ডেস্ক নিউজ
যারা দেশের উন্নয়ন দেখতে পায় না তাদের চিকিৎসকের কাছে গিয়ে চোখ পরীক্ষা করানোর পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অনেকে আছে দেশে কোনো উন্নতি দেখে না। তাদের চোখে কোনো উন্নয়নই নাকি দেশে হয়নি। তাদের যদি চোখ খারাপ থাকে আমার কিছু বলার নেই। এখন বলতে হয় আমরা তো একটি আই ইনস্টিটিউট করে দিয়েছি। যারা বক্তৃতা দেয় উন্নয়ন হয় না, তারা চোখে দেখে না, আমার মনে হয় তাদের চোখ পরীক্ষা করা দরকার। তাহলে হয়তো দেখতে পারে উন্নয়ন হয়েছে কী না?
রোববার মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এই আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।
বিএনপিসহ যারা সরকারের উন্নয়ন চোখে দেখে না তাদের উদ্দেশ্য করে শেখ হাসিনা বলেন, তাদের চোখে পড়ে না যে শতভাগ বিদু্যৎ। ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ তো বিদু্যৎ ছাড়া চলতে পারে না। ডিজিটাল বাংলাদেশের সুযোগ তারাও নিচ্ছে। এটা উন্নতি নয়? আজকে পদ্মা সেতু, মেট্রো রেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদু্যৎ কেন্দ্র- এগুলো চোখে পড়ে না। এগুলো উন্নয়নের লক্ষণ নয়? দারিদ্র্য হার হ্রাস পেয়েছে সেটা তাদের চোখে পড়ে না। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা তাদের চোখে উন্নয়ন নয়।
বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, যাদের জন্ম জনগণের মধ্য থেকে হয়নি, জন্ম হয়েছে সেনা ছাউনিতে ক্ষমতা দখলকারী পকেট থেকে। তারা এখন আমাদের গণতন্ত্র শেখায়।
তিনি বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান সেনাপ্রধান থেকে ক্ষমতা দখল
করে রাষ্ট্রপতি হয়েছিল। ক্ষমতা নিষ্কণ্টক করার জন্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সেনা সদস্যদের হত্যা করেছে। কত পরিবার তাদের আপনজনের লাশটিও পায়নি। হাজার হাজার সেনা সদস্য যারা হত্যা করেছে তাদের থেকে আজ আমাদের গণতন্ত্রের ছবক শিখতে হবে এটাই জাতির দুর্ভাগ্য।
করোনা প্রতিরোধে সরকারের সফলতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বিনা পয়সায় করোনার পরীক্ষা ও ভ্যাকসিন দিয়েছি। অনেক উন্নত দেশও এটা পারেনি। বাজেটে আলাদা করে হাজার হাজার কোটি টাকা রেখে দিয়েছি। আমাদের কথা- যত টাকা লাগুক, যেখান থেকেই হোক ভ্যাকসিন আনব। দেশের মানুষকে দেব। আমরা সেটা দিতে সক্ষম হয়েছি। ৭৩ শতাংশ মানুষ ভ্যাকসিন পেয়ে গেছে। আগামীকাল থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত আবারও গণটিকা দিতে হবে। যারা দ্বিতীয় ডোজ নেয়নি সেটা আমরা দেব। আমরা একদিনে এক কোটি ২৩ লাখ করোনার টিকা দিয়ে রেকর্ড করেছি।
খাদ্য ও জীবিকার চাহিদা সরকারের লক্ষ্য উলেস্নখ করে সরকার প্রধান বলেন, করোনার ধাক্কা ও যুদ্ধাবস্থা সবকিছু মিলে খাদ্যভাবটা সারাবিশ্বে দেখা দিতে পারে। সেজন্য আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। এজন্য আমি আগেই বলেছি কোথাও যেন এক ইঞ্চি জমি অনাবাদি না থাকে। যার যেটুকু আছে সেটুকু করবে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আলোচনা সভায় প্রারম্ভিক বক্তৃতা করেন। বক্তৃতা করেন- দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, কৃষিমন্ত্রী ডক্টর আব্দুর রাজ্জাক, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম ও অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, দলের অন্যতম যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ডক্টর হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ডক্টর শাম্মী আহমেদ, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ও আজিজুস সামাদ আজাদ, মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মান্নাফী এবং উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান প্রমুখ। দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ডক্টর আব্দুস সোবহান গোলাপ সভাটি গণভবন থেকে সঞ্চালনা করেন।
‘শিগগিরই সব গৃহহীনের
আবাসন নিশ্চিত হবে’
