ডেস্ক নিউজ
মালয়েশিয়া সরকার নতুন করে ঢাকার আরো ৫০টি রিক্রুটিং এজেন্সিকে শ্রমিক প্রেরণের জন্য অনুমোদন দিতে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইতোমধ্যে বাছাই করা রিক্রুটিং এজেন্সির নামের একটি খসড়া তালিকা প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় ছাড়াও জনশক্তি ব্যবসার সাথে জড়িতদের হাতে হাতে ঘুরছে। ধারণা করা হচ্ছে মালয়েশিয়া সরকারের দেয়া নতুন এই খসড়া তালিকাটিই চূড়ান্তভাবে বিবেচিত হতে পারে।
এ দিকে মালয়েশিয়া থেকে জনশক্তি প্রেরণের সাথে সম্পৃক্ত একজন ব্যবসায়ী নাম না প্রকাশের শর্তে নয়া দিগন্তকে বলেন, মালয়েশিয়া সরকার এখন পর্যন্ত সোর্স কান্ট্রিভুক্ত দেশগুলো থেকে কর্মী আমদানির জন্য চার লাখ কর্মীর নামে চাহিদাপত্র (এপ্রুভাল) দিয়েছে। এর মধ্যে নেপালেই চলে গেছে দুই লাখের মতো ডিমান্ড। বাকি দুই লাখ থেকে এক লাখ চাহিদাপত্র গেছে বাংলাদেশে। অন্য এক লাখের মধ্যে ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া ও মিয়ানমারে প্রায় অর্ধলাখ শ্রমিকের চাহিদাপত্র সিস্টেম থেকে চলে গেছে। এখন বাকি যে চাহিদাপত্রগুলো রয়েছে এর জন্য আমাদের বাংলাদেশী কয়েক শ’ ব্যবসায়ী সেগুলো কিনতে এখন কুয়ালালামপুরে অবস্থান করছেন। তাদের কারণে ইতোমধ্যে একেকটি নিম্নমানের কাজের চাহিদাপত্রের দাম উঠেছে পাঁচ হাজার রিঙ্গিতেরও বেশি।
এক প্রশ্নের উত্তরে ওই ব্যবসায়ী বলেন, আমাদের বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে চাহিদাপত্র যাচাই-বাছাইয়ে যে সময় লাগছে সেই সুযোগটি কাজে লাগাচ্ছে নেপাল অ্যাম্বেসি। নেপালের এ দেশে থাকা হাইকমিশন কোম্পানি ভিজিট করে দ্রুত কর্মীদের সত্যায়ন করায় তাদের শ্রমিক দ্রুত মালয়েশিয়াতে চলে আসতে পারছে। কিন্তু আমাদের অ্যাম্বেসির লোকজন এ ক্ষেত্রে খুবই স্লো। একটি সত্যায়ন দিতে তিন-চার দিন সময়ও নিচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন তিনি। তবে আমরা এখানে এসে শুনতে পারছি মালয়েশিয়া সরকার আরো ৫০টি রিক্রুটিং এজেন্সিকে নতুন করে শ্রমিক পাঠানোর অনুমতি দিতে তাদের কেবিনেটে সিদ্ধান্ত নিযেছে। সেই হিসাবে মালয়েশিয়াতে মোট ২৫+৫০ মিলিয়ে মোট ৭৫টি রিক্রুটিং এজেন্সি এখন কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে। তাদের সাথে সাব এজেন্ট হিসেবে আরো সহস্রাধিক রিক্রুটিং এজেন্সির মালিককে কর্মী পাঠানোর জন্য এনলিস্ট করতে পারবে। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ভালো ভালো কাজ নেপালে চলে গেছে। এখন যেগুলোর ডিমান্ড রয়েছে সেই কাজগুলোর মান খুব ভালো নয়।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. আহমদ মুনিরুছ সালেহিন তার দফতরের সামনে এ প্রতিবেদককে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে নতুন করে আরো ৫০টি এজেন্সির নামের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হওয়া প্রসঙ্গে বলেন, শুনতে পারছি নতুন করে আরো ৫০টি এজেন্সিকে মালয়েশিয়া সরকার শ্রমিক প্রেরণে অনুমতি দিচ্ছে বা দিতে পারে। তবে আমরা এখনো অফিসিয়ালি মালয়েশিয়া থেকে কোনো তালিকা হাতে পাইনি। তবে ৫০ জনের একটি খসড়া তালিকা আমার হোয়াটসঅ্যাপে এসেছে।
হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ছড়িয়ে পড়া নতুন ৫০ রিক্রুটিং এজেন্সির তালিকায় যেসব এজেন্সির নাম রয়েছে সেগুলো হচ্ছে- মেরিট ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল, সুপার ইস্টার্ন লিমিটেড, মদিনা ওভারসিস, আমিন ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলস, মের্সাস কিউকে কুইক এক্সপ্রেস লিমিটেড, ইউনিক ইস্টার্ন প্রাইভেট লিমিটেড, মৃধা ইন্টারন্যাশনাল করপোরেশন, ম্যান ইজ পাওয়ার করপোরেশন, প্রান্তিক ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরিজম লিমিটেড, দামাসি করপোরেশন লিমিটেড, রাব্বি ইন্টারন্যাশনাল, আইএসএমটি হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড, অদিতি ইন্টারন্যাশনাল, সেলিব্রেটি ইন্টারন্যাশনাল, সুলতান ওভারসিস, প্রভাতী ইন্টারন্যাশনাল, এমএস বিডি গ্লোবাল বিজনেস, সাদিয়া ইন্টারন্যাশনাল, বিএনএস ওভারসিস লিমিটেড, ট্রান্স এশিয়া ইন্টারন্যাশনাল সার্ভিসেস লিমিটেড, গ্যালাক্সি করপোরেশন, দ্য গাজীপুর এয়ার ইন্টারন্যাশনাল, আল ফারাহ হিউম্যান রির্সোসেস অ্যান্ড কনসালটেন্সি, অপরাজিতা ওভারসিস, আরআরসি হিউম্যান রিসোর্সেস সার্ভিস লিমিটেড, আল খামিস ইন্টারন্যাশনাল, দ্য ইফতি ওভারসিস, দরবার গ্লোবাল ওভারসিস, ফোর সাইট ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, এমএস কাশিপুর ওভারসিস, মুবিন এয়ার ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, নাভিরা লিমিটেড, জেজি আলফালাহ ম্যানেজমেন্ট, রুবেল বাংলাদেশ লিমিটেড, দিশারী ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড, এম এস জিএমজি ট্রেডিং প্রাইভেট লিমিটেড, এমএস হিরা ওভারসিস, ফিউচার ইন্টারন্যাশনাল, স্টান্ডফোর্ট এমপ্লয়মেন্ট প্রাইভেট লিমিটেড, মোহাম্মদ নুরুজ্জামান অ্যান্ড সন্স লিমিটেড, এমএস জান্নাত ওভারসিস, মিডওয়ে ওভারসিস লিমিটেড, আহাদ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, দ্য জিএমজি অ্যাসোসিয়েটস লিমিটেড, আমান এন্টারপ্রাইজ, আকতার রিক্রুটিং এজেন্সি, রানওয়ে ইন্টারন্যাশনাল, এমএস এলিগেন্টস ওভারসিস লিমিটেড ও পিএন এন্টারপ্রাইজ কোম্পানি ঢাকা লিমিটেড।
উল্লেখ্য, দীর্ঘ দিন মালয়েশিয়ায় শ্রমিক পাঠানো বন্ধ থাকার পর কূটনিতক তৎপরতার পাশাপাশি প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রচেষ্টায় সম্প্রতি শ্রমবাজারটি উন্মুুক্ত হয়েছে। তবে শ্রমিক প্রেরণে মালয়েশিয়া সরকার নির্দিষ্ট ২৫টি এজেন্সির নাম চূড়ান্ত করার পর শুরু হয় ব্যবসায়ীদের মধ্যে থেকে তীব্র প্রতিবাদ। একপর্যায়ে মালয়েশিয়া সরকার অনেকটা চাপে পড়ে আরো ৫০টি এজেন্সিকে নতুন করে তালিকাভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়। এজেন্সির সংখ্যা বাড়ায় অভিবাসন ব্যয় কমে আসতে পারে। শোনা যাচ্ছে, এই তালিকার বাইরে আরো ২৫টি মিলিয়ে মোট ১০০টি রিক্রুটিং এজেন্সির নাম মালয়েশিয়া সরকার চূড়ান্ত করার কথা ভাবছে। এসব এজেন্সিই মালয়েশিয়া থেকে ব্যবসা কিনে অন্যান্য এজেন্সিকে পরে বণ্টন করবে। এ ক্ষেত্রে বাকি এজেন্সি মালিক শুধু ওই ১০০ এজেন্সিকে প্রসেসিং খরচ বাবদ একটি নির্ধারিত ফি দেবে।
এর আগে গতকাল বায়রার একাধিক সদস্যর সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা ৫০টি তালিকার বিষয়ে কোনো মতামত দিতে পারেননি। তারা মনে করছেন, এই তালিকা থেকে কোনো নাম বাদ পড়তেও পারে। তবে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের আগ পর্যন্ত সবাইকে অপেক্ষা করতে হবে কোন ৫০টি এজেন্সি নতুন করে শ্রমবাজারে কর্মী প্রেরণে অন্তর্ভুক্ত হতে যাচ্ছে।