ডেস্ক নিউজ
জন্মনিবন্ধনে নাগরিকদের ভোগান্তি কমাতে উদ্যোগ নিয়েছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন। সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক কার্যালয় নয়, এখন থেকে প্রত্যেকটি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অফিসে করা যাবে জন্মনিবন্ধন। নতুন নিয়ম অনুযায়ী কাউন্সিলর হবেন নিবন্ধক ও সহকারী নিবন্ধক হবেন কাউন্সিলর অফিসের সচিব।
এছাড়া নাম সংশোধনের ক্ষেত্রে ঢাকা ডিসি অফিসের বদলে সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক অফিসকে দায়িত্ব দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ বিষয়ে উত্তর সিটি করপোরেশনের উপপ্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা লে. কর্নেল মো. গোলাম মোস্তফা সারওয়ার বলেন, আমরা এ বিষয়ে সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদের সঙ্গে মিটিং করেছি। আগামী সপ্তাহের ভেতরে আমরা রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ের চিঠির উত্তর দেব। মানুষের ভোগান্তি লাঘব করতে আমরা এ উদ্যোগ নিয়েছি।
এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ের (জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন) রেজিস্ট্রার জেনারেল মির্জা তারিক হিকমত বলেন, সিটি করপোরেশনে আইন অনুযায়ী মেয়র যদি চান তাহলে তিনি এ সেবার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরদের দিতে পারেন। তবে কাউন্সিলর নিবন্ধক হলে, তার সচিবকে সহকারী নিবন্ধক হিসেবে অবশ্যই সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী হতে হবে। আমরা গত বছরের নভেম্বরে সিটি করপোরেশনকে এ বিষয়ে চিঠি দিয়েছি, তারা চিঠির মাধ্যমে পূর্ণাঙ্গ তথ্য সরবরাহ করলে আমরা এ বিষয়ে কাজ শুরু করব। ইতিমধ্যে নারায়ণগঞ্জ ও বরিশাল সিটি করপোরেশনও এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিচ্ছে।
তবে উত্তর সিটি করপোরেশন এমন উদ্যোগ নিলেও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক অফিসেই থাকছে জন্মনিবন্ধনের দায়িত্ব। এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফজলে শামসুল কবির জানান, আমাদের মেয়র মহোদয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এখনো এ দায়িত্ব আমাদের আঞ্চলিক কার্যালয়ই পালন করবে।
জানা যায়, আগের নিয়ম অনুযায়ী উত্তর সিটির ১০টি আঞ্চলিক কার্যালয়ে যেতে হতো জন্মনিবন্ধন করতে। উত্তর সিটির বাড্ডা এলাকার লোকজনকে যেতে হয় ১০ নম্বর আঞ্চলিক কার্যালয় কাওরান বাজারে, আবার খিলক্ষেতের নাগরিকদের যেতে হয় ৯ নম্বর আঞ্চলিক কার্যালয় মহাখালীতে। নিজের ওয়ার্ডে এ সেবা না থাকায় ছুটতে হয় আঞ্চলিক অফিসে। এতে কয়েকটি ওয়ার্ডের সেবা এক কার্যালয়ে হওয়ায়, সব সময় ভিড় লেগে থাকে। এখন আঞ্চলিক কার্যালয়ে একজন কর্মচারী সহকারী নিবন্ধক ও সহকারী স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নিবন্ধকের দায়িত্ব পালন করেন। অন্যদিকে ঢাকা দুই সিটি করপোরেশনের ১২৯টি ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের ছোট ছোট কোনো সংশোধনীর জন্যও ঢাকার সদরঘাটে অবস্থিত ডিসি অফিসে যেতে হয়। উত্তরখানের বাসিন্দাদের জন্মনিবন্ধনের সংশোধনীর জন্য তাকেও যেতে হয় ডিসি অফিসে। পুরো ঢাকার বাসিন্দাদের সেবা সেখানে হওয়ায় এক কাজের জন্য সেবাগ্রহীতাকে যেতে হয় বহুবার। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী সংশোধনীর জন্য আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তাকে (উপসচিব পদমর্যাদার) এ দায়িত্ব দেওয়ার জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে।
উত্তর সিটি করপোরেশনের উপপ্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা লে. কর্নেল মো. গোলাম মোস্তফা সারওয়ার বলেন, ভোগান্তি দূর করতে জন্মনিবন্ধন সেবা আঞ্চলিক কার্যালয় হতে ওয়ার্ডে স্থানান্তর করার জন্য আমরা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছিলাম। পরে স্থানীয় সরকার মন্ত্রীও এ ব্যাপারে সম্মত হন।’
এদিকে কাউন্সিলররা বলছেন, এ দায়িত্ব তাদের কাছে দেওয়া হলে মানুষের ভোগান্তি কমবে। তবে ওয়ার্ড সচিবদের ওপর চাপ বাড়বে। অন্যদিকে নতুন ওয়ার্ডগুলোতে এখনো সরকারিভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত সচিব নেই। সচিবও নিয়োগ দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
এ বিষয়ে উত্তর সিটি করপোরেশনের ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আফছার উদ্দিন খান বলেন, আমাদের এ বিষয়ে কোনো আপত্তি নেই। তবে শুধু একজন ওয়ার্ড সচিব এ কাজ সামলাতে হিমশিম খাবে। আরো লোকবল নিয়োগ দিতে হবে। নতুন ওয়ার্ড ৫০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ডি এম শামীম বলেন, আমাদের এখন যে সচিব রয়েছেন, তিনি সরকারিভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত না। এই ওয়ার্ডে এ কার্যক্রম চালু করতে হলে ওয়ার্ড সচিব নিয়োগ দিতে হবে।