ডেস্ক নিউজ
বাংলাবান্ধা দেশের একমাত্র স্থলবন্দর, যার সঙ্গে তিন দেশের যোগসূত্র আছে। ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে পণ্য আমদানি-রফতানিতে বিপুল সম্ভাবনা জাগিয়েছে এই বন্দর। ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ তো বটেই, সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সম্ভাবনা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ। কার্যক্রম গতিশীল করতে বন্দরকে ডিজিটালাইজড করার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে।
১৯৯৭ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের প্রচেষ্টায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য উন্মুক্ত হয় উত্তরের এই দ্বার। এই বন্দর বাড়িয়েছে পর্যটন সম্ভাবনাও। এশিয়ান হাইওয়েতে সংযুক্তির কারণে এর গুরুত্ব আরও বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কর্তৃপক্ষ জানায়, গত অর্থবছরে এই বন্দর ব্যবহার করে আমদানি হয়েছে ১৬ লাখ ৫৫ হাজার ৭২৬ মেট্রিক টন পণ্য। যার মূল্য প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। ওই সময়ে রফতানি হয়েছে প্রায় ৯২৭ কোটি টাকার পণ্য।
২০১৯-২০ অর্থবছরে এ বন্দরে ২১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হলেও পরের অর্থবছরে আসে ৬৩ কোটি টাকারও বেশি রাজস্ব। ২০২১-২২ অর্থবছরে আসে ৪১ কোটি ৬৪ লাখ টাকা রাজস্ব।
চতুর্দেশীয় বাণিজ্য বাড়াচ্ছে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর
বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেতুলিয়া উপজেলায় বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের জিরো পয়েন্ট এলাকায় অবস্থিত বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর। মহানন্দা নদীর তীর ও ভারত সীমান্ত সংলগ্ন সাড়ে ১০ একর জায়গাজুড়ে আছে বন্দরটি।
১৯৯৭ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্যোগে নেপালের সঙ্গে বাংলাদেশের আমদানি-রফতানি চালুর মধ্যে দিয়ে শুরু হয় এই অঞ্চলের বাণিজ্য। সেসময় শিল্পমন্ত্রী তোফায়েল আহম্মদ এবং নেপাল সরকারের কৃষিমন্ত্রী চক্র প্রসাদ বাসতুলা বাংলাবান্ধা বন্দরে বাংলাদেশ-নেপাল দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের উদ্বোধন করেন।
২০১১ সালের ২২ জানুয়ারি বাংলাবান্ধায় আওয়ামী লীগ সরকারের তৎকালীন কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী এবং ভারতের তৎকালীন অর্থমন্ত্রী ও সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জী দ্বিপক্ষীয় চুক্তির আলোকে পণ্যবাহী ট্রাক চলাচলের উদ্বোধন করেন।
এরই ধারাবাহিকতায় ভুটানের সঙ্গে আমদানি-রফতানি শুরু হয় ২০১৭ সালের ১ জানুয়ারি। আর পর্যটন সম্ভাবনা বেগবান করতে ভারতের সঙ্গে ইমিগ্রেশন চালু হয় ২০১৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি।
চতুর্দেশীয় বাণিজ্য বাড়াচ্ছে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর
২০১১ সালে ভারতের সঙ্গে চালু হওয়া দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের আওতায় পুরনো একটি এসআরও-এর মাধ্যমে ভারত থেকে শুধু বোল্ডার পাথর আমদানি শুরু হয়। এই বন্দর দিয়ে ভারতে টাঙ্গাইলের শাড়ি, ফার্নিচার, কোমল পানীয়, চানাচুরসহ বেশ কিছু পণ্য ইতোমধ্যে রফতানি হয়েছে।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে ইমিগ্রেশন চালুর পর বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক ভারতগামী রোগী, পর্যটক, ব্যবসায়ীরাও উপকৃত হচ্ছেন। অন্যদিকে নেপাল, ভুটান, দার্জিলিং, গ্যাংটক ও ডুয়ার্স ভ্রমণকারীরা অনায়াসে বাংলাবান্ধা ইমিগ্রেশন ব্যবহার করে আসতে পারছেন বাংলাদেশে।
এ বন্দর দিয়ে বাংলাদেশে উৎপাদিত পাটজাত পণ্য, ব্যাটারি, সাবান, বিস্কুট, চানাচুর, জুস, কাচ, ওষুধ, মোটরসাইকেলসহ বিভিন্ন দ্রব্য নেপালে রফতানি হচ্ছে। আর নেপাল থেকে মসুর ডালসহ অল্প কিছু পণ্য আমদানি হচ্ছে দেশে।
এছাড়া চার দেশের মধ্যে পাথর, ডাল, গম, ভুট্টা, চিরতা, যন্ত্রপাতি, প্লাস্টিক দানা, রেলওয়ের স্লিপার, অয়েলকেক, রেপসিড ও আদা আমদানি-রফতানি হচ্ছে।
কার্যক্রম ব্যবস্থাপনায় ২৫ বছরের জন্য স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ বিল্ড ট্রেড অপারেট অ্যান্ড ট্রান্সফারের ভিত্তিতে বেসরকারি পোর্ট অপারেটর হিসেবে বাংলাবান্ধা ল্যান্ড পোর্ট লিমিটেডকে নিযুক্ত করেছে।
প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজার ও পোর্ট ইনচার্জ আবুল কালাম আজাদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ পোর্ট। এর মাধ্যমে চার দেশের বাণিজ্য হচ্ছে। এই বন্দরের সম্ভাবনা সুদূরপ্রসারী। এখানে যা আমদানি হয় তার ৭০ ভাগই পাথর। প্রতিবছরই বাড়ছে আমদানি-রফতানি।
তিনি আরও বলেন, আমাদের এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে স্থান-সংকট দূর করতে হবে। সাড়ে ১০ একরে সংকুলন হচ্ছে না। তবে আশার কথা হলো বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে এখানে আরও সাড়ে ১৬ একর জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া চলমান আছে।
বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর আমদানি-রফতানিকারকদের সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কুদরত ই খুদা বলেন, এই বন্দরে আমদানি-রফতানি বাড়ায় সরকারও রাজস্ব পাচ্ছে বেশি। হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। পঞ্চগড়ের মানুষও বাংলাবান্ধা দিয়ে ব্যবসা করে অর্থনৈতিকভাবে চাঙ্গা হয়েছে।
পঞ্চগড়ের জেলা প্রশাসক মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, এই বন্দরের কারণে প্রায় ৪০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। এছাড়া এশিয়ান হাইওয়ে ২— যেটা সিঙ্গাপুর থেকে শুরু হয়েছে, সেটা মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়া-থাইল্যান্ড-মিয়ানমার হয়ে আমাদের দেশের ভেতর দিয়ে ভারত হয়ে ইরান পর্যন্ত এশিয়ান হাইওয়ে ১-এ যুক্ত হবে।