ডেস্ক নিউজ
রুপসা তৃতীয় লিঙ্গের একজন মানুষ। তার এক ভাই, দুই বোন। হিজড়া হওয়ায় অল্প বয়সেই বাড়ি থেকে বের হতে হয় তাকে। সম্প্রতি তার ভাই-বোনরা মুসলিম উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী সম্পত্তির ভাগ পেয়েছেন। রুপসাও তার বাবার কাছে গিয়ে সম্পত্তির ভাগ চেয়েছেন। বাবা তাকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, যেহেতু লিঙ্গ পরিচয় নেই তাই তাকে সম্পত্তি দেয়া সম্ভব নয়। ভাই-বোনরাও মারধর করে তাকে বের করে দিয়েছে। হিজড়া হওয়ার কারণে বাবা-মায়ের সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হয়েছেন রুপসা। সম্পত্তির ভাগ চেয়ে আন্দোলনও করেছেন। লাভ হয়নি। মামলা করে কোন লাভ হবে না- এমন ধারণা থেকে তিনি আইনগত পদক্ষেপও নেননি। বাংলাদেশে হিজড়ারা তাদের বাবা-মায়ের সম্পত্তির ভাগ পাচ্ছেন না। বর্তমান সরকার হিজড়াদের তাদের বাবা-মায়ের সম্পত্তির ভাগ দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। প্রথমে ডাক্তারী পরীক্ষার মাধ্যমে আসল ও নকল হিজড়া শনাক্ত করা হবে। এরপর প্রয়োজনে ডিএনএ পরীক্ষা করে একজন হিজড়ার শরীরে পুরুষ হরমোন রয়েছে, নাকি নারী হরমোন রয়েছে সেটি নিশ্চিত করা হবে। যদি জেনেটিক দিক দিয়ে ছেলে হয়, তাহলে তাকে মুসলিম শরিয়া আইন এবং সংবিধানের আলোকে ছেলে হিসেবে সম্পত্তির ভাগ দেয়া হবে। আর মেয়ে হলে সেই আলোকেই সম্পত্তির ভাগ দেয়া হবে।
২০২০ সালে মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী হিজড়াদের সম্পত্তি পাওয়ার কথা বলেছিলেন। হিজড়া সম্প্রদায় যাতে বাবা-মায়ের সম্পত্তিতে সমান ভাগ পায় এবং পরিবারে থাকতে পারে তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে নির্দেশনা দিয়েছিলেন। সম্প্রতি একটি সংবাদ সম্মেলনেও বিষয়টি তুলে ধরেছেন প্রধানমন্ত্রী। জানতে চাইলে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মোঃ আশরাফ আলী খান খসরু জনকণ্ঠকে বলেন, নীতিমালার কাজ চলছে। এটি বেটিং পর্যায়ে রয়েছে। দ্রুত হয়ে যাবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোন পরিবার যদি তার হিজড়া সন্তানকে অস্বীকার করে, তাহলে সেক্ষেত্রে ডিএনএ পরীক্ষা করে পরিচয় শনাক্ত করা হবে।
ধর্মীয় আইন কি বলছে ॥ বাংলাদেশে পারিবারিক সম্পত্তির ভাগাভাগির ক্ষেত্রে নিজ নিজ ধর্মের আইন ব্যবহার হয়ে থাকে। ইসলাম ধর্মে সম্পত্তি ভাগাভাগি হয় মুসলিম উত্তরাধিকার আইনের আওতায়। ১৯৬১ সালের মুসলিম উত্তরাধিকার আইন বাংলাদেশে কার্যকর রয়েছে। সেই আইনে হিজড়াদের সম্পত্তির ব্যাপারে সুস্পষ্ট করে কিছু বলা হয়নি। মুসলিম উত্তরাধিকার আইনে সন্তানদের কথা বলা হয়েছে। সন্তান মানে পুত্র এবং কন্যারা সম্পত্তির ভাগ পাবেন। বাংলাদেশে বিদ্যমান এই আইনে হিজড়া বা তৃতীয় লিঙ্গের ব্যাপারে সুস্পষ্ট করে বলা নাই। বিভিন্ন দেশে ইসলামী আইন বিশেষজ্ঞরা হিজড়াদের সম্পত্তির ভাগ দেয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন এবং অনেক দেশে