ডেস্ক নিউজ
বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার বর্তমানে ৪১৬ বিলিয়ন ডলার। মহামারী করোনা ভাইরাসের কারণে অনেক দেশ নাজুক অবস্থায় গেলেও, গেল বছরে বাংলাদেশের ৬.৯৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আর এ ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাত।
তথ্যপ্রযুক্তিতে ঈর্ষণীয় সাফল্য বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় আসীন করেছে। বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তা ও তথ্যপ্রযুক্তি পেশাজীবীদের কারণে বিদেশেও বাংলাদেশের অগ্রগতি সমুজ্জ্বল। এ ক্ষেত্রে সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ গড়ে তুলতে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে বিভিন্ন উদ্যোগের পাশাপাশি তরুণদের নানা প্রচেষ্টা সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে। দেশে স্মার্টফোন ও ইন্টারনেটের ব্যবহার বাড়ছে। শুধু শহরেই নয়, জেলা উপজেলা সদর ছাড়িয়ে গ্রাম, এমনকি প্রত্যন্ত ও দুর্গম অঞ্চলেও তথ্যপ্রযুক্তি সেবা পৌঁছে গেছে। ফলে দ্রুত দেশের বিভিন্ন খাত বদলে যাচ্ছে।
দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন বেসিস ও ইপিবির তথ্যমতে, বর্তমানে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের রপ্তানি আয় ১.৪ বিলিয়ন ডলার। আর দেশে তথ্যপ্রযুক্তির বাজার প্রায় ১.৬ বিলিয়ন ডলার। এ ছাড়া দেশে প্রায় সাড়ে ছয় লাখ ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন, যাদের আয়ের পরিমাণ প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ডলার। অক্সফোর্ড ইন্টারনেট ইনস্টিউটের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশ ফ্রিল্যান্সিংয়ে বিশ্বে দ্বিতীয়। ভারতের পরেই অবস্থান। অক্সফোর্ডের এই তথ্য বিশ্বের সব বড় বড় ফ্রিল্যান্সিং সাইটের হিসাব থেকে নেওয়া। এর বাইরেও সরাসরি ক্লায়েন্টের সঙ্গে কাজ করছেন অনেক ফ্রিল্যান্সার। তবে তথ্যপ্রযুক্তি খাত মানেই শুধু তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান ও ফ্রিল্যান্স পেশাজীবী নয়, বাংলাদেশের অর্থনীতির পেছনের প্রতিটি খাতেই তথ্যপ্রযুক্তি অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার দেশের শিক্ষাব্যবস্থা থেকে শুরু করে চিকিৎসা, অর্থনীতি, রাজনীতি, নিরাপত্তা, সংস্কৃতিসহ প্রতিটি মৌলিক ক্ষেত্রে যুগান্তকারী বিপ্লব এনে দিয়েছে। দিন দিন প্রযুক্তির এতই উৎকর্ষ সাধন হচ্ছে যে, মানুষও প্রাণভরে উপভোগ করছে এর সুফল। এককথায় প্রযুক্তি হয়ে উঠছে মানুষের ভার্চুয়াল বন্ধু। প্রযুক্তিভিত্তিক সেবার কারণে কমেছে সময় ও ভোগান্তি। জীবনযাত্রার মান বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে কর্মসংস্থানও।
আন্তর্জাতিক সফটওয়্যার ও অ্যাপ মার্কেটেও বাংলাদেশের সাফল্য ঈর্ষণীয়। এদিকে ব্যাংকিং ব্যবস্থার ধরনও পাল্টে দিয়েছে অনলাইন ব্যাংকিং। মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ব্যাংককে নিয়ে গেছে ঘরে ঘরে। ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ সাইটে নিজেদের পেজ তৈরি করে ব্যবসা করছেন তরুণ প্রজন্মের লাখ লাখ উদ্যোক্তা। দ্রুতগতির ইন্টারনেটের সুবিধায় বড় বাজার তৈরি করেছে ই-কমার্স খাতও। অন্যদিকে দাপ্তরিক কাজেও ডিজিটাল বাংলাদেশের অনেক সুবিধা ভোগ করছেন নাগরিকরা।
পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স, জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন, জমির পর্চাসহ অনেক সেবা এখন মিলছে অনলাইনে। ফ্রিল্যান্সিং ঘোচাচ্ছে বেকারত্বের অভিশাপ। ইন্টারনেটের সুবিধা নিয়ে ডিজিটাল হয়েছে বিচার বিভাগও। চালু হয়েছে ভার্চুয়াল আদালত ব্যবস্থা। বড় পরিবর্তন এসেছে উবার পাঠাওয়ের মতো রাইড শেয়ারিং সেবা চালু হওয়ায়। এ ক্ষেত্রে কর্মসংস্থান যেমন বেড়েছে তেমনি অনেকের যাতায়াতে সুবিধাও হয়েছে।
তথ্যপ্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নতি এবং ডিজিটাইজেশনের ব্যাপক সম্প্রসারণের ফলে এটি দেশের অর্থনৈতিক অবকাঠামোর প্রধান মেরুদ- হিসেবে উদ্ভূত হয়েছে। প্রযুক্তির অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে বর্তমানে বাংলাদেশ সর্বব্যাপী ডিজিটাইজেশনের মতো অত্যাধুনিক পদক্ষেপ নিতে শুরু করেছে।
আশির দশকের গোড়ার দিকে স্বল্প পরিসরে একটি অপ্রচলিত রপ্তানি খাত হিসেবে বাংলাদেশের পোশাক খাতের যাত্রা শুরু হয়। মাত্র ১২ হাজার ডলার রপ্তানি আয় দিয়ে শুরু করা পোশাক শিল্প আজ বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অনবদ্য অবদান রেখে চলেছে। দেশের মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮৩ শতাংশ অর্জিত হয় তৈরি পোশাক রপ্তানি থেকে। পোশাক খাত দেশে প্রায় ৪৪ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে এবং ৩২ বিলিয়ন ডলারের অধিক রপ্তানি আয়ের উৎস। তবে এই খাতেও তথ্যপ্রযুক্তি খাতের অবদান অনস্বীকার্য। তৈরি পোশাক খাতের অটোমেশন থেকে শুরু করে পোশাক ডিজাইন, মান নিয়ন্ত্রন, কর্মী ব্যবস্থাপনাসহ তাদের বেতন প্রদান, বিপণন ইত্যাদি কাজে তথ্যপ্রযুক্তির বহুল ব্যবহার হচ্ছে। ফলে এ খাতের ৩২ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয়ের মধ্যে একটি বিশাল অংশ অর্জনে ভূমিকা রয়েছে তথ্যপ্রযুক্তির।
প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে ব্যাংকিং সেবার ধরন যেমন বদলেছে তেমনি বেড়েছে এর পরিধিও। সেই ধারাবাহিকতায় বর্তমান সময়ে ব্যাংক খাতে বেশ কিছু পণ্য বা সেবা জনপ্রিয় হয়েছে। যেমন অনলাইন ব্যাংকিং, ইন্টারনেট ব্যাংকিং, কার্ড সেবা, এসএমএস সার্ভিস, অটোমেটেড ক্লিয়ারিং, এজেন্ট ব্যাংকিং, ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফার, আরটিজিএস, মোবাইল অ্যাপ ইত্যাদি। আর্থিক খাতে প্রযুক্তির ব্যবহারকে সংক্ষেপে ফিনটেক বলা হয়। ফিনটেক হলো প্রযুক্তিগতভাবে সক্ষম আর্থিক উদ্ভাবন। নতুন ব্যবসায়িক মডেল, মডেলের প্রয়োগ, প্রসেসিং ইত্যাদি আর্থিক পরিসেবা খাতকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। ফিনটেক এরই মধ্যে পি-টু-পি, চেক জমা, অর্থের লেনদেন, বিল পরিশোধ, সম্পদ ব্যবস্থাপনা, ক্রাউড ফান্ডিং ইত্যাদি কর্মকাণ্ডে ব্যাপক সাড়া পেয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির কারণে দেশে প্রথাগত ব্যাংকিং মাধ্যমের লেনদেনকে ছাড়িয়ে গেছে অনলাইনভিত্তিক লেনদেন। এর ফলে ব্যাংক খাতের সামগ্রিক কর্মদক্ষতা ও উৎপাদনশীলতা বাড়ছে, অন্যদিকে খাতটির মুনাফা বৃদ্ধিতে তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। নির্ভুল লেনদেনের মাধ্যমে গ্রাহকের সন্তুষ্টি বাড়াতেও আইসিটির ব্যবহার অপরিহার্য হয়ে উঠছে।
এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে গত দেড় দশকে ব্যাংকের কর্মীদের কর্মদক্ষতা দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। আর আইসিটি বিষয়ে জ্ঞান আছে, এমন একজন কর্মীর পেছনে ১ টাকা খরচ করলে ব্যাংকের আয় বাড়ে ২৫ টাকার সমান। সাধারণ একজন কর্মীর পেছনে এক টাকা খরচ করা হলে ব্যাংকের আয় বাড়ে ছয় টাকা। অর্থাৎ আইসিটিতে দক্ষ একজন কর্মীর পেছনে ব্যাংকের বিনিয়োগ চার গুণ বেশি লাভজনক।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, আইসিটিতে ১ টাকা বিনিয়োগ করলে ব্যাংকের জন্য তা ১৩৬ টাকার সমান উৎপাদনশীলতা তৈরি করে। এর বিপরীতে প্রযুক্তিবহির্ভূত খাতে ১ টাকা খরচ করলে সেটি ৫৮ টাকার সমপরিমাণের উৎপাদনশীলতা নিয়ে আসে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ১৩টি এমএফএস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের তথ্য নিয়ে যে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা গেছে, গত বছরের অক্টোবরে এই সেবায় লেনদেন হয়েছে ৬৭ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকা, সেপ্টেম্বরে যা ছিল ৬৫ হাজার ১৪১ কোটি টাকা। গত অক্টোবরে মোট লেনদেনের মধ্যে টাকা জমা হয়েছিল ২১ হাজার ৪৯ কোটি ও উত্তোলিত হয়েছিল ১৭ হাজার ৬৮১ কোটি। ফলে মোট লেনদেনে ৫৭ শতাংশই ছিল জমা ও উত্তোলন। বাকি ৪৩ শতাংশ লেনদেন হয়েছে ডিজিটাল। এর আগে গত বছরের মে মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে সর্বোচ্চ ৭১ হাজার ২৪৬ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছিল। আর এর সবই হয়েছে প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে।
আগে বেশিরভাগ ব্যাংকই বাইরের সফটওয়্যার ব্যবহার করত, এখন কিন্তু অনেকাংশে লোকাল সফটওয়্যার চলে আসছে। লোকাল সফটওয়্যারগুলো আন্তর্জাতিকমানের এবং সেবা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বিদেশি কোম্পানির চেয়ে অনেকাংশে এগিয়ে ও সহজলভ্য। এভাবে সব ক্ষেত্রেই লোকাল পণ্যকে যদি গুরুত্ব দেওয়া হয়, তবে রপ্তানির ক্ষেত্রেও ধীরে ধীরে সেগুলোর বড় প্রভাব পড়বে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে এবং প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিবিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের সঠিক দিকনির্দেশনা ও তত্ত্বাবধানের কারণেই তথ্যপ্রযুক্তিতে এ সাফল্য অর্জন সম্ভব হয়েছে। বিশেষ করে করোনাকালে আমাদের শিক্ষা, প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা, বাণিজ্যসহ সবকিছু অচল হয়ে যেত। কিন্তু ডিজিটাল বাংলাদেশ হয়েছে বলেই অর্থনৈতিক চাকা সচল রয়েছে। গত এক যুগে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের যথাযথ অবকাঠামো গড়ে ওঠার কারণে কোভিড-১৯ মহামারীতেও শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, আদালত ও সরবরাহ ব্যবস্থা সচল রাখা সম্ভব হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ করার ফলেই টেলিসেন্টার, টেলিমেডিসিন, মোবাইলের মাধ্যমে দরিদ্র মানুষকে টাকা পৌঁছে দেওয়া, ই-কমার্স, ভার্চুয়াল কোর্টসহ নানা কাজ করা সম্ভব হয়েছে।
