ডেস্ক নিউজ
চার মেগা প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ দিকে। এ বছরই জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত হবে পদ্মা সেতু। আগামী অর্থবছর উন্মুক্ত হবে মেট্রোরেল, ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে এবং কর্ণফুলী টানেল। ২০২২-২৩ অর্থবছরের মধ্যেই এসব প্রকল্প জনসাধারণের জন্য খুলে দেয়ার কারণে বরাদ্দও কম লাগছে। এছাড়া এসব প্রকল্পে বড় ধরনের কোনো নির্মাণকাজ নেই। প্রকল্পগুলোর কাজ ঠিকভাবে এগিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় অর্থের জোগান দিতে চায় সরকার। যোগাযোগের এ তিন প্রকল্পসহ আগামী অর্থবছরে বড় অঙ্কের বরাদ্দই পাচ্ছে সরকারের মেগা প্রকল্পগুলো, তবে বেশিরভাগ প্রকল্প বাস্তবায়ন শেষের দিকে থাকায় আগের চেয়ে এসব প্রকল্পে বরাদ্দের চাপ কমছে।
এরই মধ্যে বিভিন্ন প্রকল্পে বরাদ্দের খসড়া চূড়ান্ত করেছে পরিকল্পনা কমিশন। আগামী মঙ্গলবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদে অনুমোদনের জন্য উঠছে নতুন এডিপি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এতে সভাপতিত্ব করার কথা রয়েছে। নতুন এডিপিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাচ্ছে পরিবহন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিদ্যুৎ ও গৃহায়ণ খাত।
ডিসেম্বরের মধ্যে চালু হওয়ার কথা রয়েছে রাজধানীর আগারগাঁও পর্যন্ত মেট্রোরেলের একাংশ। অক্টোবরে চালু হওয়ার কথা কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেল। জুনেই উদ্বোধন হওয়ার কথা রয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। শেষ দিকে থাকা প্রকল্পগুলো যেন অর্থ সঙ্কটে না পড়ে, আবার গুরুত্বপূর্ণ বড় প্রকল্পেও যেন ঠিকমতো কাজ হয়, সে জন্য ২০২২-২৩ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) সেগুলোকে প্রাধান্য দেয়া হচ্ছে।
২০২০-২১ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য ৫ হাজার কোটি এবং মেট্রোরেল প্রকল্পে ৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। ২০২২-২৩ অর্থবছরে পদ্মা সেতু প্রকল্পে ২ হাজার ২০২ কোটি এবং মেট্রোরেল প্রকল্পে ২ হাজার ৮৮২ কোটি টাকা বরাদ্দ চাওয়া হচ্ছে। এসব প্রকল্পে বরাদ্দ কমার ফলে সরকারও কিছুটা চাপ মুক্ত হচ্ছে। ফলে ওই অর্থ এখন অন্য উন্নয়ন প্রকল্পে খরচ করা যাবে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, আগামী অর্থবছরের জন্য দুই লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকার এডিপির খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা এবং করপোরেশনের নিজস্ব অর্থায়ন অন্তর্ভুক্ত করে এটা দাঁড়াবে ২ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি। আগামী ১৭ মে জাতীয় অর্থনেতিক পরিষদে (এনইসি) চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে। এনইসি চেয়ারপারসন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন। এর আগের অর্থবছর (২০২১-২২) এডিপির আকার ছিল ২ লাখ ৩৬ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা। পরে সংশোধন হয়ে (আরএডিপি) এর চূড়ান্ত আকার দাঁড়ায় দুই লাখ সাত হাজার ৫৫০ কোটি টাকা।
পদ্মার ওপর ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটারের মূল সেতুসহ ৯ দশমিক ৮৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সেতুটি দক্ষিণের অর্থনীতিতে সুদিন আনবে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। গত অর্থবছর প্রকল্পে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা। পরে সংশোধনীতে বরাদ্দ কমিয়ে করা হয় ২ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছর পদ্মা সেতু পাচ্ছে ২ হাজার ২০২ কোটি টাকা। ফলে বরাদ্দের চাপ কমছে ২৯৭ কোটি টাকা। প্রকল্পের মোট ব্যয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৮ লাখ ৭৬ হাজার কোটি টাকা। গত এপ্রিল পর্যন্ত মূল সেতুর কাজ শেষ হয়েছে ৯৮ শতাংশের বেশি। পুরো প্রকল্পের কাজ হয়েছে ৯৩ দশমিক ৫০ শতাংশ। জুনে এ সেতু উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। পদ্মা সেতু প্রকল্পের পরিচালক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, পদ্মা সেতুতে শেষ মুহূর্তের কাজ চলছে। সবকিছুই পরিকল্পনা মতো এগোচ্ছে। আগামী জুনকে ঘিরে আমাদের সব প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে, সব কাজও হচ্ছে।