তা অনুসরণও করা হয়। এ ব্যাপারে একটা সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হওয়া উচিত বলে মনে করছেন ইসলামী আইন বিশেষজ্ঞগণ। বাংলাদেশে হিন্দু আইনে ওই ধর্মাবলম্বীদের জন্য সম্পত্তির ভাগাভাগি যেভাবে হয়, তাতে কন্যা সন্তানরা বিয়ের পর বাবার সম্পত্তির ভাগ পান না। সেখানে হিজড়াদের ব্যাপারে কিছুই বলা নাই। তাই বিষয়টি নিয়ে আলোচনার প্রয়োজন বলেও মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সম্প্রতি হিজড়াদের উপদ্রব বেড়ে যাওয়ায় গত জুলাই মাসে ডাক্তারি পরীক্ষার মাধ্যমে আসল হিজড়া শনাক্তের উদ্যোগ নিয়েছিল সরকার। বিষয়টি তেমন একটা এগোয়নি। হিজড়াদের নিয়ে কাজ করে এমন কয়েকটি এনজিও এবং হিজড়া সম্প্রদায়ের পরিচালকরাও এটি চায় না। সমাজসেবা অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে, সম্প্রতি মানবাধিকার কমিশন থেকে তাদের কাছে একটি চিঠি এসেছে। চিঠিতে হিজড়াদের নিয়ে কাজ করা কয়েকটি এনজিও’র রেফারেন্স দিয়ে বলা হয়েছে, ডাক্তারি পরীক্ষা করতে গেলে হিজড়ারা ‘যৌন হয়রানির’ শিকার হতে পারেন। তাই লিঙ্গের ভিত্তিতে কিংবা পোশাক-আশাক দেখে আসল হিজড়া চিহ্নিত করা হোক। হিজড়াদের নিয়ে কাজ করা একাধিক সংগঠন ও হিজড়া সম্প্রদায়ের লোকেরা বলছেন, জেন্ডার কারও শরীরে নয়, জেন্ডার হচ্ছে মাথায়। চিন্তা-চেতনায়, চালচলন ও অনুভূতিতে। তাই পরীক্ষা করলে কোন হিজড়া হয় নারী, না হয় পুরুষ হিসেবে দেখাবে। এটি হরমোনের তারতম্যের কারণেই শরীরে দেখা যাবে। তাই পরীক্ষা কিংবা শনাক্তকরণের সময় চিকিৎসকের পাশাপাশি একজন সাইকোলজিস্ট/মানসিক রোগের চিকিৎসক ও লিঙ্গ বিশেষজ্ঞ রাখা দরকার।
পরিবারের সাপোর্ট পেলে জীবনটা সুন্দর হতো ॥ রাস্তা-ঘাট বা সিগন্যালে যারা হিজড়াগিরি করছেন, তাদের পরিবার বের করে না দিলেও সমাজের কারণেই তারা বাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন বলে দাবি করছেন। তারা বলছেন, এই জীবন আমরা চাই না, যেখানে পদে পদে বৈষম্য আর বঞ্চনার শিকার হতে হয়। একজন হিজড়া তার জীবনের কঠিন সময়ে, অসুস্থতার সময়ে এমনকি মৃত্যুর সময়ও আপনজনকে কাছে পায় না। এই কষ্টের কোন শেষ নাই। আমরাও প্রত্যেকে চেয়েছি পরিবারের সঙ্গে থাকতে, কিন্তু সম্ভব হয়নি। পরিবার যদি একটু সাপোর্ট দিত, তাহলে বাড়ি ছাড়তে হতো না। জীবনটা কত সুন্দর হতো। হিজড়ারা পারিবারিক সম্পত্তির ভাগ পাবেন এবং তারা বিতাড়িত না হয়ে পরিবারের সঙ্গেই থাকবেন, সরকারের এমন সিদ্ধান্তে মহাখুুশি তারা।
কাদের হিজড়া বলা যাবে ॥ সবার ধারণা, জন্মগতভাবে যে পুরুষ নয়, নারীও নয়- অর্থাৎ উভয় লিঙ্গের কেবল তাকেই হিজড়া বলে। যারা লিঙ্গ পরিবর্তন করে হিজড়ায় রূপান্তরিত হয়, তারা নকল হিজড়া। এমন দুটি ধারণা দেশে প্রচলিত আছে। হিজড়াদের নিয়ে কাজ করা সরকারী সংস্থা ও নীতি নির্ধারকরাও এমনটি মনে করতেন। বর্তমানে সেই ধারণা পাল্টে যাচ্ছে। অর্থাৎ জন্মগতভাবে উভয় লিঙ্গের মানুষ যেমন হিজড়ার মধ্যে পড়ে, আবার লিঙ্গ পরিবর্তন করলেও তাকে হিজড়া হিসেবে ধরতে হবে। কেননা, পুরুষ হয়ে জন্মগ্রহণ করলেও কথা-বার্তায়, হাঁটা চলায়, অঙ্গভঙ্গিতে, অনুভূতিতে কিংবা ভাল লাগায় পুরো মেয়েলি ভাব বা আচরণ থাকে, এমন অনেকে লিঙ্গ পরিবর্তন করেন। যাকে ট্রান্সম্যান বলা হয়। তেমনি নারী থেকেও লিঙ্গ পরিবর্তন করেন কেউ কেউ, তাদের ট্রান্সউইমেন বলা হয়। তাই লিঙ্গ পরিবর্তন করে যারা হিজড়ায় রূপান্তরিত হচ্ছেন তারাও হিজড়া।