সরকার আইসিটি সম্প্রসারণ ও ব্যবহার জনসাধারণের নাগালের মধ্যে আনার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এ ছাড়া উন্নত দেশগুলো ইতোমধ্যে আইসিটির সফল ব্যবহার ও প্রয়োগের মাধ্যমে তাদের সব ক্ষেত্রে কাক্সিক্ষত উন্নতি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। সরকার কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় প্রশাসনের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদানের সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে সরকারি কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ, অধিকতর উন্নত জনসেবা প্রদানের জন্য প্রশাসনের সর্বস্তরে ই-গভর্নেন্স প্রতিষ্ঠা হয়েছে। এর সুফল পাচ্ছেন সাধারণ জনগণ। সরকারি অফিসগুলোয় চালুকৃত ই-নথি ব্যবস্থা সেবা কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করেছে। করোনা মহামারীর সময়ে ৩০ লাখের অধিক ই-নথি সম্পন্ন হয়েছে। এতে সরকারি সেবা কার্যক্রম নাগরিকের কাছে আরও সহজে পৌঁছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে।
ডিজিটাল সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ বাস্তবায়নের ফলে জাতিসংঘের ই-গভর্মেন্ট সূচকে বাংলাদেশের বড় উত্তরণ ঘটে ২০১৮ সালে। জাতিসংঘ বিভিন্ন দেশের ই-গভর্মেন্ট কার্যক্রম নিয়ে দুই বছরের অগ্রগতি পর্যালোচনা শেষে ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে দেখা যায়, ডেভেলপমেন্ট সূচকে বাংলাদেশ এগিয়েছে ৯ ধাপ আর ই-পার্টিসিপেশন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ৩৩ ধাপ উন্নতি হয়। ১৯৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১১৫তম। আর ই-পার্টিসিপেশন (ইপিআই) সূচকে ৪১তম অবস্থানে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। দেশের ৬ হাজার ৬৮১টি ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে তথ্য ও সেবা প্রদান করা হচ্ছে। ৬শরও বেশি সেবা মানুষ অনলাইনে পাচ্ছে। শুধু ৪ হাজার ৫৫৪টি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার থেকেই বিগত এগারো বছরে মানুষকে ৪৬ কোটি সেবা দেওয়া হয়। এ সময়ে উদ্যোক্তারা আয় করেছে ৩৯৬ কোটি টাকা। দেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন বেসিস, আইসিটি ডিভিশন ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমিত তথ্যমতে, বর্তমানে বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি খাতের রফতানি আয় ১.৪ বিলিয়ন ডলার। ২০২০-২১ অর্থবছরে বৈধ চ্যানেলের মাধ্যমে আসা ফ্রিল্যান্সারদের আয় ছিল ১৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
বর্তমানে দেশে আনুমানিক ২ হাজার ৫০০ ই-কমার্স সাইট রয়েছে। ফেসবুকভিত্তিক বিভিন্ন ব্যবসায়িক উদ্যোগ রয়েছে দেড় লাখের বেশি। অনলাইনে ব্যবসার ৮০ শতাংশই প্রথমদিকে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও গাজীপুরকেন্দ্রিক হলেও পরবর্তী সময়ে সেটি দেশের জেলা ও উপজেলা, এমনকি প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিস্তৃত হয়েছে। কোভিডের শুরুর বছর কেবল ২০২০ সালে অনলাইনে বেচাকেনা বেড়ে যায় প্রায় ৩০০ শতাংশ। ১ লাখ নতুন উদ্যোক্তার পাশাপাশি তৈরি হয়েছে ৫ লাখ কর্মসংস্থান। ই-কমার্স খাতে গত এক দশকে কেবল ১৭টি কো¤পানিতেই ৪৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ হয়েছে। যার মধ্যে ৪৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিদেশি বিনিয়োগ। এর মধ্যে ২০১৮ সাল ছিল বিনিয়োগ প্রাপ্তির জন্য সবচেয়ে উত্তম বছর। এ বছরেই দারাজকে বিশ্বের অন্যতম ই-কমার্স জায়ান্ট আলিবাবা অধিগ্রহণ করে এবং এখন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ এনেছে ১২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বা ১১শ কোটি টাকা। এ ছাড়াও চালডাল ২৪ দশমিক ৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, শপআপ ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, সাজগোজ ২ দশমিক ৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ও সোয়াপ ১ দশমিক ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দেশি ও বিদেশি বিনিয়োগ লাভ করে। এমনভাবেই বেশ কিছু ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগ আনতে সক্ষম হয়েছে। কোভিডের আগেও এই খাতের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ছিল ৪০-৪৫ শতাংশ। লেনদেন বৃদ্ধি পেয়ে খাতটির মূল্য দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা। ২০২৩ সাল নাগাদ এ খাতের আকার ২৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো সেলফোন, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, প্রসাধনী, পোশাক, দুগ্ধজাত পণ্য, স্টেশনারি থেকে শুরু করে আরও নানা পণ্য ও সেবা বিপণন করছে। আর এই ই-কমার্স ও এফ-কমার্স খাত পুরোটাই তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর।
দেশের স্বাস্থ্য খাতে বিপ্লব ঘটিয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি। এতে মানুষের সেবা পাওয়ার সুযোগও বেড়েছে। সরকারের স্বাস্থ্য বাতায়ন এ পর্যন্ত প্রায় দুই কোটি মানুষকে সেবা দিয়েছে। বিশ্বের খুব কম দেশই আছে, যারা ই-হেলথ এবং স্বাস্থ্য তথ্য ব্যবস্থা (হেলথ ইনফরমেশন সিস্টেম) বাংলাদেশের মতো এগিয়ে নিতে পেরেছে। টেলিমেডিসিন সেবা চালু আছে প্রায় ১০০ হাসপাতালে। এর মাধ্যমে উপজেলা হাসপাতালে থাকা রোগী ঢাকার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ পান।
কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে প্রযুক্তির ছোঁয়া বদলে দিয়েছে কৃষকের জীবন। তথ্যপ্রযুক্তিগত সেবা কৃষি বাতায়ন ও কৃষক বন্ধু কলসেন্টার চালু করেছে সরকার। ফলে সহজেই কৃষকরা ঘরে বসে বিভিন্ন সেবা গ্রহণ করতে পারছেন। এভাবে প্রযুক্তির সহায়তা আর নিজেদের কঠোর পরিশ্রমে কৃষকদের উৎপাদিত ফসলে সমৃদ্ধ হচ্ছে দেশের অর্থনীতি।
এভাবেই বাংলাদেশের অর্থনীতির পেছনের প্রতিটি খাতে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে তথ্যপ্রযুক্তি। এ খাতের উন্নয়নে সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস)। সরকারি-বেসরকারি খাতের অংশীদারিত্ব অব্যাহত থাকলে ২০৪১ সাল নাগাদ তথ্যপ্রযুক্তিনির্ভর উন্নত বাংলাদেশের যে লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে কাজ করা হচ্ছে সেটি নির্ধারিত সময়ের আগেই বাস্তবায়িত হবে। তৈরি পোশাক খাতকে পেছনে ফেলে জিডিপিতে বড় অবদান রাখবে তথ্যপ্রযুক্তি খাত।