ডেস্ক নিউজ
বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক ৫০ বছর পূর্ণ হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে নতুন উচ্চতার সম্পর্কের আশা নিয়ে রবিবার (২০ মার্চ) দুদেশের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে রাজনৈতিক সংলাপ। ঢাকা-ওয়াশিংটন অষ্টম পার্টনারশিপ ডায়ালগে বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন স্টেট ডিপার্টমেন্টের আন্ডার সেক্রেটারি (পলিটিক্যাল) ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড। দেড় ঘণ্টার ওই বৈঠকে সম্পর্কের বিভিন্ন অগ্রাধিকার বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সবচেয়ে বড় কথা, এই বৈঠক হচ্ছে দুদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তির বছরে। অন্যান্য যে সংলাপগুলো আছে সেগুলোকে পুনরুজ্জীবিত করবে এই বৈঠক ।’
এদিকে গত সপ্তাহে মার্কিন দূতাবাস আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে এক কর্মকর্তা বলেন, ’পার্টনারশিপ সংলাপের উদ্দেশ্য হচ্ছে দুদেশের মধ্যে যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে সেটির আরও বাড়ানো। এজন্য কোনও একটি বিশেষ বিষয়কে আমরা গুরুত্ব না দিয়ে সম্পর্ককে আমরা সামগ্রিকভাবে দেখছি। আমাদের মধ্যে ৫০ বছরের সম্পর্ক এবং আমরা এটির ওপর ভিত্তি করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই।’
মাসুদ বনাম নুল্যান্ড
সর্বশেষ ২০১৯ সালে পার্টনারশিপ ডায়ালগ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক এবং স্টেট ডিপার্টমেন্টের তৎকালীন আন্ডার সেক্রেটারি (পলিটিক্যাল) ডেভিড হ্যাল।
এবার বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন ১৯৮৫ ব্যাচের কর্মকর্তা। বিসিএস পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকারী মাসুদ রোম এবং টোকিওতে রাষ্ট্রদূত হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। পররাষ্ট্র সচিব হওয়ার আগে তিনি জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি হিসাবে কর্মরত ছিলেন। এছাড়া দিল্লিতে তিনি মিশন উপ-প্রধান হিসাবেও কাজ করেছেন।
অন্যদিকে নুল্যান্ড একজন ক্যারিয়ার ডিপ্লোম্যাট। ২০০৫ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত তিনি ন্যাটোতে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত ছিলেন। ইউরোপে প্রচলিত অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত চুক্তি আলোচনায় প্রধান নেগোশিয়েটর হিসাবে ২০১০-১১তে দায়িত্ব পালন। এর আগে সাবেক মার্কিন ভাইস-প্রেসিডেন্ট ডিক চেনির ডেপুটি ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাডভাইজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। হিলারি ক্লিনটন যখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন, তখন তিনি স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ছিলেন।
এজেন্ডা
বাংলাদেশে পার্টনারশিপ ডায়ালগ হওয়ার কারণে এজেন্ডা নির্ধারণে ঢাকা নেতৃত্ব দিয়েছে। উভয়পক্ষের মধ্যে আলোচনার পরে চার থেকে পাঁচটি বড় বিষয়ের অধীনে অনেকগুলো সাব-ইস্যু আলোচনা হবে।
মোটা দাগে এজেন্ডাগুলো হচ্ছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার, নিরাপত্তা সম্পর্ক, রোহিঙ্গা, আঞ্চলিক সহযোগিতাসহ অন্যান্য বিষয়। র্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা হতে পারে।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, এটি নিয়মিত বৈঠক। র্যাবের নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি নতুন, ডিসেম্বরে দেওয়া হয়েছে। এর আগে আমরা যতগুলো সংলাপ করেছি সেখানে এই বিষয়টি ছিল না। তবে এটি আমরা যথেষ্ট গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছি। এটি অবশ্যই গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা হবে।
এছাড়া অর্থনৈতিক, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, সন্ত্রাসবাদ দমন, মানবপাচারসহ অন্যান্য বিষয়গুলো আলোচনা হবে।
রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিষয়টি সাম্প্রতিক। এটি আমাদের মূল আলোচনার বিষয়বস্তু কখনই ছিল না এবং হতে পারে না।
সফর
সামনের দুই মাসে অন্তত চারটি বৈঠক হবে দুদেশের মধ্যে। এবিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘পার্টনারশিপ ডায়ালগের পরে নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সংলাপ আছে, বাণিজ্যিক ও ব্যবসায়িক ডায়ালগ আছে এবং অন্যান্য সব বৈঠকের আগে যেহেতু এটি হচ্ছে, সেই অর্থে এটির আলাদা একটি গুরুত্ব আছে‘।
উচ্চপর্যায়ের সফর এই বৈঠকে গুরুত্ব পাবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, খুব স্বাভাবিক। ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এপ্রিল মাসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াশিংটন সফর করবেন। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন। ওই বৈঠকের পরে আরও উচ্চ পর্যায়ের সফর হওয়া উচিৎ। আমরা চাইবো ওনারা আসুক এবং আমরাও যাই।
প্রতিরক্ষা চুক্তি
জিসোমিয়া (জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশন অ্যাগ্রিমেন্ট) এবং আকসার (অ্যাকুইজিশন অ্যান্ড লজিস্টিক এগ্রিমেন্ট) নিয়ে অনেক বছর আলোচনা করছে দুদেশ। সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, জিসোমিয়া এবং আকসার বিভিন্ন প্রভিশনগুলো আমরা যাচাই করে দেখছি। অনেক স্টেকহোল্ডার আছে এবং ক্রয় সংক্রান্ত বিষয়গুলোর জন্য আমাদের নিজস্ব কিছু নিয়ম কানুন আছে। আমাদের নিয়মের সঙ্গে চুক্তির ধারাগুলো সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা সেটি আমরা যাচাই করছি। নিরাপত্তা সংলাপে এটি আরও বড় আকারে আলোচনা হবে বলে তিনি জানান।
ইন্দো-প্যাসিফিক বিষয়ে তিনি বলেন, অবশ্যই আলোচনা হবে। গত কয়েক বছরে যুক্তরাষ্ট্র অনেকদূর অগ্রসর হয়েছে। আমরা দেখছি যে অর্থনৈতিক বিষয়টি সেখানে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। আমরা সেটিকে গুরুত্ব দিতে চাই। কানেক্টিভটির বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়ে বাংলাদেশ যে কাজ করছে সেটি নিয়েও আমরা আলোচনা করতে চাই। তাদের ইন্দো-প্যাসিফিক উদ্যোগে আঞ্চলিক কানেক্টিভটি নিহিত করা যায় কিনা সেটির বিষয়ে আমাদের আগ্রহ থাকবে বলে জানান পররাষ্ট্র সচিব।
এ বিষয়ে মার্কিন দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা বলেন, আমরা আমাদের যে নিরাপত্তা সহযোগিতা আছে সেটির ব্যাপ্তি বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা করবো। আমরা সমুদ্র নিরাপত্তা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, শান্তিরক্ষাসহ অন্যান্য বিষয় নিয়ে কথা বলবো।
লেহি আইন নিয়ে আলোচনা হবে কিনা সে বিষয়ে বলেন, আমাদের এ বিষয়ে আলোচনা করতে কোনও সমস্যা নেই। এছাড়া ইন্দো-প্যাসিফিক নিয়ে এই অঞ্চলের দেশগুলো কিভাবে চিন্তা করে সেটি জানতে চাইবো। আমরা আমাদের বিষয়গুলো জানাবো এবং অন্যদের কথা শুনতে চাইবো।
মানবাধিকার
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, সাধারণভাবে মানবাধিকার বিষয়গুলো সম্পর্কে আমাদের যে প্রতিশ্রুতি এবং যে কাজগুলো হয়েছে সেটি আমরা ব্যাখ্যা করবো। ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন নিয়ে যদি তারা কথা বলতে চায় তবে ওই বিষয়ে আমাদের চিন্তাভাবনা আমরা জানাবো। সংখ্যালঘুদের বিষয়ে আমাদের যে প্রতিশ্রুতিগুলো আছে সেগুলো আমরা আবার বলবো।
তিনি বলেন, শ্রমাধিকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমরা শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা চাই। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রফতানি বাজার কিন্তু আমরা মনে করি এটি বাড়ানো যেতে পারে যদি আমরা শুল্কমুক্ত সুবিধা পাই। সেজন্য তাদের যেসব উদ্বেগ আছে সেগুলোর বিষয়ে আমরা কী ব্যবস্থা নিয়েছি সেটি আমরা জানাবো। আমরা রোডম্যাপ করেছি, আমরা শ্রমাধিকার বাস্তবায়ন, কর্মক্ষেত্রে সুরক্ষা এবং কমপ্লায়েন্স সুবিধাগুলো অনেকদূর বাস্তবায়ন হয়েছে, এগুলো আমরা তাদের জানাবো। এখানে অনেক কাজ হয়েছে এবং আরও হবে।