নিজস্ব প্রতিবেদক:
পুলিশের ভুলে ছয় দিন কারাভোগের পর আদালতের মাধ্যমে মুক্তি পেয়েছেন নাটোরের লালপুর উপজেলার পুরাতন ঈশ্বরদী গ্রামের দিনমজুর নজরুল ইসলাম। মুক্তি পাওয়া নজরুল উপজেলার পুরাতন ঈশ্বরদী গ্রামের মৃত আবদুল জব্বার শেখের ছেলে। আজ মঙ্গলবার সকালে লালপুর আমলি আদালতের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোসলেম উদ্দীন নজরুল ইসলামের আইনজীবীর দেওয়া তথ্য উপস্থাপন সহ সবকিছু শুনে নজরুল ইসলামকে সরাসরি মুক্তির আদেশ দেন।
নজরুলের মা মোছাঃ তোহিরন বেগম বলেন, তাঁর ছেলে নজরুলসহ ৫ জনের নামে জুয়া খেলার অপরাধে মামলা করে লালপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মোল্লা সোহেল মাহমুদ। সেই মামলায় গত ২৪ মে তারিখে নজরুল ইসলাম, হাবিল শেখ, ইউনুস আলী ও আশিক সরদারকে গ্রেফতার করে পুলিশ। গ্রেফতারের পর তাদেরকে আদালতে হাজির করা হয়। তাদের হাজির করা হলে আইনজীবীর মাধ্যমে জামিন আবেদন করলে আদালতের বিচারক আসামিদের জামিন মঞ্জুর করেন। মামলায় একই গ্রামের মৃত জব্বার মণ্ডলের ছেলে নজির মমন্ডলকে পলাতক আসামি হিসেবে দেখায় পুলিশ। এরপর নজির আদালতে হাজির না হওয়ায় সম্প্রতি নজিরের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয় আদালত থেকে। সেই পরোয়ানা তামিল করতে লালপুর থানার এসআই আলিম গত বৃহস্পতিবার পুরাতন ঈশ্বরদী গ্রামে যান। এ সময় পুলিশ আসামি নজির মন্ডলকে না পেয়ে জামিনে থাকা আসামি নজরুল ইসলামকে আটক করে থানায় নিয়ে যান। পরের দিন শুক্রবার নজরুল ইসলামকে আসামি নজির মন্ডল হিসেবে আদালতে চালান দেন। এ সময় নজরুল বারবার পুলিশকে তাদের ভুলের কথা বললে পুলিশ নজরুলকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা সহ চড় থাপ্পর দেয়। এরপর নজরুলকে আদালতে হাজির করার পর তাঁকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত। এরপর থেকে নজরুল ইসলাম কারাগারে রয়েছিল। আজ মঙ্গলবার নজরুল ইসলামের পক্ষের আইনজীবী দীনাই তাছরিন বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন। আজ সকালে নজরুল ইসলামকে লালপুর আমলি আদালতে হাজির করা হয়। আইনজীবী আসামি নজিরের পরিবর্তে নজরুল ইসলামকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসার বিষয়টি আদালতকে জানান। শুনানি শেষে আদালতের বিচারক নজরুলকে তাৎক্ষণিকভাবে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেন।
মুক্তি পাওয়ার পর নজরুল ইসলাম বলেন, তিনি দিনমজুরি করে সংসার চালান। তার সংসারে বৃদ্ধা মা, স্ত্রী ও সন্তান আছে। জামিনে থাকা সত্ত্বেও এসআই আলিম তাকে জোর করে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায়। পুলিশ মিথ্যা আসামি সাজিয়ে ছয় দিন কারাভোগ করালেন তাকে । তার জানামতে নজির নামে ওই গ্রামে কেউ থাকেন না। পুলিশ ভুল করে ওই নামে মামলা করে আমাকে হয়রানি করেছে। আমার এই কারাভোগ ও আর্থিক ক্ষতির কী হবে?
এ বিষয়ে লালপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনোয়ারুজ্জামান বলেন, গ্রেফতারের সময় নজরুল ইসলাম নিজেকে নজির হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন। তাই পুলিশ কর্মকর্তা তাঁকে গ্রেফতার করেছেন। দুজনই একই মামলার আসামি হওয়ায় বিভ্রান্তি হয়েছে। ভবিষ্যতে দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের আরও সতর্কতার সঙ্গে আসামি গ্রেফতারের নির্দেশনা দেওয়া হবে।