ডেস্ক নিউজ
জনগণ যেন সরকারী সেবা থেকে বঞ্চিত না হয় সে বিষয়ে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের সতর্ক থাকার নির্দেশনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সব সময় মাথায় রাখবেন বাংলাদেশের জনগণ তারা যেন কখনও সেবা থেকে বঞ্চিত না হয়। কারণ তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্যই তো আমাদের এই স্বাধীনতা। বঞ্চনার হাত থেকে মুক্তি দেয়ার জন্যই কিন্তু আমাদের স্বাধীনতা। কাজেই স্বাধীনতার সুফল যেন বাংলাদেশের প্রত্যেকটা মানুষের ঘরে পৌঁছায়, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। রবিবার রাজধানীর শাহবাগের বিসিএস প্রশাসন একাডেমিতে ১২১, ১২২ ও ১২৩তম আইন ও প্রশাসন প্রশিক্ষণ কোর্সসমূহের সমাপনী ও সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ নির্দেশনা দেন। প্রধানমন্ত্রী তার সরকারী বাসভবন গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠানে যোগ দেন। তিনি বলেন, সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদে প্রজাতন্ত্রের মালিক হচ্ছে জনগণ। কাজেই সেই জনগণকে ঘিরেই আমাদের সমস্ত কাজ। জনগণের সার্বিক উন্নয়নটাই আমাদের লক্ষ্য।
সরকারপ্রধান এ সময় তরুণ কর্মকর্তাদের যেখানে পোস্টিং দেয়া হবে সে স্থান সম্পর্কে ভালভাবে জানতে এবং স্থানীয়দের ভাগ্য, জীবন ও জীবিকার উন্নয়নের ব্যাপারে সব সময় চিন্তা-ভাবনা করারও নির্দেশনা দেন। তিনি বলেন, যখনই যে যেখানে দায়িত্বপালন করবেন অবশ্যই মানুষের চিন্তা করবেন, যে যে এলাকায় কাজ করবেন সে এলাকা সম্পর্কে জানতে হবে। সেখানকার মানুষের আচার-আচরণ সম্পর্কে জানতে হবে। জীবন-জীবিকা সম্পর্কে জানতে হবে এবং কিভাবে তাদের উন্নতি করা যায় সে বিষয়েও আপনাদেরই সব থেকে ভাল সুযোগ রয়েছে।
প্রজাতন্ত্রের নবীন কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা অল্পসংখ্যক ভাগ্যবান ব্যক্তি আজকে দেশ সেবার সুযোগ পাচ্ছেন। কাজ করার সুযোগ পাচ্ছেন। আপনারা বিভিন্নভাবে মানুষের সেবা করার একটা সুযোগ পেয়েছেন। কাজেই আপনাদের চিন্তা-চেতনা সেই জনকল্যাণমূলকই হতে হবে।’
তিনি বলেন, মাঠ পর্যায়ে কাজের মধ্য দিয়ে আপনারা যে জ্ঞান লাভ করবেন সেটাই আগামী দিনে আরও যখন উচ্চ পর্যায়ে যাবেন বাস্তববাদী কাজ করার সুযোগ পাবেন। বাংলাদেশকে আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার যে পরিকল্পনা নিয়েছি সে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মূল কারিগর আপনারাই হবেন। কাজেই এখন থেকে আপনাদের সেভাবে কাজ করতে হবে।
বিভিন্ন এলাকায় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জমি নির্দিষ্ট করাসহ বিভিন্ন জটিলতা নিরসনে বিভিন্ন বিভাগের মধ্যে কাজের সমন্বয় করার পরামর্শ দিয়ে সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলেন, কাজগুলো যাতে সুপরিকল্পিতভাবে হয় সে বিষয়েও বিশেষ দৃষ্টি দেয়া উচিত। কেবল নবীন কর্মকর্তা নয়, বিভিন্ন দফতরে যারা উচ্চ পদে আছেন, তাদেরও একই নির্দেশনা দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, যারা বিভিন্ন প্রকল্প প্রণয়নে আছেন, আমরা যেগুলো করে দিই, সেগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও বিষয়টা দেখতে হবে।
দক্ষ সিভিল সার্ভিসের গুরুত্ব তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি প্রশিক্ষিত দক্ষ সিভিল সার্ভিস সরকারের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে অন্যতম সহায়ক শক্তি বলে আমি মনে করি। আমরা যা প্রতিশ্রুতি দেই সেটা বাস্তবায়নে দায়িত্ব কিন্তু প্রশাসনের কর্মকর্তাদের। আমি মনে করি আধুনিক যুগের ছেলে-মেয়েদের মেধা এবং শক্তি, জ্ঞান, উদ্ভাবনী চিন্তা-ভাবনা আরও অনেক বেশি স্বচ্ছ, অনেক বেশি শক্তিশালী। কাজেই আপনাদের জ্ঞান, মেধা এবং উদ্ভাবনী শক্তি দিয়ে এই দেশকে আপনারা এগিয়ে নিয়ে যাবেন এবং জনগণের সেবা করবেন। সেটাই আমরা চাই।
দেশকে আরও এগিয়ে নেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে, আমাদের অর্থনীতি মজবুত হয়েছে। জাতিসংঘের যে চাহিদা সেটা মোতাবেক এখন আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। উন্নয়নশীলের মর্যাদা পেলেই হবে না, উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে নিজেদের আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আমাদের আরও শক্তিশালী করতে হবে দেশকে।
প্রধানমন্ত্রী দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, এই বাংলাদেশে একটি মানুষ ক্ষুধার্ত থাকবে না, একটি মানুষ গৃহহীন থাকবে না। প্রতিটি মানুষ স্বাস্থ্য সেবা পাবে, শিক্ষার সুযোগ পাবে, উন্নত জীবন পাবে। এটাইতো জাতির পিতার একমাত্র লক্ষ্য।
বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক ও সমৃদ্ধ দেশ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা সরকারী কর্মকর্তা হিসেবে আমি মনে করি বাংলাদেশটাকে আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তোলার প্রচেষ্টা নেবেন। কারণ আমরা চাই এদেশ এগিয়ে যাক।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৭৫-এর পর যারা ক্ষমতায় এসেছে তাদের কাছে ক্ষমতাটা ছিল ভোগের বস্তু। তারা সেটা দিয়ে নিজের ভাগ্য গড়তে চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আমি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কন্যা। শুধু প্রধানমন্ত্রী না, আমার দায়িত্ব হচ্ছে এদেশের প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো সুনিশ্চিত করা, তাদের জীবনমান উন্নত করা এবং দেশের উন্নয়নটা তৃণমূল পর্যায় থেকে উন্নয়ন করা।
জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিসিএস প্রশাসনিক একাডেমির রেক্টর মোমিনুর রশিদ আমিন। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এইচ এন আশিকুর রহমান ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব কে এম আলি আজম। এ সময় বিসিএস প্রশাসনিক একাডেমির ওপর নির্মিত একটি অডিও-ভিজুয়াল প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন রেক্টরের কাছে শীর্ষ স্থান অধিকারকারীদের মাঝে পুরস্কার, ক্রেস্ট ও সনদ হস্তান্তর করেন। ১২১, ১২২ ও ১২৩তম কোর্সে মোট ৯৯ জন অংশ নেন। ১২১, ১২২ ও ১২৩ থেকে প্রথম স্থান অধিকারকারী রেক্টর এ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত তিন জন হলেন মোঃ নাভিদ রেজওয়ানুল কবির, মোঃ রাকিবুর হাসান ও রেজওয়ানা আফরিন। এ সময় তারা তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করেন। পাশাপাশি, ১২১ এর মহুয়া আফরোজ ও আলাউদ্দিন, ১২২ এর সাবরিনা শারমীন ও সুমা খাতুন এবং ১২৩ এর কাজী মোঃ অনিক ইসলাম ও মেহেদী হাসান যথাক্রমে এই কোর্সগুলোর দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকার করেন।