ডেস্ক নিউজ
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘সংবিধান লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে ক্ষমতায় আসা সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া দল বিএনপির নেতাকর্মীদের মুখে এখন নির্বাচন নিয়ে নীতি কথা শুনতে হচ্ছে। নির্বাচন নিয়ে তারা কথা বলে কোন মুখে? কারণ নির্বাচনের মাধ্যমে তো তাদের ক্ষমতায় আসা না। অবৈধভাবে আসা অথবা দেশ বিক্রির মুচলেকা দিয়ে আসা। এই তো?’
সোমবার সকালে শোকাবহ আগস্টের প্রথম দিনে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে কৃষক লীগ আয়োজিত স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি। গণভবন থেকে রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরসংলগ্ন এলাকার অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী।
বিএনপির আমলে দেশের মানুষের ভোট দেওয়ার ‘অধিকারটাই ছিল না’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘দুর্ভাগ্য হলো, একটা মিলিটারি ডিক্টেটর অবৈধভাবে সংবিধান লঙ্ঘন করে ক্ষমতায় থেকে যে দল গঠন করেছিল ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে, তাদের কাছে এখন নানারকম নীতির কথা শুনতে হয়। যারা এই বাংলাদেশটাকে বানিয়েছিল অস্ত্র চোরাকারবারির একটা জয়গা, সন্ত্রাসীর দেশ, জঙ্গিবাদের দেশ, বাংলা ভাই সৃষ্টির দেশ।’
২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াত জোটের জয়ের প্রসঙ্গ ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেই নির্বাচন কি নির্বাচন হয়েছিল? সেখানে কি কোনো মানুষ ভোট দিতে যেতে পেরেছে? সমস্ত বাংলাদেশে আর্মি ডিপস্নয় করা হয়েছে। সেখানে কি সিল মারা বলে? এরা তো প্রকাশ্যে সিল মারত।’
১৯৯৪ সালের মাগুরা-২ আসনের উপ-নির্বাচন এবং অন্য ‘বিতর্কিত’ নির্বাচনগুলোর উদাহরণ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এসব নির্বাচন তো মানুষের চোখে দেখা। কোনো মানুষ তো ভোট দিতে পারেনি। ভোট দেওয়ার অধিকারটাই মানুষের ছিল না বিএনপির আমলে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদু্যৎ ও জ্বালানি সংরক্ষণে সরকারের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে হারিকেন নিয়ে আন্দোলন করায় বিএনপি নেতাদের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘আমি দেখেছি আমাদের
বিএনপি নেতারা হারিকেন নিয়ে আন্দোলন করছে। তো তাদের হাতে হারিকেনই ধরিয়ে দিতে হবে, তাদের সবার হাতে হারিকেন ধরিয়ে দেন। আর দেশের মানুষকে আমরা নিরাপত্তা দেব এবং দেশের মানুষ যাতে ভালো থাকে, সেই ব্যবস্থা নেব।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের কথা ছিল প্রতিটি ঘরে বিদু্যৎ পৌঁছে দেওয়ার। আমরা দিয়েছি। আজকে বিদু্যৎ ও জ্বালানি সাশ্রয়ে বিশ্বের প্রতিটি দেশই আমেরিকা হোক, ইংল্যান্ড হোক বা আমাদের প্রতিবেশী ভারত হোক সবার দিকে নজর দিয়েছে। এ বিষয়টি সবার মাথায় রাখতে হবে। যখন উন্নত দেশগুলো হিমশিম খায়, তখন আমরা আগাম ব্যবস্থা নিয়েছি যেন ভবিষ্যতে কোনো বিপদে না পড়ি, সাশ্রয়ী হয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, সাশ্রয়ী হওয়ার অর্থ এই নয় যে এখান থেকে লুটপাট করে খেয়েছি। লুটপাট তো বিএনপিই করে গেছে। আমরা সেই লুটপাট বন্ধ করে উন্নতি করেছি, নইলে কীভাবে মাত্র ৩ বা সাড়ে ৩ হাজার মেগাওয়াট থেকে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদু্যৎ উৎপাদনে সক্ষমতা আজকে অর্জন করেছি।
