ডেস্ক নিউজ
ভোটকেন্দ্রে পোলিং এজেন্টদের আসতে ভয়ভীতি প্রদর্শন, বাধা বা কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ পেলেও দায়ীদের সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের শাস্তির আওতায় আনার প্রস্তাব করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। একই সঙ্গে ভোট অনিয়মে জড়িত প্রিজাইডিং অফিসারদেরও শাস্তির বিধান যুক্ত করে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনীর জন্য একগুচ্ছ প্রস্তাব দিয়েছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি। গত সোমবার এসব প্রস্তাবনা ভেটিংয়ের (পরীক্ষার) জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ।
গত রবিবার আরপিও সংশোধনী প্রস্তাবসমূহ অনুমোদন করে কমিশন। আরপিও-এর ৭, ১২, ১৫, ২৫, ৩১, ৩৬, ৪৪, ৮৪, ৯০, ৯১ অনুচ্ছেদসহ বেশ কিছু ধারা-উপধারায় সংযোজন-বিয়োজন ও করণিক সংশোধনী প্রস্তাবনা রাখা হয়েছে। এই প্রস্তাবনা অনুমোদনের পর সোমবার তা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। আইন মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় ভেটিং শেষে তা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠাবে। সেখানে চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে তা সংসদে সংশোধন বিল আকারে উপস্হাপন হবে।
আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের সংশোধনীর উদ্যোগ গ্রহণ করে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন। এই সংশোধনী প্রস্তাব গ্রহণের আগে রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন মহলের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে সংলাপ করে ইসি। রাজনৈতিক দলসহ সব ধরনের অংশীজনের সঙ্গে সংলাপে প্রাপ্ত কিছু সুপারিশের প্রস্তাবনাও আরপিও সংশোধনের খসড়ায় রয়েছে। ভোটে পেশিশক্তির প্রভাব, ভোটকেন্দ্রে অযাচিত লোকের হস্তক্ষেপ, পোলিং এজেন্টদের আসতে বাধা, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের অনিয়মসহ সুষ্ঠু নির্বাচনে কঠোর ব্যবস্হা নেওয়ার সুপারিশ উঠে আসে সংলাপে।
এছাড়া বিগত দুটি সংসদ নির্বাচনে পোলিং এজেন্টদের ভোটকেন্দ্র আসতে বাধা বা ভয়ভীতি প্রদর্শনের ঘটনা ঘটে। এজন্য পোলিং এজেন্টদের সুরক্ষার ব্যাপারে কঠোর অবস্হান গ্রহণ করেছে ইসি। কোনো ব্যক্তি অবৈধ প্রভাব বিস্তার করে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনকারী কোনো ব্যক্তিকে নির্বাচনি কাজে বাধা দিলে বা বাধার চেষ্টা করলে শাস্তির আওতায় আনতে ৪৪ অনুচ্ছেদে উপধারা সংযোজনের প্রস্তাব করা হয়েছে। ভোটকেন্দ্রে পেশিশক্তির ব্যবহার প্রতিরোধে ২৫ অনুচ্ছেদে নতুন প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। পোলিং এজেন্টদের আসতে দেওয়ায় বাধা বা কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়ার অভিযোগ পেলেও দায়ীদের সর্বোচ্চ পাঁচ বছরের শাস্তির আওতায় আনতে প্রস্তাব করা হয়েছে।
৯১ অনুচ্ছেদে দুটি উপধারা সংযোজন করে গেজেট প্রকাশের আগ পর্যন্ত যে কোনো সময় ভোট বাতিলের ক্ষমতা চেয়েছে ইসি। নির্বাচনের যে কোনো মুহূর্তে পেশিশক্তি বা অন্যবিধ যে কোনো কারণে নির্বাচন বন্ধ/বাতিলের জন্য এ প্রস্তাব করা হয়েছে। এ বিধির অধীনে কারো প্রার্থিতা বাতিল হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যেন নতুন করে ঐ নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে সেজন্যও প্রস্তাবনা রয়েছে।
বিদ্যমান আইনে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের সব স্তরের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ নারী প্রতিনিধিত্ব রাখার বিধান রয়েছে। এটি ২০২০ সালের মধ্যে হওয়া কথা ছিল। কিন্তু কোনো দলই তা প্রতিপালন করতে পারেনি। তাই দলগুলো আরো সময় চেয়েছে। ইসলামভিত্তিক একটি দল এই নিয়মটি তুলে দেওয়ারও দাবি জানিয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০৩০ সাল পর্যন্ত সময় দিতে খসড়ায় প্রস্তাব করা হয়েছে। সেই সঙ্গে দলের সংশোধিত গঠনতন্ত্র জমার সময় এক বছর থেকে কমিয়ে ৩০ দিনের মধ্যে জমার বিধান করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
ব্যাংক ও সেবা সংস্হার প্রতিনিধিদের আপত্তি থাকায় ঋণ ও বিল খেলাপিদের আরো ছাড়ে সুপারিশ করতে পারেনি ইসি। তবে মনোনয়নপত্র দাখিলের আগের দিন খেলাপি বিল ও ঋণ পরিশোধ করেই প্রার্থী হওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে আরপিও সংশোধনী প্রস্তাবে।