ডেস্ক নিউজ
আমদানি পণ্য দ্রুত ছাড় করতে বন্দর ও কাস্টমসকে নির্দেশনা । পণ্যবাহী ট্রাক চাঁদাবাজমুক্ত রাখতে সক্রিয় থাকবে হাইওয়ে পুলিশ । জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাণিজ্য সচিবের নেতৃত্বে টাস্কফোর্স । বাজার মনিটরিংয়ে ডিসি-ইউএনওদের সক্রিয় রাখা । কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি ও মজুদদারির বিরুদ্ধে গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারি
রমজানে নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে পাঁচ কৌশল নিয়ে এগোচ্ছে সরকার, যেখানে পণ্যের সাপ্লাই চেন স্বাভাবিক রাখা এবং ব্যবসায়ী ও স্থানীয় প্রশাসনের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন করে বাজার মনিটরিংয়ের ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। শুধু তাই নয়, আন্তর্জাতিক বাজারের কারণে যাতে স্থানীয় বাজার অস্থিতিশীল না হয়ে ওঠে সে বিষয়ে সচেতন থাকতে বাণিজ্য সচিবকে প্রধান করে একটি টাস্কফোর্সও গঠন করা হয়েছে। এ টাস্কফোর্স নিত্যপণ্যের চাহিদা এবং আন্তর্জাতিক বাজারদর ও আমদানিসংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে কোনো পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি বা সরবরাহ চেনে অস্থিতিশীলতা দেখা দিলে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে।
সরকার যে পাঁচ কৌশলে বাজার সামলানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সেগুলো হলো- ১. আমদানি পণ্য দ্রুত ছাড় করতে বন্দর ও কাস্টমসকে নির্দেশনা। ২. পণ্যবাহী ট্রাক চাঁদাবাজমুক্ত রাখতে সক্রিয় থাকবে হাইওয়ে পুলিশ এবং পণ্য পারাপারে অগ্রাধিকার দেবে বিআইডব্লিউটিএ। ৩. আন্তর্জাতিক বাজারদর মনিটরিং করে জরুরি পরিস্থিতি সামাল দেবে বাণিজ্য সচিবের নেতৃত্বে টাস্কফোর্স। ৪. বাজার মনিটরিংয়ে ডিসি-ইউএনওরা সক্রিয় থাকবেন। এবং ৫. কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি ও মজুদদারির বিষয়ে গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নজরদারি বাড়াবে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, করোনা মহামারির কারণে আগে থেকেই আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্য তেল ও চিনির দাম ছিল ঊর্ধ্বমুখী। আমদানি বিঘ্ন হওয়ায় মাঝে পিঁয়াজের বাজারেও অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছিল। এ ছাড়া জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় এর প্রভাব পড়ছে অন্যান্য নিত্যপণ্যের ওপর। এ অবস্থায় সরকার এমন কিছু কৌশলী ভূমিকা গ্রহণ করছে যাতে বাজার নিয়ন্ত্রণে থাকে আবার ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এবং দ্রব্যমূল্য ও বাজার পর্যালোচনাসংক্রান্ত টাস্কফোর্সের প্রধান তপনকান্তি ঘোষ বলেন, ‘অন্যান্য বারের তুলনায় এবার আমরা একটি অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে রমজান মাস শুরু করতে যাচ্ছি। দুই বছর ধরে করোনা মহামারির কারণে লকডাউন থাকায় এমনিতেই পণ্যের সাপ্লাই চেনে সংকট ছিল। এর ওপর ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সে সংকট আরও বেড়েছে। এ সংকট মোকাবিলায় আমরা কিছু কৌশল গ্রহণ করেছি যাতে দ্রব্যমূল্য সহনীয় রাখা যায়।’ সচিব জানান, তেল, চিনি, ছোলা, ডালসহ নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ নিশ্চিত করা হয়েছে। রোজার আগেই ১ কোটি পরিবারের মধ্যে সাশ্রয়ী মূল্যে টিসিবির পণ্য বিক্রি কার্যক্রমের প্রথম ধাপ শুরু হওয়ায় এটি বাজার সহনীয় রাখতে ভূমিকা রাখছে। এ ছাড়া ভোজ্য তেল, চিনিসহ কিছু পণ্যের ট্যাক্স ও ভ্যাট কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান টিসিবির মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম আরও সম্প্রসারণ করা হয়েছে। এ ছাড়া ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরসহ জেলা ও উপজেলা প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া সরবরাহ চেন স্বাভাবিক রাখতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সিদ্ধান্তও হয়েছে। সরকারের এসব সিদ্ধান্তও সে কৌশলেরই অংশ। সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকার এবার বাজার নিয়ে এতটাই সতর্ক যে ভরা মৌসুমেও পিঁয়াজ আমদানি অব্যাহত রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে কৃষি মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এর আগে পণ্যটির আমদানি সাময়িক স্থগিত হওয়ায় হঠাৎ দাম বেড়ে যায়। এবার দাম সহনীয় থাকলেও সরকার আর কোনো ঝুঁকি নিতে চায় না।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানাচ্ছে, নিত্যপণ্যের দাম সহনীয় রাখার কৌশল নিয়ে এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সভা হয়েছে। আন্তমন্ত্রণালয় সভাও হয়েছে। এখন এ কৌশলগুলো বাস্তবায়নে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থা ছাড়াও ডিসি, এসপিসহ স্থানীয় প্রশাসনকে চিঠি দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি আমদানি পণ্য বন্দর থেকে দ্রুত খালাস করতে বন্দর কর্তৃপক্ষ ছাড়াও কাস্টমসকে চিঠি দেওয়া হচ্ছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিত্যপণ্যের ট্রাক ছাড় করতে ফেরিঘাট ও হাইওয়ে পুলিশকেও নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। পণ্যবাহী ট্রাককে চাঁদাবাজমুক্ত রাখতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে।