ডেস্ক নিউজ
চলন্ত মেট্রো রেলে কেউ একজন সন্ত্রাসী হামলার চেষ্টা করছে অথবা আগুন লাগিয়ে দিচ্ছে—এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে যাত্রী হিসেবে আপনি কী করবেন? কিভাবে আপনার কাছে পৌঁছাবে সাহায্য? আপনিই বা কেমন করে পরিস্থিতির কথা জানাবেন নিরাপত্তাকর্মীদের। এ সব কিছু জানাতে গতকাল এক কর্মশালার আয়োজন করে মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ।
কর্মশালায় মহড়া করে দেখানো হয়, একজন দুষ্কৃতকারী আগুন নিয়ে যাত্রীদের ওপর হামলার চেষ্টা করছে। তখন যাত্রীদের একজন রেলের দরজার সঙ্গে থাকা লাল বোতামে চাপ দেন।
লাল বোতামটি একটি কাভারে ঢাকা থাকে। প্রথমে কাভারটি তুলতে হবে। বোতামটি তিন সেকেন্ড চেপে ধরে রাখলে সরাসরি লোকোমাস্টারের (রেলের চালক) সঙ্গে কথা বলা যাবে। এভাবে লোকোমাস্টারের সঙ্গে কথা বলে দুষ্কৃতকারীর বিষয়ে তাঁকে জানানো হয়।
রেলের চালক দুষ্কৃতকারীর তথ্য পেয়ে তা অপারেশন কন্টোল সেন্টারে (ওসিসি) খবর দেন এবং মাইকিং করে ওই বগির যাত্রীদের বিষয়টি জানান। পরের স্টেশনে ট্রেনটি থামবে। ততক্ষণে ওসিসি থেকে খবর চলে যায় ডিজস্টার ম্যানেজমেন্ট টিমের (ডিএমটি) কাছে। ডিএমটি পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মী নিয়ে পরের স্টেশনে ট্রেন থামার আগেই উপস্থিত হয়ে যায়। তারা যাত্রীদের উদ্ধার করে। অভিযুক্তকে আটক করা হয়।
রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ীতে অবস্থিত মেট্রো রেলের ডিপোতে এই কর্মশালা ও মহড়ার আয়োজন করা হয়। ‘দ্য প্রজেক্ট অন টেকনিক্যাল আসিস্ট্যান্স অব এমআরটি সেফটি ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম অন লাইন-৬’-এর আওতায় কর্মশালাটি পরিচালিত হয়। এতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অংশ নেন।
অপারেশন কন্টোল সেন্টারে দায়িত্বে থাকা আব্দুল মতিন চৌধুরী কালের কণ্ঠকে বলেন, যেকোনো ধরনের দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য একটি ম্যানুয়াল তৈরি করা হয়েছে এবং সেই ম্যানুয়ালে কার কী দায়িত্ব, সেটাও পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করা আছে।
এদিকে রাজধানীর বুকে এখন নিয়মিতই পরীক্ষামূলকভাবে চলছে মেট্রো রেল। যা দূর থেকে অথবা ছবিতে অনেকেই দেখেছে, কিন্তু মেট্রো রেলের বগির ভেতরে এমন অনেক কিছু আছে, যা ভ্রমণের আগে যাত্রীদের জানা দরকার। এ জন্য একটি এক্সিবিশন সেন্টার তৈরি করে কর্তৃপক্ষ। তবে এটি এখনো সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়নি।
কালের কণ্ঠের প্রতিনিধি সেই এক্সিবিশন সেন্টারে সরেজমিনে ঘুরে দেখেন, মেট্রো রেলের টিকিট কেনার জন্য স্বয়ংক্রিয় মেশিন স্থাপন করা আছে। মেশিনে টাকা দিয়ে বাটন চাপ দিলেই টিকিট কাটা হয়ে যাবে। তবে চিন্তার কারণ নেই, বাড়তি টাকা ফেরত পাওয়ারও ব্যবস্থা আছে। টিকিট কেনার জন্য যে পথে টাকা দেবেন তার ঠিক নিচেই থাকছে টাকা ফেরত নেওয়ার জায়গা। বাটন চাপার পর পাশের বুথ থেকে বেরিয়ে আসবে টিকিট।
স্টেশনে ট্রেন এসে থামার পর ছয় বগির ১২ দরজা খুলে যাবে একসঙ্গে। তবে সব যাত্রীর বগির ভেতর ঢুকে বসার সুযোগ থাকবে না। কেননা স্বাভাবিকভাবে একটি বগিতে থাকবে দুই জোড়া লম্বা চেয়ায়। এতে ২০-২৪ জনের বেশি বসা যাবে না। মেট্রো রেলের বগি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। তাই দাঁড়িয়ে ভ্রমণেও খুব একটা কষ্ট হবে না। থাকবে না প্রচলিত ট্রেনের মতো ঝাঁকুনি। মেট্রো রেল যেহেতু খুব দ্রুত পরের স্টেশনে পৌঁছে যাবে তাই ট্রেনে থাকছে না বাথরুমের ব্যবস্থা। মেট্রো রেলে পানাহার ও ধূমপান নিষেধ করা হয়েছে।
এ ছাড়া যাত্রীদের চলন্ত মেট্রো রেলের দরজা থেকে হাত দূরে রাখতে বলা হচ্ছে। রেলের দরজা বন্ধের সময় দরজা থেকে যাত্রীদের দূরে থাকতে হবে।
জরুরি প্রয়োজনে রেলের ভেতর থেকে যাত্রীদের দরজা খোলার ব্যবস্থাও আছে। সে ক্ষেত্রে দরজার পাশে বাঁয়ে নিচের দিকে থাকা বক্সের বোতাম চেপে ধরে বাঁ দিকে ঘোরাতে হবে। তারপর কাভারটি টেনে খুলতে হবে। কাভার খোলার পর হাতলটি ডানে ঘোরাতে হবে। এরপর ধাক্কা দিয়ে দরজা খুলতে হবে।
মেট্রো রেললাইন-৬-এর পুরোপুরিভাবে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত চালু হওয়ার কথা রয়েছে ২০২৪ সালে। তবে চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত চালু করার কথা চিন্তা করছে সরকার। প্রথম ধাপের এই ১১.৭৩ কিলোমিটার পথে থাকবে ৯টি স্টেশন। এখনো মেট্রোর ভাড়া নির্ধারণ করা হয়নি।