তৃতীয় লিঙ্গের মানুষেরা বলছেন, হিজড়া কোন মানুষের পরিচয় না। হিজড়া হচ্ছে একটি কালচার বা সংস্কৃতি। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ বলতেও কোন কিছু নেই। জন্মগতভাবে কেউ যদি পুরুষ কিংবা নারী না হন, তাহলে তাকে আন্তঃলিঙ্গ বা উভয় লিঙ্গের মানুষ বলে। প্রত্যেক মানুষের মধ্যে লিঙ্গ পরিচয় জন্মগতভাবেই থাকে, সেটা হয়তো নারী/পুরুষের মতো স্পষ্ট নয়। স্পষ্ট নয় বলেই সেটাকে ‘ইন্টারসেক্স’ বলে। ইন্টারসেক্সের মানুষই প্রকৃত হিজড়া। আবার শারীরিকভাবে পুরুষ কিন্তু মানসিকভাবে নারী বৈশিষ্ট্যের অধিকারী, তাকেও হিজড়া বলতে হবে। হিজড়াদের এই মতামতের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন সমাজসেবা অধিদফতর ও উইমেন এ্যান্ড জেন্ডার বিশেষজ্ঞরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইমেন এ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. উম্মে বুশরা ফাতেহা সুলতানা জনকণ্ঠকে বলেন, শুধুমাত্র শারীরিক অসম্পূর্ণতা নিয়ে জন্ম নেয়া ব্যক্তিকে যে হিজড়া বলা হবে এমনটি নয়। এটা বৈশ্বিক দিক দিয়েও বলা যায় না। শারীরিকভাবে পুরুষ কিন্তু মানসিকভাবে নারী বৈশিষ্ট্য বা আত্মিক দিক দিয়ে তিনি যদি অনুভব করেন নারী, তাহলে তাকে হিজড়াই বলা চলে। আগে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ চাকরির কথা চিন্তাই করতে পারত না। এখন সরকার তাদের জন্য চাকরির সুযোগ তৈরির চেষ্টা করছে। তবে এক্ষেত্রে উপজাতি, প্রতিবন্ধী বা ভিন্নভাবে সক্ষমদের মতো কোটা রাখা যেতে পারে। হিজড়া শনাক্তকরণে শুধু শারীরিক দিকটাকে প্রাধান্য না দিয়ে তার মানসিক দিক ও জীবন ইতিহাসকেও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
জন্মগতভাবে নারী বা পুরুষ নন এই সংখ্যা দেশে খুবই কম। মূলত লিঙ্গ পরিবর্তনের মাধ্যমে যারা হিজড়া, তাদের সংখ্যা ৯৫ শতাংশের বেশি। তাই নকল হিজড়া বলেও কোন হিজড়া নেই বলে তাদের মত। সরকার ২০১৩ সালে হিজড়াদের ‘তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ’ হিসেবে ঘোষণা দিলেও হিজড়ারা এই পরিচয়ে থাকতে চাচ্ছে না। তারা চাচ্ছে, শনাক্তকরণের মাধ্যমে তাদের হয় নারী, না হয় পুরুষ ঘোষণা দেয়া হোক। আর স্বীকৃতি দিতে হলে উপজাতি, প্রতিবন্ধীসহ অন্যান্য কোটার মতো তাদের জন্যও কোটা সুবিধা রাখা হোক।