এদিকে সরকারের বিনা পয়সায় ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার চলমান প্রক্রিয়ায় শিগগিরই দেশের সব ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষের আবাসন নিশ্চিত হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভায় তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতার স্বপ্ন ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলা। আমরা ২০২১ সালেই উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। ইনশালস্নাহ বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। আজকে আমরা শতভাগ বিদু্যৎ দিয়েছি। সকল ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষের জন্য বিনা পয়সায় ঘর তৈরি করে দিচ্ছি। সেদিন বেশি দূরে নয়, বাংলাদেশের একটি মানুষও ঠিকানাবিহীন থাকবে না, গৃহহীন থাকবে না, ভূমিহীন থাকবে না। অন্তত তাদের বেঁচে থাকার একটু সুযোগ আমরা করে দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের একটাই লক্ষ্য, বাংলাদেশটাকে আবার আমরা স্বাধীনতার চেতনায় ফিরিয়ে আনব। আমরা স্বাধীনতার আদর্শে বাংলাদেশকে গড়ে তুলব। ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বাংলাদেশ গড়ে উঠবে উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে।’
সুবর্ণজয়ন্তী পালনের সুযোগ দেওয়ায়
জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা
বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর সময় ক্ষমতায় থাকার সুযোগ পাওয়ায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করার যে সুযোগটা পেয়েছি এবং এর পূর্বে আমরা স্বাধীনতার রজতজয়ন্তীও উদযাপন করার সুযোগ পেয়েছিলাম, এর জন্য কৃতজ্ঞতা জানাই বাংলাদেশের জনগণের প্রতি। যারা ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে তাদের সেবা করার সুযোগ আমাকে দিয়েছে বলেই আজকে এই সৌভাগ্য হয়েছিল যে, আমরা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করতে পেরেছি।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভায় সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মঞ্চে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ডক্টর শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির প্রধান সমন্বয়ক কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী।
‘দেশের ইতিহাস নতুন প্রজন্মের
মাঝে ছড়িয়ে দিতে হবে’
দেশের ইতিহাসকে নতুন প্রজন্মের মাঝে আরও ছড়িয়ে দেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘ইতিহাস জানার মধ্যদিয়ে আমাদের নতুন প্রজন্ম এবং প্রজন্মের পর প্রজন্মের ভেতর একটা চেতনা জাগ্রত হবে, দেশপ্রেমে তারা উদ্বুদ্ধ হবে এবং মানুষের কল্যাণে তারা আরও কাজ করতে অনুপ্রেরণা পাবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে (পিএমও) থাকা স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স (এসএসএফ) কার্যালয়ে স্থাপিত ‘মুজিব কর্নার’ উদ্বোধনকালে দেওয়া ভাষণে এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, নতুন প্রজন্মের মধ্যে এই মানসিকতা যত বেশি ফিরে আসবে তত আমার দেশ অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সংস্কৃতিক দিক থেকে এগিয়ে যাবে।
প্রধানমন্ত্রীর বিদু্যৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক উপদেষ্টা ডক্টর তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, বীরবিক্রম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ডক্টর আহমদ কায়কাউস, মুখ্য সমন্বয়ক (এসডিজি বিষয়ক) জুয়েনা আজিজ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মো. তোফাজ্জেল হোসেন, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ডক্টর প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম, এসএসএফের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কবির আহমেদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।