ডেস্ক নিউজ
আইএমএফ বলেছে, পার্শ্ববর্তী দেশসহ অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশের ঋণের পরিমাণ জিডিপির চেয়ে অনেক কম। ফলে বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে নিরাপদেই আছে। রিজার্ভও মোটামুটি ভালো অবস্থানে আছে। সরকারের ঋণ ব্যবস্থাপনার প্রশংসা করেছে আইএমএফ।
বাংলাদেশের ঋণের পরিমাণ মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় নিরাপদ ও সন্তোষজনক অবস্থানে রয়েছে বলে জানিয়েছে আইএমএফ।
সোমবার সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে এ কথা জানিয়েছে সফররত আইএমএফ প্রতিনিধি দল। সরকারের ‘ঋণ ব্যবস্থাপনা’ নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়। এ সময় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে কথা বলেন তারা।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ নিয়েও সন্তুষ্ট আইএমএফ। রিজার্ভ এখন ৪০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, রিজার্ভ বাড়াতে নানামুখী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এর ফলে আশা করা যাচ্ছে অচিরেই এটি আরও বাড়বে।
বাংলাদেশের অর্থনীতির বর্তমান পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে গত বৃহস্পতিবার আইএমএফের স্টাফ মিশন ঢাকায় আসে। রোববার থেকে শুরু হয়েছে সরকারের সঙ্গে সিরিজ মিটিং, যা আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চলবে। স্টাফ মিশনের মূল্যায়নের ওপর ভিত্তি করে আগামীতে আইএমএফের কাছ থেকে বড় অঙ্কের ঋণ মিলবে।
আইএমএফ প্রতিনধি দল সোমবার তিনটি বৈঠক করে। এর মধ্যে দুটি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সঙ্গে। আরেকটি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে।
বিকেলে এনবিআরের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে রাজস্ব আহরণ বাড়াতে ভবিষ্যতে অ্যাকশন প্ল্যান বা কর্মপরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চেয়েছে আইএমএফ। পাশাপাশি কর-জিডিপি অনুপাত বাড়ার লক্ষ্যে অব্যাহতি সুবিধা আরও কমাতে বলেছে আইএমএফ।
বর্তমানে বাংলাদেশে জিডিপির তুলনায় কর অনুপাত মাত্র ১০ দশমিক ৮ শতাংশ, যা সারা বিশ্বে সবচেয়ে কম। আইএমএফ এটাকে কমপক্ষে ১৫ শতাংশে উন্নীত করার কথা বলেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তারা (আইএমএফ দল) আমাদের কাছে বিভিন্ন তথ্য জানতে চেয়েছে। আমরা তা সরবরাহ করেছি। আইএমএফ বলেছে, পার্শ্ববর্তী দেশসহ অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশের ঋণের পরিমাণ জিডিপির চেয়ে অনেক কম। ফলে বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে নিরাপদেই আছে। রিজার্ভও মোটামুটি ভালো অবস্থানে আছে। সরকারের ঋণ ব্যবস্থাপনার প্রশংসা করেছে আইএমএফ।’
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সরকারের ঋণের পরিমাণ (দেশি-বিদেশি মিলে) এখন জিডিপির ৪১ শতাংশ। এর মধ্যে বিদেশি ঋণের অংশ ১৭ শতাংশ। বাকি অংশ দেশি ঋণ।
২০২০-২১ অর্থবছরে সরকারের মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ১৪৭ বিলিয়ন ডলার বা প্রায় ১৩ লাখ কোটি টাকা। এই ঋণের ৫৮ শতাংশ অভ্যন্তরীণ। বাকি অংশ বিদেশি উৎস থেকে নেয়া।
বর্তমানে শ্রীলঙ্কার ঋণ-জিডিপির অনুপাত ১০০ শতাংশের বেশি। দেশটির বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শূন্যের কোঠায়। পাকিস্তানে ঋণ-জিডিপি অনুপাত ৮৮ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। আর রিজার্ভ কমে দাঁড়িয়েছে ৮ বিলিয়ন ডলারে। মালদ্বীপে ঋণের পরিমাণ জিডিপির ১০০ শতাংশ।
ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশের ঋণও তাদের জিডিপির চেয়ে বেশি। অবশ্য তাদের এই ঋণসংকট মোকাবিলা করার মতো সামর্থ্য আছে। আফ্রিকার অনেক দেশের ঋণ-জিডিপি ৭০ শতাংশের ওপরে।
কাজেই এই তথ্য বলে দিচ্ছে ওই সব দেশের তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থান অনেক বেশি দৃঢ় ও স্থিতিশীল।
আইএমএফের সাবেক কর্মকর্তা ও গবেষণা সংস্থা পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘সরকারের ঋণ-জিডিপি অনুপাত এখনও বেশি নয়। জিডিপির আকার বিবেচনায় নিলে সরকারের ঋণ নেয়ার যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে। কিন্তু সমস্যা হলো রাজস্ব আহরণ খুবই কম। রাজস্ব আদায় বাড়াতে না পারলে ঋণ পরিশোধ ক্ষমতা কমে যাবে।’