ডেস্ক নিউজ
প্রথম-দ্বিতীয় গ্রেডে পদোন্নতির সম্মতি সচিব কমিটির
মাউশিকে তালিকা পাঠাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ
বৈষম্য নিরসনের উদ্যোগে খুশি শিক্ষা ক্যাডাররা
দীর্ঘদিনের দাবি বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারে। তৃতীয় গ্রেডের পর এবার তাদের দ্বিতীয় গ্রেডে পদোন্নতি দেওয়ার প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) সম্মতি পাওয়া গেছে। পদোন্নতির জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে তালিকা চাওয়া হয়েছে। এ তালিকা তৈরির কাজ শুরু করেছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি)। সংশ্লিষ্ট মাধ্যমে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
মাউশি সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে বিভিন্ন অধিদপ্তর-সংস্থায় শিক্ষা ক্যাডারে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় গ্রেডের পদ থাকলেও সেখানে তারা পদোন্নতি পান না। এ কারণে এসব পদে কর্মকর্তাদের চলতি দায়িত্বে বসানো হয়। গত জুনের শেষ দিকে শিক্ষা ক্যাডারের ১০৪ জন অধ্যাপক পর্যায়ের কর্মকর্তাকে অষ্টম বেতন স্কেলের তৃতীয় গ্রেডে ‘সিলেকশন গ্রেড’ দিয়েছে সরকার। শিক্ষকদের দীর্ঘ আন্দোলনের পর নতুন বেতন কাঠামোয় এই প্রথম ক্যাডারভুক্ত অধ্যাপকদের তৃতীয় গ্রেড দেওয়া হয়।
জানা গেছে, এসএসবি বোর্ড সম্মতি দেওয়ায় শিক্ষা ক্যাডারে দ্বিতীয় গ্রেডে পদোন্নতির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। পদোন্নতির জন্য জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের তালিকা পাঠাতে বলা হয়েছে। বর্তমানে মাউশিতে তালিকা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। তালিকা তৈরির পর তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সেটি বোর্ডের অনুমোদন হওয়ার পর তা অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুমোদন হওয়ায় পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে পদোন্নতি পাওয়া শিক্ষক-কর্মকর্তাদের তালিকা প্রকাশ করা হবে।
জানতে চাইলে মাউশির মহাপরিচালক (চলতি দায়িত্ব) অধ্যাপক শাহেদুল খবির চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডারে দীর্ঘদিনের আন্দোলন ও প্রত্যাশার পরিপ্রেক্ষিতে ১০৪ শিক্ষক-কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিজি) গ্রেড-২ পদমর্যাদায় তিনটি পদ অনুমোদনের বিষয়টি সচিব কমিটিতে অপেক্ষমাণ। তৃতীয় গ্রেড যেভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, একইভাবে এসব পদেরও অনুমোদন দেওয়া হবে।’
তিনি বলেন, ‘সারাদেশে এক হাজার ৭০ জন অধ্যাপকের মধ্যে মাত্র ১০৪ জনকে তৃতীয় গ্রেডে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এতে নতুন বৈষম্য তৈরি হয়েছে। আমাদের দাবি ছিল, সব অধ্যাপককে তৃতীয় গ্রেড দেওয়া। সেটা বাস্তবায়ন করা হয়নি। ২০১৬ সালে অষ্টম পে-স্কেল ঘোষণার পর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে অর্থমন্ত্রী ও মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে দুটি আলাদা কমিটি গঠন করা হয়। তারা মোট অধ্যাপকের অর্ধেককে তৃতীয় গ্রেডে পদোন্নতি দেওয়ার সুপারিশ করেন। ওই সময় সারাদেশে ৮৫০ জন অধ্যাপকের মধ্যে ৪০০-এর বেশি অধ্যাপককে তৃতীয় গ্রেডে নেওয়ার কথা থাকলেও তা করা হয়নি।’