আগামী ডিসেম্বরে চালু হওয়ার কথা রয়েছে দেশের প্রথম মেট্রোরেল। প্রথমে উত্তরা থেকে আগারগাঁও এবং পরে কমলাপুর পর্যন্ত যাবে এ রেল। ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (মেট্রোরেল-৬) আগামী অর্থবছরে ২ হাজার ৮৮২ কোটি টাকা বরাদ্দ পাচ্ছে। চলতি বছরের শুরুতে ৪ চার হাজার ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হলেও আরএডিপিতে বরাদ্দ কমিয়ে ৪ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছিল। ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ের মেট্রোরেলের প্রথম রুট চালু হলে মাত্র ৩৫ মিনিটে উত্তরা থেকে মতিঝিলে পৌঁছানো যাবে।
কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেলের টিউব স্থাপনের কাজ শেষ পর্যায়ে। চট্টগ্রামের দুই অংশকে এক করা এ টানেল আগামী অক্টোবরে উদ্বোধনের কথা রয়েছে। আগামী অর্থবছরে ২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ পাচ্ছে এ প্রকল্প। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে বরাদ্দ ১ হাজার ৩৩৩ কোটি টাকা। ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকার এই টানেল দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কও যুক্ত হবে।
২০২৫ সালের ডিসেম্বরে এর কাজ শেষ করার কথা রয়েছে। আগামী এডিপিতে সবচেয়ে বড় বরাদ্দ ১৩ হাজার ৩৯৫ কোটি টাকা পাচ্ছে এ প্রকল্প। এ প্রকল্পে সর্বশেষ বরাদ্দ ছিল ১৪ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা।
১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকার প্রকল্পটির কাজ জুনে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। আপাতত কক্সবাজার থেকে মিয়ানমার সীমান্ত পর্যন্ত রুট নির্মাণ হচ্ছে না। প্রকল্পের মেয়াদ আরও বাড়তে পারে। নতুন এডিপিতে এটি বরাদ্দ পাচ্ছে ১২০ কোটি টাকা।
দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর নির্মাণকাজ। বঙ্গবন্ধু সেতুর (সড়ক) ৩০০ মিটার উজানে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ডুয়েল গেজ, ডাবল ট্র্যাকের সেতুটি নির্মাণে আগামী বছর বরাদ্দ থাকছে ৩ হাজার ৮৫০ কোটি টাকা।
শুরুতে পায়রায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ হওয়ার কথা থাকলেও তা থেকে সরে এসেছে সরকার। এখন সেখানে শুধু সমুদ্র বন্দর হবে। সেখানে দুটি প্রকল্প চলমান। ৪ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে পায়রা বন্দরের কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও সুবিধাদির উন্নয়ন প্রকল্প। আবার পায়রা সমুদ্র বন্দরের প্রথম টার্মিনাল এবং আনুষঙ্গিক সুবিধা নির্মাণ প্রকল্প ৪ হাজার ৫১৬ কোটি টাকার। আগামী অর্থবছর বরাদ্দ থাকছে যাথাক্রমে ৫১৩ কোটি টাকা ও ২৮৬ কোটি টাকা।
পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (কৃষি, শিল্প ও সমন্বয় উইং) মো. ছায়েদুজ্জামান বলেন, আমরা খসড়া এডিপি করেছি। এটা ১৭ মে এনইসি সভায় উপস্থাপন করবো। সবার মতামত নিয়ে এটা অনুমোদিত হবে। প্রকল্পের চাহিদা ও বাস্তবায়ন গতি দেখেই টাকা বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে।
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, প্রকল্পের কাজ শুরুতে বা মাঝখানে বেশি বরাদ্দ দিতে হয়। তবে ধীরে ধীরে প্রকল্পের কাজ যখন সমাপ্ত হতে থাকে তখন বরাদ্দের চাপও কমতে থাকে। আমরা এই অর্থবছরে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, কর্ণফুলী টানেল খুলে দিতে পারবো। এসব প্রকল্পের কাজ প্রায় শতভাগ সমাপ্ত। টাকা খরচের কোনো জায়গা নেই, স্বাভাবিকভাবেই বরাদ্দ কমছে।###