ডেস্ক নিউজ
দেশে অবৈধভাবে বসবাসরত বিশে^র ১২টি দেশের ৭৬ জন নাগরিককে সম্প্রতি নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে চীনের ৩৯ জন, সোমালিয়ার ১৩ জন, ভারতের ১০ জন, নাইজেরিয়ার ৪ জন, ফিলিপাইনের ২ জন, ক্যামেরুনের ২ জন, মালয়েশিয়ার একজন, সুরিনামের একজন, জার্মানির একজন, ইয়েমেনের একজন, লিথুয়ানিয়ার একজন এবং তুরস্কের একজন নাগরিক রয়েছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
বৈধ-অবৈধ মিলে দেশে কর্মরত বিদেশীর সংখ্যা প্রায় আড়াই লাখ। এর মধ্যে ১২ হাজারের বেশি নাগরিক অবৈধভাবে বাংলাদেশে বসবাস করছেন। তাদের পাসপোর্ট ও ভিসার মেয়াদ শেষ হলেও তারা অবৈধভাবে বাংলাদেশে বসবাস করছেন। এদের মধ্যে অনেকে বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। বিভিন্ন সময় তাদের গ্রেফতার করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বর্তমানে প্রায় সাড়ে তিন শ’ বিদেশী নাগরিক বিভিন্ন অভিযোগে আটক হয়ে কারাগারে বন্দী রয়েছেন। অবৈধভাবে বসবাসকারী বিদেশীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর নির্দেশনা দেয় সরকার। এরই অংশ হিসেবে বিদেশী বন্দীদের স্বদেশে ফেরত পাঠাতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট দেশের দূতাবাসে চিঠি পাঠানো হয়।
সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিবকে পাঠানো চিঠিতে এসবি প্রধান ও অতিরিক্ত আইজিপি মো: মনিরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশী নাগরিকদের ভ্রমণ ভিসাসহ অন্যান্য কাগজ যাচাইয়ে পুলিশের বিশেষ শাখা নিয়মিতভাবে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশীদের গতিবিধি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করছে। অনেকে ভিসা ও পাসপোর্টের মেয়াদ শেষে অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। এমনকি অস্ত্র, সোনা ও মাদক চোরাচালান, জাল মুদ্রা তৈরি, এটি এম কার্ড জালিয়াতির মতো অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। অনেকের বিরুদ্ধে জঙ্গি কর্মকাণ্ডে মদদ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়ে কারাগারে রয়েছেন। যারা অপরাধে জড়াচ্ছেন, তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, আটক বিদেশীদের নিজ দেশে ফেরত নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট দূতাবাসের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তাদেরকে জানানো হয়েছে। নাম, ঠিকানাসহ বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়েছে। বিভিন্ন দেশের দূতাবাস সাড়া দিয়ে বেশ কয়েকজন নাগরিককে ফেরত নিয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরো ফেরত পাঠানো হবে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে অবস্থানকারী বিদেশী নাগরিকদের নজরদারিতে রাখার কাজ করে থাকে পুলিশের বিশেষ শাখা (এসবি)। দেশে অবৈধভাবে অবস্থানকারী বিদেশী নাগরিকের সংখ্যা প্রায় ১২ হাজার। এর মধ্যে প্রতিবেশী একটি দেশের নাগরিকের সংখ্যা বেশি। এরপরই রয়েছেন, পাকিস্তান, ক্যামেরুন, ফিলিপাইন, আফগানিস্তান, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, শ্রীলঙ্কাসহ বেশ কয়েকটি দেশের নাগরিক। এদের মধ্যে কেউ ব্যবসায়িক ভিসায়, ভ্রমণ ভিসায় কেউ বা ‘অন অ্যারাইভাল’ ভিসায় এসে অবৈধভাবে রয়ে গেছেন। তারা প্রতারণা, সন্ত্রাসী কার্যক্রম, জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার মতো অপরাধকার্যক্রম করে থাকেন। তবে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তিদের বেশির ভাগ ব্যবসায়িক বা ভ্রমণ ভিসায় প্রবেশ করেছেন। তাদের একটি অংশ পাসপোর্ট হারিয়ে গেছে বলে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে অবৈধভাবে অবস্থান করে থাকেন। প্রতারণায় যুক্ত ব্যক্তিদের বেশির ভাগই রাজধানীর উত্তরা, আশকোনা ও খিলক্ষেত এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে বা হোটেলে অবস্থান করেন। নিজেদের ফুটবলার বা বায়িং হাউজের ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দেন। তা ছাড়া নাইজেরিয়ার যেসব নাগরিক দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন, তারা নতুন আসা নাইজেরিয়ানদের এসব কাজে সহায়তা করেন। নাইজেরিয়ান কমিউনিটি অ্যাসোসিয়েশন ইন বাংলাদেশ নামে ভুয়া সংগঠনের মাধ্যমে টাকা সংগ্রহ করা হয়। সংগঠনটি নাইজেরিয়ার অপরাধীদের মামলা সংক্রান্ত যাবতীয় খরচ বহন করে এবং অপরাধীদের দায়মুক্তির ব্যবস্থা করে। শুধু তাই নয়, নাইজেরিয়ার নাগরিকরা বাংলাদেশে অবস্থানকালে বিদেশী নাগরিক হিসেবে শুল্কমুক্ত (ডিউটি ফ্রি) কোটায় মদ, বিয়ার কেনার সুযোগ থাকায় কিছু বাংলাদেশীর সাথে তাদের সখ্য গড়ে ওঠে। আবার কারাগারে অবাধে বাংলাদেশী বন্দীদের সাথেও তাদের সখ্য গড়ে ওঠে। পরে তারা জামিনে ছাড়া পেয়ে এক হয়ে অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন। একাধিকবার কারাবরণ করার পরও বাংলাদেশে অবস্থান করে নানান কৌশলে অপরাধের প্রসার ঘটাচ্ছেন এবং বাংলাদেশেই থেকে যাচ্ছেন।
গ্রেফতার হওয়া বিদেশী অপরাধীদের অনেকেরই ভিসার মেয়াদ শেষ হলেও তারা নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার কোনো উদ্যোগ নেয়নি। এ ছাড়া কোনো কোনো দেশের দূতাবাসও নেই এদেশে যে কারণে তাদের ফেরত পাঠাতে জটিলতা সৃষ্টি হয়।