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ মাউশি ও নায়েমের মহাপরিচালক পদটি প্রথম গ্রেডের হলেও তারা চতুর্থ গ্রেডে থাকায় চলতি দায়িত্বে মহাপরিচালকদের বসানো হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানে পরিচালক, সব শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দ্বিতীয় গ্রেডের পদ থাকলেও তারা চতুর্থ গ্রেড পাচ্ছেন। সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধানও একই গ্রেড পেয়ে থাকেন। অথচ তৃতীয় গ্রেড যাদের দেওয়া হয়েছে, তারা এসব প্রতিষ্ঠানের অধীনস্থ। বর্তমানে পরিচালক পদে বসা কর্মকর্তারা মর্যাদায় তাদের নিচে চলে যাওয়ায় বড় ধরনের বৈষম্য তৈরি হয়েছে।
শিক্ষা ক্যাডারে সারাদেশে ১৬ হাজার সদস্য রয়েছে। আগে চতুর্থ গ্রেডের ওপরে পদোন্নতি না থাকায় শিক্ষক-কর্মকর্তারা উচ্চতর স্কেল পেয়ে কেউ কেউ পঞ্চম গ্রেডে, আবার কেউ ৬-১০ বছরের মধ্যে পে-স্কেলের বিশেষ সুবিধায় চতুর্থ গ্রেডের সুবিধা পাচ্ছেন। তাদের মধ্যেও বড় ধরনের বৈষম্য রয়েছে। শিক্ষা ক্যাডারে পদ থাকলেও পদোন্নতি না থাকায় ওপরের পদে চলতি দায়িত্বে বসানো হচ্ছে।
বিসিএস (সাধারণ শিক্ষা) ক্যাডার সমিতির সভাপতি ও মাউশির মহাপরিচালক শাহেদুল খবির বলেন, ‘পদোন্নতি না থাকায় দীর্ঘদিন শিক্ষা ক্যাডারদের মধ্যে বড় ধরনের বৈষম্য তৈরি হয়েছে। সেটি নিরসনে সব অধ্যাপককে তৃতীয় গ্রেডে পদোন্নতি দিতে হবে। প্রথম ও দ্বিতীয় গ্রেডের পদ বাড়াতে হবে। এ ক্যাডারে পদোন্নতি দ্বার খোলায় প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবাইকে সাধুবাদ জানাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘সারাদেশে সরকারি কলেজে শিক্ষক সংকট ও বৈষম্য নিরসনে সাড়ে ১২ হাজার নতুন পদসৃজনের বিষয়টি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালায়ে প্রক্রিয়াধীন। সেটি দ্রুত অনুমোদন দিয়ে শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতি দিতে হবে। যোগদানের পর নবম গ্রেডের শিক্ষকরা বিভাগীয় পরীক্ষায় পাস, সন্তোষজনক চাকরি, সিনিয়র স্কেল পাওয়ার পর পরবর্তী পাঁচ বছর পর ষষ্ঠ গ্রেডে যাওয়ার বিধান থাকলেও সেটি মানা হচ্ছে না। এ পদ্ধতি অনুসরণ করলে শিক্ষা ক্যাডারে সব বৈষম্যদূরীকরণ সম্ভব হবে।’
শিক্ষা ক্যাডারে দীর্ঘদিনের বৈষম্য নিরসনে কাজ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব (মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা) মো. আবু বকর ছিদ্দীকও।
তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘সচিব কমিটিতে অনুমোদন হওয়ায় তৃতীয় গ্রেডে ১০৪ জন শিক্ষক-কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। তারা দ্বিতীয় ও প্রথম গ্রেডে পদোন্নতি দেওয়ার জন্যও সম্মতি জানিয়েছেন। আপাতত দ্বিতীয় গ্রেডের জন্য আমাদের কাছে তালিকা চাওয়া হয়েছে। মাউশিকে তালিকা পাঠাতে বলা হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে শিক্ষা ক্যাডারে দ্বিতীয় গ্রেডে পদোন্নতি দেওয়া হবে।’