ডেস্ক নিউজ
দীর্ঘ সাড়ে ৪ মাস পর দেশের একমাত্র পাথরখনি মধ্যপাড়া গ্রানাইড মাইনিং কোম্পানি লিমিডেট (এমজিএমসিএল) আজ চালু হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রথম দিন তিন শিফটে পূর্ণমাত্রায় কাজ চলবে। এতে প্রতিদিন গড়ে ৫ হাজার থেকে সাড়ে ৫ হাজার টন পাথর উত্তোলন সম্ভব হবে। এমজিএমসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবু দাউদ মুহম্মদ ফরিদুজ্জামান যুগান্তরকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় বিস্ফোরক পৌঁছে গেছে। বৃহস্পতিবার (আজ) সকাল থেকে খনির উৎপাদন শুরু হবে। এজন্য সব ব্যবস্থা করা হয়েছে।
জানা যায়, অ্যামোনিয়াম নাইট্রেডসহ (বিস্ফোরক) বেশ কয়েকটি এক্সপ্লোসিভ সংকটে ১ মে খনি বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে ১৩ মার্চ একই সংকটে খনি বন্ধ হলে জোড়াতালি দিয়ে ২৮ মার্চ চালু করা হয়। কিন্তু ১৫ দিন না যেতেই আবার শেষ হয়ে যায় খনির অপরিহার্য এই কাঁচামাল। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিস্ফোরকের জোগানও দিতে পারছিল না খনি কর্তৃপক্ষ।
এমজিএমসিএল সূত্রে জানা যায়, বুধবার সকালে ১০০ টন অ্যামোনিয়াম নাইট্রেড খনিতে পৌঁছেছে। ১৫ অক্টোবর (শনিবার) আরও ১২০ টন চট্টগ্রাম পৌঁছার কথা রয়েছে। চলতি মাসের শেষে আরও ১৫০ টন বিস্ফোরক বেনাপোলে পৌঁছার কথা রয়েছে। এ অবস্থায় আগামী ৬ মাস নিরবচ্ছিন্ন খনি পরিচালনা করা যাবে।
পেট্রোবাংলার একটি সূত্র জানায়, এই বিস্ফোরক আমদানির সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট যুক্ত ছিল। তারা বারবার কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বেশি দামে বিস্ফোরক আমদানি করার জন্য সময়ক্ষেপণ করত। এভাবে তারা বিপুল অঙ্কের টাকা কমিশন হাতিয়ে নেয়। এই রহস্য উদঘাটনে পেট্রোবাংলা থেকে একটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। দীর্ঘ তদন্ত শেষে কমিটি রিপোর্ট প্রদান করে। রিপোর্টে ১ জন জেনারেল ম্যানেজারসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হয়। তারা হলেন-এমজিএমসিএলের তৎকালীন জেনারেল ম্যানেজার আবু তালেব ফরাজী, ডিজিএম রফিজুর ইসলাম ও মতিয়ার রহমান।
তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা যায়, এই সিন্ডিকেট শুধু বিস্ফোরক আমদানি করে কমিশন বাণিজ্য করত তা নয়। তাদের বিরুদ্ধে নিুমানের, পচা-গলা ও আমদানি নিষিদ্ধ বিস্ফোরক আমদানিরও প্রমাণ মিলেছে। চরম ত্রুটিপূর্ণ ও নিুমানের এসব বিস্ফোরক আমদানি করে তারা পুরো খনিকে ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছিল।
তদন্ত কমিটির একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুগান্তরকে বলেন, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তারা সুপারিশ করলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তদন্ত করতে গিয়ে তারা জানতে পেরেছেন, এই সিন্ডিকেট খনির মালামাল আমদানি নিয়েও বড় ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি করেছে। কমিশন বাণিজ্যের কারণে সিন্ডিকেট প্রায়ই কৌশলে প্রয়োজনীয় মেশিনারিজ, ইকুইপমেন্টের জোগান বন্ধ করে দিত। এর আগেও এই সিন্ডিকেট চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও সিদ্ধান্ত না দেওয়ায় ১১ মাসের বেশি সময় ঠিকাদার কাজ না করে বসেছিল।
সূত্র জানায়, এতকিছুর পরও অভিযুক্ত কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি পেট্রোবাংলা। শাস্তি হিসাবে তিনজনকে শুধু অন্যত্র বদলি করা হয়েছে। যার কারণে এই সিন্ডিকেট এখনো খনির বিরুদ্ধে নানা অপতৎপরতা চালাচ্ছে।
বর্তমানে মধ্যপাড়া গ্রানাইড মাইনিং কোম্পানির খনি থেকে পাথর উত্তোলন করছে বেলারুশের ঠিকাদার জার্মানিয়া স্ট্রেস্ট কনসোর্টিয়াম (জিটিসি)। চুক্তি অনুযায়ী পাথর উত্তোলনের জন্য যাবতীয় মেশিনারিজ, ইকুইপমেন্ট ও বিস্ফোরক জোগান দেবে এমজিএমসিএল। আর প্রতিদিন গড়ে ৫ হাজার ৫০০ টন পাথর উত্তোলন করবে জিটিসি। সংশ্লিষ্টরা জানান, গত সাড়ে ৪ মাস খনি বন্ধ থাকায় ঠিকাদার কোম্পানিকে ১০০ কোটি টাকার বেশি লোকসান গুনতে হয়েছে। একই সঙ্গে সরকারেরও বিপুল অঙ্কের রাজস্ব ক্ষতি হয়েছে। পাথরের অভাবে বন্ধ রাখতে হয়েছে দেশের অনেক মেগা প্রকল্প।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) চেয়ারম্যান ও অতিরিক্ত সচিব নাজমুল আহসান যুগান্তরকে বলেন, আগে নানা কারণে ২-৩ মাস পরপর বিভিন্ন বিস্ফোরকদ্রব্য ও কাঁচামাল আমদানি করতে হতো। যার কারণে নানা সমস্যা হচ্ছিল। এখন এর স্থায়ী সমাধান হয়েছে। আশা করছি বিস্ফোরকের কারণে আর খনি বন্ধ হবে না।