ডেস্ক নিউজ
শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে গৃহহীনতা একটা অভিশাপ। এটি উন্নয়নশীল এবং উন্নত দেশের মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, মানুষকে এই অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে কিছু করার বিষয়টি আমাদের সক্ষমতার মধ্যেই রয়েছে।’
নিজ দেশে একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না বলে ঘোষণা দেয়ার পর এবার গোটা বিশ্বের মানুষকে ‘ঘরহীনতার অভিশাপ’ থেকে মুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শক্তিশালী অংশীদারত্ব গড়ে তুলে সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সারা বিশ্বের মানুষকে ‘গৃহহীনতার অভিশাপ’ মুক্ত করা যায় বলেও বিশ্বনেতাদের উদ্দেশে বলেছেন সরকারপ্রধান।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে স্থানীয় সময় বুধবার সকালে হোটেল লোটে প্যালেসে ‘টেকসই গৃহায়ন’ শীর্ষক একটি উচ্চপর্যায়ে সাইড ইভেন্টে অংশ নিয়ে তিনি এ আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে গৃহহীনতা একটি অভিশাপ। এটি উন্নয়নশীল এবং উন্নত দেশের মানুষকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। অভিজ্ঞতা থেকে দেখা যায়, মানুষকে এই অভিশাপ থেকে মুক্ত করতে কিছু করার বিষয়টি আমাদের সক্ষমতার মধ্যেই রয়েছে।’
এ ক্ষেত্রে ‘শক্তিশালী অংশীদারত্ব’ গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘এটি করতে (গৃহহীনতার অভিশাপ দূর করতে) এখানে জড়ো হওয়া আমাদের সব বন্ধু এবং অংশীজনরা একটি শক্তিশালী অংশীদারত্ব গড়ে তুলতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘আসুন আমরা সারা বিশ্বের জন্য একসঙ্গে কাজ করি, যেখানে গৃহহীনতা অতীতের কোনো একটি বিষয় বলে গণ্য হবে।’
গৃহহীনদের প্রতি নিজের মমতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এটি এমন একটি ইস্যু, যা আমি আমার হৃদয়ের গভীরে ধরে রেখেছি। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, একটি নিরাপদ ও উপযুক্ত আশ্রয় প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘ঘর দেশের প্রতিটি নাগরিকের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক চাহিদা, যা অন্যান্য চাহিদা পূরণের পথ তৈরি করে দেয়। বাংলাদেশে আমরা একটি বাড়িকে শুধু থাকার স্থান হিসেবে দেখি না। আবাসনের নিরাপত্তা ব্যক্তির মর্যাদা ও বসবাসের সঙ্গে অর্থনৈতিক মুক্তিকেও ত্বরান্বিত করে।’
আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশে ভূমিহীন-গৃহহীনদের বিনা মূল্যে জমি ও ঘর দেয়ার কথাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘১৬৫ মিলিয়ন জনসংখ্যার একটি ঘনবসতিপূর্ণ দেশ হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ সফলভাবে গৃহহীনতার সমস্যাটি সামলাতে পারছে।
‘আমরা গৃহহীন-ভূমিহীনদের বিনা মূল্যে জমির সঙ্গে বাড়ি তৈরি করে দিচ্ছি। সারা দেশে সুবিধাবঞ্চিত মানুষের জন্য টেকসই ঘর নির্মাণে আমাদের সাফল্যের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে আমি এখানে এসেছি।’
স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালে প্রথম ভূমিহীন, গৃহহীন এবং ছিন্নমূল মানুষদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেন বলেও জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘জাতির পিতার লক্ষ্যকে ধারণ করে ১৯৯৭ সালে আমরা ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষের পুনর্বাসনে আশ্রয়ণ প্রকল্প চালু করি। গত দুই দশকে আমাদের সরকার সবার জন্য বিনা মূল্যে আবাসন নিশ্চিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়েছে।’
গত দুই বছরে দুই লাখ বাড়ি নির্মাণ করে ১০ লাখেরও বেশি মানুষের আবাসন নিশ্চিত করা হয়েছে বলে জানান তিনি। বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আমার প্রধানমন্ত্রিত্বের ১৮ বছরে পাঁচ লাখেরও বেশি বাড়ি নির্মাণের মাধ্যমে আমরা ৩৫ লাখেরও বেশি মানুষের আবাসনের ব্যবস্থা করেছি। বর্তমানে আরও ৪০ হাজার বাড়ি নির্মাণের কাজ চলছে।’
দিনাজপুরের খানসামা উপজেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়ি। ছবি: নিউজবাংলা
আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়িগুলোর বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, ‘এই প্রকল্পের আওতায় প্রত্যেক পরিবার দুটি শয়নকক্ষ, একটি লম্বা বারান্দা, একটি রান্নাঘর, একটি স্যানিটারি ল্যাট্রিনসহ একটি পাকা বাড়ির মালিকানা পাচ্ছে।’
প্রতিটি বাড়িতে বিনা মূল্যে বিদ্যুৎ, সুপেয় পানি সরবরাহ করা হয়েছে বলেও জানান তিনি। বলেন, ‘বাড়ির পর্যাপ্ত আঙিনাসহ আমরা বিনা মূল্যে বাড়ি এবং জমি দিচ্ছি, এটি পৃথিবীর ইতিহাসে অনন্য।’
ভূমিহীন গৃহহীনদের মধ্যে ভিক্ষুক, দিনমজুর, নিঃস্ব নারী, বিধবা, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, বয়োবৃদ্ধ, পারিবারিক সহিংসতার শিকার, জাতিগত সংখ্যালঘু, ট্রান্সজেন্ডার, কুষ্ঠ রোগী, ঝাড়ুদার এবং হরিজন সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা রয়েছেন বলে জানান সরকারপ্রধান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকেও একইভাবে পুনর্বাসন করছি। ইতোমধ্যে কক্সবাজারে ১৩৯টি বহুতল ভবনে পাঁচ হাজার জলবায়ু-শরণার্থী পরিবারকে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
আশ্রয়ণ প্রকল্পের কারণে গৃহহীনদের শহরমুখী হওয়ার প্রবণতা কমেছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গৃহহীন মানুষ কর্মসংস্থান এবং বাসস্থানের সন্ধানে শহরে ছুটে আসত, আগে বাংলাদেশে এটি সাধারণ দৃশ্য ছিল। কিন্তু আশ্রয়ণ প্রকল্প চালু হওয়ার পর থেকে এই প্রবণতা প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।’
‘অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন’ মডেলটি অনুসরণের কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই মডেলটি একজন পুনর্বাসিত ব্যক্তিকে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষমতায়নের সঙ্গে সঙ্গে আত্মনির্ভরশীল এবং আত্মমর্যাদাসম্পন্ন করে গড়ে তোলে। এই প্রকল্পে স্বামী এবং স্ত্রী দুজনের জন্যেই জমি এবং বাড়ির মালিকানার সমান অংশীদারত্ব নিশ্চিত করে।’