ডেস্ক নিউজ
পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার রেলপথের কোথাও থাকছে না লেভেল ক্রসিং। মাত্র পৌনে ২ ঘণ্টায় রাজধানী থেকে ট্রেনে পৌঁছানো যাবে যশোরে।
ঢাকা থেকে সড়কপথে পদ্মা সেতু হয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যাতায়াত এখন আর স্বপ্ন নয়। তবে ট্রেনে যাতায়াতের অপেক্ষা এখনও এক বছর।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের (পিবিআরএলপি) কারণে বদলে যাচ্ছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রেল নেটওয়ার্ক। সেতুতে ট্রেন চালু হওয়ার কয়েক বছরের মধ্যেই দক্ষিণ-পশ্চিমের ২১ জেলার মানুষ রেলপথে আসতে পারবেন ঢাকায়।
ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার রেলপথের কোথাও থাকছে না লেভেল ক্রসিং। মাত্র পৌনে ২ ঘণ্টায় রাজধানী থেকে ট্রেনে পৌঁছানো যাবে যশোরে।
রেলপথ মন্ত্রণালয় বলছে, ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রকল্পের কাজ শেষ হবে ২০২৪ সালের জুনে। এতে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় হচ্ছে ১৮ হাজার ২১০ কোটি ১১ লাখ টাকা।
ঋণচুক্তির আওতায় চায়না এক্সিম ব্যাংক বাকি অর্থায়ন করেছে। এই প্রকল্প জিটুজি পদ্ধতিতে বাস্তবায়ন করছে চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড (সিআরইসি)। পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালট্যান্ট (সিএসসি)।
প্রকল্পে ঢাকার মেট্রোরেলের মতো ইলেকট্রিক ট্রেনের প্রযুক্তি থাকছে। ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতির ট্রেন ব্রডগেজ লাইনে ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে পাগলা হয়ে বুড়িগঙ্গা পার হয়ে মাওয়া, পদ্মা সেতু, জাজিরা, ভাঙ্গা, নড়াইল, জামদিয়া হয়ে পদ্মভিলা পর্যন্ত যাবে। এরপর একটি শাখা যশোরের রূপদিয়া স্টেশন এবং অন্যটি খুলনার সিংগিরা স্টেশনে যুক্ত হবে।
জুলাই মাসেই পদ্মা সেতুর নিচতলায় পাথরবিহীন রেললাইন স্থাপন শুরু হওয়ার কথা। পুরো রেলপথের মধ্যে ২৩ দশমিক ৩৮ কিলোমিটার থাকবে উড়াল বা এলিভেটেড। দেশে এটিই হবে প্রথম উড়াল ও লেভেল ক্রসিংবিহীন রেলপথ। এ পথে নতুন ১৪টিসহ ২০টি স্টেশন হচ্ছে নান্দনিক নকশায়। আগামী ডিসেম্বরে মাওয়া-ভাঙ্গা অংশে রেল চলাচল শুরুর টার্গেট রয়েছে কর্তৃপক্ষের।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের পরিচালক মো. আফজাল হোসেন নিউজবাংলাকে বলেন, ‘প্রকল্পটি আমরা তিন অংশে ভাগ করে কাজ করছি। এগুলো হলো ঢাকা- মাওয়া, মাওয়া-ভাঙ্গা আর ভাঙ্গা-যশোর অংশ।
‘বর্তমানে কাজের সার্বিক অগ্রগতি প্রায় ৬০ শতাংশ। আর আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৫৯ শতাংশ। আমাদের প্রকল্পের সবচেয়ে বেশি অগ্রগতি হয়েছে মাওয়া থেকে ভাঙ্গা অংশে। সেখানে অগ্রগতি ৮০ শতাংশ। এ ছাড়া ঢাকা থেকে মাওয়া পর্যন্ত রেলপথের কাজের অগ্রগতি ৬০ দশমিক ৪ শতাংশ। ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত অগ্রগতি পর্যন্ত ৪৯ দশমিক ৫ শতাংশ।’
প্রকল্প পরিচালক আরও বলেন, ‘নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করার জন্য দেশি-বিদেশি প্রায় পাঁচ হাজার শ্রমিক দিন-রাত কাজ করছেন। এর মধ্যে বিদেশি শ্রমিক আছেন প্রায় এক হাজার। এই প্রকল্পের নড়াইল জেলায় ভূমি অধিগ্রহণে একটু সমস্যা হওয়ায় ওই এলাকায় কাজ কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে। আশা করছি, সেখানেও কাজের গতি আসবে।’
আফজাল হোসেন বলেন, ‘আমরা ধারণা করছি জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে সেতু বিভাগ আমাদের হাতে পদ্মা সেতু হস্তান্তর করবে। এর সঙ্গে সঙ্গে আমরা মূল সেতুতে রেললাইন স্থাপনের কাজ শুরু করে দেব। প্রকল্পের কাজ সম্পূর্ণরূপে শেষ হলে এই রেলপথে ঢাকা থেকে যশোরের দূরত্ব কমবে ১৯০ কিলোমিটার। যেতে সময় লাগবে মাত্র পৌনে ২ ঘণ্টা।’