ডেস্ক নিউজ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুধু প্রবাস আয়ের ওপর নির্ভর না করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের জন্য রপ্তানির ওপরও গুরুত্বারোপ করেছেন। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বিষয়ে নানা রকম মন্তব্য ও গুজবের বিষয়ে তিনি বলেন, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ একটু কম-বেশি হবেই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মনে করি, আমাদের তিন মাসের খাদ্য কেনার যে রিজার্ভ, সেটা থাকলেই যথেষ্ট। তবে ভোগ্য পণ্য এবং খাদ্যপণ্যে পরনির্ভরশীলতা কমাতে হবে, নিজের দেশে উৎপাদন বাড়াতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সেন্টেনিয়াল কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র’ ও বিভিন্ন উপজেলায় নির্মিত ২৪টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের ক্ষেত্রে শুধু প্রবাস আয়ের ওপর নির্ভরশীল নয়, রপ্তানিনির্ভর বিদেশি মুদ্রা অর্জনের দিকে আরো বেশি মনোযোগ দিতে হবে। ’ প্রধানমন্ত্রী পণ্যের বহুমুখীকরণের মাধ্যমে দেশের রপ্তানি বাস্কেটকে আরো সমৃদ্ধ করতে এবং বিদেশে নতুন বাজার খুঁজে বের করতে সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানান।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনাভাইরাস মোকাবেলা করতে হয়েছে আমাদের, তারই সঙ্গে শুরু হয়েছে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ। ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে মন্দা দেখা দিচ্ছে। ’ তিনি বলেন, ‘এই যুদ্ধ অর্থহীন। কারণ আমরা দেখতে পাচ্ছি, এই যুদ্ধ শুধু যারা অস্ত্র তৈরি করে তারাই লাভবান হচ্ছে, আর সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্ন হচ্ছে। ’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই যুদ্ধ শুধু যুদ্ধই না, তার সঙ্গে আবার নিষেধাজ্ঞা। এই নিষেধাজ্ঞা-পাল্টানিষেধাজ্ঞার ফলে আজ সারা বিশ্ব অর্থনৈতিক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। ’ তিনি আরো বলেন, ‘উন্নত দেশগুলো হিমশিম খাচ্ছে এবং তারা এখন বিদ্যুৎ-জ্বালানি সাশ্রয়, খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত এবং সে কারণে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিচ্ছে।
সেখানে আমাদের মতো দেশ, কেবল আমরা উন্নয়নের পথে যাত্রা শুরু করেছি। আমরা একটা লক্ষ্যে পৌঁছানোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আপ্রাণভাবে, আর তখনই এ ধরনের বাধা আমাদের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক। ’
আমাদের থেমে থাকলে চলবে না উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জ্বালানি সাশ্রয়ের ব্যাপারে সব দেশই কিন্তু নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। আমরাও সেটা অনুসরণ করছি। ’ তিনি বলেন, ‘আমাদের দরকার হচ্ছে একটা দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা। কেননা আমাদের যুবসমাজ রয়েছে। এক্ষেত্রে আমাদের বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে এবং আমরা তা নিচ্ছি। ’
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন। প্রবাসী কল্যাণ সচিব আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন এবং বিএমইটির মহাপরিচালক মো. শহিদুল আলম অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানে নবনির্মিত টিটিসিগুলোর ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
বিদেশে দক্ষ কর্মী পাঠাতে প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে আরো দক্ষতা সংযোজনের পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যানবাহন চালক হিসেবে যে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, তার সঙ্গে ভারী যানবাহন চালনার বিষয়টিও যুক্ত করতে হবে। এতে করে আরো ব্যাপক কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা সম্ভব হবে বলেও আমি মনে করি। ’ তিনি গৃহকর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে বিদেশে গমনেচ্ছুরা যেন সঠিকভাবে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে তা নিশ্চিত করার জন্যও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেন।
প্রধানমন্ত্রী বিদেশে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে সব মন্ত্রণালয়কে একযোগে কাজ করার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন। প্রয়োজনে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তিনি বিদেশে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এখানে বিনা জামানতেও ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে উপজেলা পর্যায়ে ৪০টি টিটিসি ও একটি আইএমটি স্থাপিত হলে মোট ১০৪টি টিটিসি এবং সাতটি আইএমটিতে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালিত হবে এবং মোট প্রশিক্ষণ প্রদানের সক্ষমতা বছরে ৯ লাখে উন্নীত হবে। তা ছাড়া সরকারের প্রায় ২৩টি মন্ত্রণালয় থেকেই কোনো না কোনোভাবে জনশক্তি প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে বলেও তিনি জানান। তা ছাড়া সশস্ত্র বাহিনী এবং পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা যে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে তারাও রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে। এটাকেও মূল রেমিট্যান্সের সঙ্গে সম্পৃক্ত করার পরামর্শ দেন তিনি।
২৪টি টিটিসি যেসব উপজেলায় হচ্ছে সেগুলো হলো : গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সেন্টেনিয়াল টিটিসি, রংপুরের পীরগঞ্জ ও গঙ্গাচড়া কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, পাবনার সুজানগর, নরসিংদীর মনোহরদী, সিরাজগঞ্জ সদর ও কামারখন্দ, মুন্সীগঞ্জ সদর, দিনাজপুরের খানসামা, ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা ও নগরকান্দা, খুলনার দিঘলিয়া, ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, যশোরের কেশবপুর, চট্টগ্রামের রাউজান ও সন্দ্বীপ, কুমিল্লার নাঙ্গলকোট ও চৌদ্দগ্রাম, গাজীপুরের কাপাসিয়া, শেরপুর সদর, টাঙ্গাইলের কালিহাতী ও নাগরপুর, লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা ও কিশোরগঞ্জের মিঠামইন উপজেলায়। সূত্র : বাসস