ডেস্ক নিউজ
নিত্যপণ্যের বাজারের ওপর চাপ কমাতে সরকারী বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা টিসিবির মাধ্যমে ভর্তুকি মূল্যে খাদ্যপণ্য বিক্রি কার্যক্রম আরও শক্তিশালী করা হবে। সংস্থাটির বিক্রি কার্যক্রম বাড়িয়ে দ্রব্যমূল্য কমানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ভর্তুকি মূল্যে বিক্রি হচ্ছে টিসিবির ভোগ্যপণ্য। সারাবছর যাতে বিক্রি কার্যক্রম চালু রাখা যায় সেজন্য টিসিবির মজুদ বাড়ানো হচ্ছে। এ লক্ষ্যে আরও ১ কোটি ৬৫ লাখ লিটার ভোজ্যতেল কেনার অনুমোদন দিয়েছে সরকার। কৃষিপণ্যের উৎপাদন বাড়াতে সারের সরবরাহ নিশ্চিত করতে কেনা হচ্ছে ৯০ হাজার টন সার। এছাড়া প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণের লক্ষ্যে আগামী শিক্ষাবর্ষের জন্য ১১ কোটি ২০ লাখ এক হাজার ৪৭৪টি পাঠ্যপুস্তক কিনা হবে।
বুধবার সরকারী ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল ১ হাজার ৭২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে মোট ১০টি ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন দিয়েছেন। এর মধ্যে ভোজ্যতেল, সার ও পাঠ্যপুস্তক যথাসময়ে সরবরাহ নিশ্চিত করতে গুরুত্ব দিয়েছে ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। সভা শেষে অনুমোদিত প্রস্তাবগুলোর বিস্তারিত তুলে ধরেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোঃ আব্দুল বারিক। ওই সময় তিনি জানান, অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ২১তম এবং সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ২৮তম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এতে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত কমিটির অনুমোদনের জন্য ২টি এবং ক্রয় কমিটির অনুমোদনের জন্য ১১টি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়। ক্রয় কমিটির প্রস্তাবগুলোর মধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ের ৩টি, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ৩টি, স্থানীয় সরকার বিভাগের ২টি, মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের ১টি, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ১টি এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের ১টি প্রস্তাব ছিল। ক্রয় কমিটির অনুমোদিত ১০টি প্রস্তাবে মোট অর্থের পরিমাণ ১ হাজার ৭২৬ কোটি ৮ লাখ ৪১ হাজার ৯২৩ টাকা।
এদিকে, ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) জন্য দেশীয় তিন কোম্পানি থেকে ১ কোটি ৬৫ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কিনবে সরকার। এতে মোট খরচ হবে ৩০৫ কোটি ২৫ লাখ টাকা। এর আগের বৈঠকে ২ কোটি ২৫ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কেনার অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। গত এক মাসে প্রায় প্রতিটি বৈঠকেই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে ভোজ্যতেল কেনার প্রস্তাবে অনুমোদন দেয়া হচ্ছে। ভোজ্যতেলের পাশাপাশি আগের বৈঠকগুলোতে মসুর ডাল, চিনি ও পেঁয়াজের মতো পণ্যও কেনা হয়েছে। টিসিবির মাধ্যমে বিক্রি কার্যক্রম বাড়ানো গেলে নিত্যপণ্যের বাজারের ওপর চাপ কমবে বলে মনে করছে সরকার। টিসিবির মাধ্যমে দেশের প্রায় ১ কোটি পরিবার ভর্তুকি মূল্যে খাদ্যপণ্য কিনতে পারছেন। এর একটি ইতিবাচক প্রভাব বাজারে ইতোমধ্যে পড়েছে।
তবে টিসিবির মাধ্যমে কোটি পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দেয়া হলেও এখনও আরও কয়েক কোটি পরিবার এই সুবিধার বাইরে রয়েছেন। এ কারণে টিসিবির উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে সরকার। আব্দুল বারিক জানান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন টিসিবির মাধ্যমে সুপার অয়েল রিফাইনারি লিমিটেডের কাছ থেকে ৫৫ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়। এই তেল কিনতে খরচ ধরা হয়েছে ১০১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। এছাড়া সিটি এডিবল অয়েল লিমিটেডের কাছ থেকে ১০১ কোটি ৭৫ লাখ টাকায় ৫৫ লাখ লিটার সয়াবিন তেল এবং মেঘনা এডিবল অয়েল রিফাইনারি লিমিটেডের কাছ থেকে ১০১ কোটি ৭৫ লাখ টাকায় ৫৫ লাখ লিটার সয়াবিন তেল কেনার প্রস্তাবে অনুমোদন করেছে সরকারী ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। তিনি বলেন, তিন কোম্পানির কাছ থেকেই সয়াবিন তেল কেনা হবে ১৮৫ টাকা লিটার দরে। দুই লিটারের বোতলে এই তেল নেয়া হবে।
সভায় মরক্কো ও কাতার থেকে ৯০ হাজার টন টিএসপি ও ইউরিয়া সার ক্রয়ের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে টিএসপি ৩০ হাজার টন ও ইউরিয়া ৬০ হাজার টন। এতে মোট খরচ হবে ৬৩৭ কোটি ২৩ লাখ ৫২ হাজার ৫০২ টাকা। ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এ সংক্রান্ত পৃথক তিনটি প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। চুক্তির আওতায় মরক্কো থেকে ৮ম লটে ৩০ হাজার মেট্রিক টন টিএসপি সার আনা হবে। এতে ব্যয় হবে ২২১ কোটি ৫৩ লাখ ৫০ হাজার ৩৫৭ টাকা। এছাড়া কাতার থেকে ৪র্থ লটে ৩০ হাজার টন ব্যাগড ইউরিয়া সার ২০৬ কোটি ৫৯ লাখ টাকায় আমদানি হবে।
এছাড়া মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অধীন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড কর্তৃক ৪৮৯ কোটি ২৫ লাখ ২৮ হাজার ৯২৬ টাকায় ১১ কোটি ২০ লাখ এক হাজার ৪৭৪টি পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণ, বাঁধাই ও সরবরাহের ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণের জন্য ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের ইবতেদায়ি (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণী), মাধ্যমিক (বাংলা ও ইংরেজী ভার্সন), ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণী, দাখিল স্তরের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণী, শিক্ষক নির্দেশিকা এবং কারিগরি বই (ট্রেড বই)।
অতিরিক্ত সচিব বলেন, ১৮২টি লটে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে এসব পাঠ্যপুস্তক কেনার প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। আগামী শিক্ষাবর্ষের জন্য এসব পাঠ্যপুস্তক কেনা হবে। এছাড়া রুপপুর গ্রীন সিটি আবাসিক কমপ্লেক্স-এ এক্সটারনাল ইলেক্ট্রিফিকেশন ওয়ার্কস অব ১৫০০ এসএফটি ফোর ইউনিটস টুয়েনটি স্টোরেড টু বিল্ডিং-এর ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি। কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন উপজেলায় ঘোড়াউতরা নদীর ওপর ১ হাজার ২ মিটার ব্রিজ নির্মাণ পূর্ত কাজের ক্রয় প্রস্তাবে অনুমোদন দিয়েছে কমিটি।