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল ভোর থেকে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু ভবনে জনতার ঢল নামে। সকাল ৭টার আগেই বঙ্গবন্ধু ভবনের আশপাশের এলাকা কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণের মাধ্যমে তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাতে ভোর সাড়ে ৬টা থেকে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন এবং সর্বস্তরের মানুষ ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে জমায়েত হতে থাকে। সকাল সাড়ে ৭টার দিকে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে দলের পক্ষে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে বেগম মতিয়া চৌধুরী, ড. আবদুর রাজ্জাক, শাজাহান খান, মাহবুব-উল আলম হানিফ, ড. হাছান মাহমুদ, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, আহমদ হোসেন, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, অ্যাডভোকেট মৃণাল কান্তি দাস, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, হাবিবুর রহমান সিরাজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, বঙ্গবন্ধুকে ছাড়া বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে কল্পনাও করা যায় না। বঙ্গবন্ধুকে স্বীকার না করা বাংলাদেশকেই অস্বীকার করার নামান্তর। তিনি বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বেই পাঁচ হাজার বছরের বাঙালি জাতির ইতিহাসে প্রথম বাঙালি জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধুকে ছাড়া বাংলাদেশের স্বাধীনতাকে কল্পনাও করা যায় না। জন্মদিন উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণের মাধ্যমে তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানায় অজস্র সংগঠন ও কৃতজ্ঞ বাঙালি জাতি। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ, আওয়ামী যুবলীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, বাংলাদেশ কৃষক লীগ, তাঁতী লীগ, মৎস্যজীবী লীগ, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে। এ ছাড়া জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জাসদ, বাংলাদেশ সংসদ সচিবালয়, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট, মুক্তিযোদ্ধা জনতা লীগ, মুক্তিযোদ্ধা ফাউন্ডেশন, বঙ্গবন্ধু আইন পরিষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ, ছাত্রলীগ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, মহিলা শ্রমিক লীগ, যুবলীগ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগসহ বিভিন্ন সংগঠন এবং সর্বস্তরের মানুষ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। জাতির পিতার জন্মদিনে তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে কোরআনখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিলের আয়োজন করে। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে বিশেষ প্রার্থনা সভার আয়োজন করা হয়।
বঙ্গবন্ধুর প্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শ্রদ্ধা : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০২তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস-২০২২ উদ্যাপন করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। দিবসের কর্মসূচি অনুযায়ী গতকাল রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং বঙ্গবন্ধু স্মরণে স্থাপিত অস্থায়ী বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পশ্চিম) শাব্বির আহমেদ চৌধুরী। এ সময় সচিব (পূর্ব) মাশফি বিনতে শামস, ফরেন সার্ভিস একাডেমির রেক্টর আসাদ আলম সিয়াম, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ফরেন সার্ভিস একাডেমির কর্মকর্তা ও প্রশিক্ষণার্থী কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বঙ্গবন্ধুর ১০২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় আয়োজিত ‘টুঙ্গিপাড়া হৃদয়ে পিতৃভূমি’ প্রতিপাদ্যের অনুষ্ঠানে যোগ দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন এমপি, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এমপি ও পররাষ্ট্র সচিব (সিনিয়র সচিব) মাসুদ বিন মোমেন। বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উদ্যাপনের অংশ হিসেবে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কল্যাণমূলক সংগঠন ফরেন অফিস স্পাউসেস অ্যাসোসিয়েশন (ফোসা)-এর প্রতিনিধিরা বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ‘প্রয়াস’ আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দেন। বঙ্গবন্ধুর ১০২তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন কলকাতায় বাংলাদেশ উপহাইকমিশনের : পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নগরোন্নয়ন ও পৌর বিষয়ক, পরিবহন এবং আবাসন দফতরের মন্ত্রী এবং কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, আমার বাবা ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ভক্ত। বাবার কাছে শুনতে শুনতে আমি ছোটবেলা থেকেই বঙ্গবন্ধুর অনুরাগী। বঙ্গবন্ধুর শেখানো অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির চর্চা আমরা করে চলেছি। গতকাল কলকাতায় বাংলাদেশ উপহাইকমিশনের আয়োজনে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০২তম জন্মবার্ষিকী এবং জাতীয় শিশু দিবস ২০২২ উপলক্ষে এ সভার আয়োজন করা হয়। দিনের কর্মসূচি অনুযায়ী গতকাল সকালে জাতীয় পতাকা উত্তোলন এবং ‘মুজিব চিরঞ্জীব’ মঞ্চে বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ ভাস্কর্যে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হয়। কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশের উপহাইকমিশনার তৌফিক হাসানের নেতৃত্বে উপহাইকমিশনের রাজনৈতিক, ক্রীড়া ও শিক্ষা, বাণিজ্য, কনস্যুলার এবং প্রেস উইংয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বঙ্গবন্ধুর আবক্ষ মূর্তিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। বিকালে উপহাইকমিশনের বাংলাদেশ গ্যালারিতে শিশু-কিশোরদের জন্য ‘বঙ্গবন্ধু ও সোনার বাংলা’ বিষয়ক চিত্রাঙ্কন এবং বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননাপ্রাপ্ত বিশিষ্ট সাংবাদিক মানস ঘোষ ও প্রখ্যাত লেখক, সাংবাদিক ও সমাজকর্মী শাহরিয়ার কবির।