প্রধানমন্ত্রী করোনাভাইরাস এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বিশ্বমন্দার খন্ডচিত্র তুলে ধরে বলেন, ‘কেবল বাংলাদেশ নয় সমগ্র বিশ্বেই এমনকি অনেক উন্নত দেশে অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। আমেরিকার মতো জায়গায় যেখানে ১ শতাংশ মুদ্রাস্ফীতি ছিল, সেটা ৯ দশমিক ১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, ইংল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডসে ৯ দশমিক ৪ শতাংশ, জার্মানিসহ ইউরোপের বহু দেশে ৮ দশমিক ৯ শতাংশ এবং উন্নত দেশগুলো হিমশিম খাচ্ছে। সেখানে বাংলাদেশে আমরা ৭ দশমিক ৫ শতাংশে আমাদের মুদ্রাস্ফীতি ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছি।’
বিএনপির শাসনামলের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘দেশকে খাদ্য ঘাটতিতে রেখে মানুষকে ভিক্ষুক জাতি হিসেবে বিশ্বে পরিচয় করানো এবং ভিক্ষা চেয়ে নিয়ে আস। এই খাদ্য কিনবে, ব্যবসা করবে এবং কমিশন খাবে এটাই ছিল বিএনপির নীতি।’
বিএনপির সময়ে ১০ ট্রাক অস্ত্র উদ্ধারের প্রসঙ্গ ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটা তো বিএনপির এক নেতারই বক্তব্যে আছে। গোয়েন্দা সংস্থা দিয়ে এই সমস্ত কাজ করানো হতো। সেই ১০ ট্রাক অস্ত্র ধরা পড়েছে। একটা চালান ধরা পড়েছে। এই রকম কত চালান এই দেশে এসেছে আর গিয়েছে।’
সে সময় দেশকে সম্পূর্ণ ‘পরনির্ভরশীল’ করে দেশের মানুষের নিরাপত্তা ‘সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস’ করে ফেলা হয়েছিল বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস সৃষ্টি করা, পাঁচ-পাঁচবার দুর্নীতিতে এই বাংলাদেশ এক নম্বরে ছিল। প্রত্যেকটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অস্ত্রের ঝনঝনানি। শিক্ষার সম্পূর্ণ পরিবেশ ধ্বংস করা। সাক্ষরতার হার আবার কমিয়ে সেই ৪৫ থেকে ৫০ ভাগে নামিয়ে নিয়ে আসা।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের সদস্যরা ‘মানি লন্ডারিংয়ের জড়িত’ এবং তাদের পাচার করা টাকা ‘দেশে ফেরত আনা হয়েছে’ বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এটা ভুলে যায় কেন। টাকা তো আমরা ফেরত এনেছি। তাদের দুর্নীতি আমাদের বলতে হবে কেন। একটা আন্তর্জাতিক সংস্থা আমেরিকার এফবিআই, তারাই তো খুঁজে বের করেছে যে খালেদা জিয়া, তারেক জিয়া- এরা কার কার কাছ থেকে দুর্নীতি করে কত টাকা নিয়েছে।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চেয়েছিলেন দুখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে, মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে, এদেশের মানুষ যেন সম্মানের সঙ্গে চলতে পারে, কারও কাছে যেন হাত পাততে না হয় বলেও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চেয়েছিলেন দুখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে কারও কাছে যেন হাত পাততে না হয়। ভিক্ষুক জাতির ইজ্জত থাকে না- এটাই জাতির পিতার কথা। বাংলাদেশ যেন কখনো ভিক্ষুক জাতি না হয়, সেই লক্ষ্য নিয়েই কিন্তু আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতাকে হত্যা করে মানুষের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে যারা এদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলেছিল, যুদ্ধাপরাধী ও খুনিদের রাজত্ব গড়ে তুলেছিল- এদেশে যেন আর কখনো বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আফজাল হোসেন, কৃষিবিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী এবং দলের দপ্তর সম্পাদক ও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী বিপস্নব বড়ুয়া।
কৃষক লীগের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এবং সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম স্মৃতিচারণ করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতির পিতা, বঙ্গমাতা এবং ‘৭৫-এর ১৫ আগস্টের শহীদদের স্মরণে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।