নিজস্ব প্রতিবেদক:
বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর শিল্পঋণের সুদের হার কমাতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এর অংশ হিসেবে একটি তহবিল গঠন করা হবে। এই তহবিল থেকে কম সুদে শিল্প খাতের উদ্যোক্তাদের মেয়াদি ঋণ ও চলতি মূলধনের জোগান দেয়া হবে।
এর আওতায় শিল্প খাতের ঋণের সুদের হারে সিঙ্গেল ডিজিট নিশ্চিত করা হবে। শিল্পঋণ ছাড়া অন্যান্য খাতের ঋণের সুদের হার হবে বাজারভিত্তিক। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। সূত্র জানায়, গঠিততব্য এই বিশেষ তহবিলে অর্থের জোগান দিতে কম সুদে বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক থেকেও ঋণ নেয়া হচ্ছে। সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক একটি প্রকল্পও হাতে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
এই তহবিলে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও অর্থের জোগান দেয়া হবে। সব মিলে একটি ঘূর্ণায়মান তহবিল গঠন করা হবে। এ তহবিল থেকে ভালো উদ্যোক্তাদের দীর্ঘমেয়াদি ও স্বল্পমেয়াদী চলতি মূলধন দেয়া হবে। প্রয়োজনে ক্ষেত্রবিশেষ তাদের ঋণের সিলিংও বাড়ানো হবে। এদিকে সূত্র বলছে, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে এ ধরনের একটি তহবিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আগে থেকে আছে। তবে সেটি খুবই সীমিত আকারে হওয়ায় বর্তমান প্রেক্ষাপটে তা কাজে আসছে না। এ অবস্থায় দেশে বিনিয়োগ ত্বরান্বিত করাসহ শিল্পে বড় ধরনের উত্থান ঘটাতে সরকার এখন এই তহবিলের ওপর সবচেয়ে বেশি জোর দিচ্ছে। এ উদ্দেশ্যে বেসরকারি শিল্পঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনতে ব্যাংকগুলোকে আরও ছাড় দেয়া হবে। এর অংশ হিসেবে উল্লিখিত তহবিলের আওতায় ব্যাংকগুলোকে অর্থের জোগান বাড়ানোসহ অন্যান্য সুবিধার পরিধি বাড়ানো হবে। এজন্য কম সুদে ব্যাংকগুলোয় সরকারি খাতের আমানতের জোগান আরও সহজীকরণ করাসহ এডিপি’র বাইরে থাকা অন্যান্য খাত থেকেও কম সুদে আমানত রাখা হবে।
এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত বলেন, সামগ্রিকভাবে ঋণের সুদের হার কমানোর চেয়ে একটি সুনির্দিষ্ট খাতের সুদের হার কমানো সহজ। শিল্পঋণের সুদের হার কমিয়ে এর সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করলে কর্মসংস্থান বাড়বে। এর দ্বারা অর্থনীতি উপকৃত হবে। এভাবে সুনির্দিষ্ট তহবিল গঠন করলে এ খাতের ঋণের সুদের হার কমে যাবে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র জানায়, নতুন নীতিমালার কারণে জুনের পর খেলাপি ঋণের হার কমতে শুরু করবে। ফলে ব্যাংকগুলোর প্রভিশন খাতে আটকে থাকা অর্থ বাজারে চলে আসবে। এতে তারল্য প্রবাহ বাড়বে। সরকার যেসব বৈদেশিক ঋণ নিচ্ছে, সেগুলো অব্যবহৃত অবস্থায় থাকলে তা-ও ব্যাংকে আমানত হিসেবে রাখা হবে। বাজারে ডলার সংকটের কারণে চলতি অর্থবছরের ১৫ মে পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর কাছে বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে ২২০ কোটি ডলার বিক্রি করেছে।
এর বিপরীতে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছে। এ কারণেও তারল্য সংকট বেড়েছে। এই অর্থও আবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাজারে ছাড়ার উদ্যোগ নিয়েছে। এরই মধ্যে রেমিটেন্সপ্রবাহ বেড়েছে। সেগুলোর বিপরীতে এসব অর্থ ধীরে ধীরে ছাড়া হচ্ছে। এছাড়া ঈদের কারণে ব্যাংকগুলোর চাহিদা মেটাতে আরও প্রায় ৩৪ হাজার কোটি টাকা বাজারে ছাড়া হবে। এতে তারল্য সংকট কমবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, কর্মসংস্থান হয় এমন খাতে ঋণের সুদের হার কমানোর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাজ করছে। তারা আশা করছেন, এর একটা সফল পরিণতি হবে।