ডেস্ক নিউজ
কেবল পচনশীল পণ্য ও ওষুধের দোকান ছাড়া গত সোমবার থেকে সারা দেশে সব ধরনের দোকানপাট রাত ৮টার পর বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে সরকার। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় দেশে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য পরবর্তী নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত এ সিদ্ধান্ত বলবৎ থাকবে। রাত ৮টার পর দোকান-শপিং মল খোলা থাকলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হচ্ছে। সরকারের এ সিদ্ধান্ত কঠোরভাবে মনিটর করা হচ্ছে বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে। তিন দিন ধরে রাজধানীসহ সারা দেশে অভিযান পরিচালনা করছে ডিপিডিসি, ডেসকো, আরইবি, নেসকোসহ অন্যান্য বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানিগুলো। ঢাকায় রাত ৮টায় দোকানপাট বন্ধ হওয়ায় মঙ্গলবার ৫০০, বুধবার ৫০০ এবং গ্রাহকপর্যায়ে ১০০ মেগাওয়াটসহ মোট ১ হাজার ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়েছে বলে জানিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। অফিস সময় না কমানোর ইঙ্গিত দিয়ে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, বিদ্যুৎ সাশ্রয় করে পুরো সময় অফিস করতে পারলে অফিসের সময় কমানোর দরকার নেই। বিষয়টি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। গতকাল সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন। বিশ্বব্যাপী জ্বালানির অব্যাহত মূল্য বৃদ্ধিজনিত বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের লক্ষ্যে সারা দেশে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং চলছে। এ লোডশেডিংয়ের বিষয়ে বিতরণ সংস্থা বা কোম্পানিগুলো সংশ্লিষ্ট এলাকার গ্রাহকদের এসএমএসের মাধ্যমে অবহিত করার নির্দেশ দিয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ। নির্দেশনায় বলা হয়, দুটি এসএমএসের মাধ্যমে লোডশেডিংয়ের বিষয়টি গ্রাহকদের অবহিত করতে হবে। এসএমএস দুটি হলো- ১. লোডশেডিং এবং নির্দিষ্ট এলাকার লোডশেডের জন্য দুঃখিত। ২. নির্দিষ্ট সময়সূচির বাইরে কোনো লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কথা যাতে ভোক্তারা জানতে পারেন, সে কারণে হটলাইন, কমপ্লেইন সেন্টার এবং সংশ্লিষ্ট ডিউটি অফিসারের নম্বরে যোগাযোগের পরামর্শ দেওয়া হলো। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের লক্ষ্যে সারা দেশে রাত ৮টার পর দোকান, শপিং মল, মার্কেট ও কাঁচাবাজার বন্ধ রাখার বিষয়টি কঠোরভাবে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। গত ১৬ জুন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এ বিষয়ে শ্রম আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিবকে চিঠি দেয়। এতে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী জ্বালানির অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধিজনিত বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দিয়েছেন। এ লক্ষ্যে বাংলাদেশ শ্রম আইন-২০০৬-এর ১১৪ ধারার বিধান কঠোরভাবে প্রতিপালন করে সারা দেশে রাত ৮টার পর দোকান, শপিং মল, মার্কেট, বিপণিবিতান, কাঁচাবাজার ইত্যাদি খোলা না রাখার বিষয়টি যথাযথভাবে নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয়। এ বিষয়ে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর ও স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে এটি বাস্তবায়ন করতে সংশ্লিষ্টদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছে। এ ছাড়া এফবিসিসিআই, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতিসহ ব্যবসায়ীদের সঙ্গেও বৈঠক করে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন গতকাল রাতে মোবাইল ফোনে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সারা পৃথিবী সংকটপূর্ণ মুহূর্ত অতিক্রম করছে। সে ক্ষেত্রে রাত ৮টায় বন্ধ করলে সরকার যদি মনে করে কোথাও সাশ্রয় হবে, তাহলে আমাদের খুব বেশি আপত্তি নেই।’ গত ১৯ জুলাই বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক পোস্টের মাধ্যমে বলেন, ‘রাত ৮টার পর দোকানপাট, শপিং মল খোলা থাকলে তাদের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে। সরকারের এ সিদ্ধান্ত কঠোরভাবে মনিটর করা হবে বিদ্যুৎ বিভাগের পক্ষ থেকে। সোমবার রাত থেকেই এ অভিযান শুরু করেছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড। ওইদিন রাতে বায়তুল মোকাররম, দৈনিক বাংলা, পল্টন, ফকিরাপুলসহ কিছু এলাকায় অভিযান পরিচালিত করে ডিপিডিসির টিম। তারা প্রথমে মাইকে লাইট বন্ধ করার অনুরোধ করেন। এরপরও যারা বন্ধ করেনি তাদের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়। এ সতর্কবার্তা সবার জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। সবার প্রতি অনুরোধ আমাদের কাজে সহযোগিতা করুন