চাকরি হয়নি ওদের ॥ জন্মগত ছাড়াও লিঙ্গ পরিবর্তনকারীকেও হিজড়া হিসেবে গণ্য করতে হবে, স্বয়ং সরকারী সংস্থা এমনটি বললেও কেবল আসল আর নকলের সংজ্ঞার কারণে সরকারী ৩ সংস্থায় চাকরি হয়নি অর্ধশতাধিক হিজড়ার। জানা যায়, তারানা হালিম ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী থাকাকালীন ১০ জন হিজড়াকে মন্ত্রণালয়ে চাকরি দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। সেই অনুযায়ী হিজড়াদের অনেকে চাকরির আবেদনও করেন। সবকিছু শেষে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য হিজড়াদের নেয়া হয় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। ডাক্তারি পরীক্ষায় ১০ জনকে নকল হিজড়া বলে গণ্য করা হয়। তাই তাদের আর চাকরি হয়নি। একইভাবে পুলিশের গত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে ১১ জন হিজড়াকে নিয়োগ দেয়ার কথা ছিল। সবকিছু শেষে হিজড়াদের পরীক্ষা করতে গিয়ে দেখা যায়, এদের কেউ নারী, কেউ পুরুষ কিংবা কেউ লিঙ্গ পরিবর্তন করেছেন। তাই পুলিশেও ১১ জনের চাকরি হয়নি।
হিজড়াদের নিয়ে কাজ করা সমাজসেবা অধিদফতরেও চাকরি হয়নি ১২ জন হিজড়ার। ২০১৪ সালে অধিদফতরের অধীনে ছোটমনি নিবাসে শিশুদের দেখাশোনা ও রান্না-বান্না করার জন্য ১২ জন হিজড়া নেয়া হবে বলে অধিদফতর ঘোষণা দেয়। সেই আলোকে বেশ কয়েকজন হিজড়া আবেদনও করেন। সব পরীক্ষা শেষে হিজড়াদের ডাক্তারি পরীক্ষা করতে গেলে দেখা যায়, এদের কেউ পুরুষ, কেউ নারী। তাই ১২ হিজড়ার চাকরি হয়নি সমাজসেবা অধিদফতরেও। কাদের হিজড়া হিসেবে গণ্য করা হবে, এখন যেহেতু বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া গেছে। তাই ২০১৪ সালে ১২ জন হিজড়াকে কেবল নকল হিজড়া বলে চাকরিতে না নেয়ার সিদ্ধান্তটা ভুল ছিল বলে স্বীকার করছে সমাজসেবা অধিদফতর।
সমাজসেবা অধিদফতরের বেদে, অনগ্রসর ও হিজড়া জনগোষ্ঠী শাখায় উপ-পরিচালকের দায়িত্ব পালনকারী একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তখন চিকিৎসক যাদের হিজড়া বলেছে, আমরা তাকেই হিজড়া হিসেবে নিয়েছি। রক্ত পরীক্ষা করলে পুরুষ চলে আসে, পুরুষ হিসেবে দেখাচ্ছিল। শরীরে হরমোন কম-বেশি থাকলেও এটা আসে। তখন তেমনটিই হয়েছিল। বর্তমানে বোঝা যাচ্ছে, এখানে মনস্তাত্ত্বিক বিষয়টিকেও গুরুত্ব দিতে হবে। তাই হিজড়া শনাক্তকরণের ক্ষেত্রে শারীরিক গঠন ও মনস্তাত্ত্বিক বিষয় বিবেচনায় নিচ্ছে সরকার। যেহেতু একজন মানুষের লিঙ্গ থাকলেও তিনি শারীরিক ও মনস্তাত্ত্বিক দিকে দিয়ে হিজড়া, সেহেতু নকল হিজড়া বলতে কোন কিছু নেই বলে মনে করছে সমাজসেবা অধিদফতর। হিজড়ারাও বলছেন, হিজড়া যেহেতু একটি কালচার, সেহেতু কালচার নকল হতে পারে না। মূলত কর্মটা নকল বলে তাদের নকল হিজড়া বলে আখ্যায়িত করা হয়। হিজড়ারা ডাক্তারি পরীক্ষা করতে রাজি না হলেও সরকার যেহেতু তাদের সুযোগ-সুবিধা দেবে, সেহেতু ডাক্তারি পরীক্ষার মধ্যে দিয়েই হিজড়াদের নেয়ার কথা বলছে সমাজসেবা অধিদফতর।
হিজড়াদের সঠিক কোন পরিসংখ্যান নেই ॥ দেশে হিজড়া জনগোষ্ঠীর সঠিক সংখ্যা কোন সংস্থার কাছেই নেই। সমাজসেবা অধিদফতর ২০১৩ সালে এক জরিপে হিজড়া জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ১১ হাজারের বেশি বলে উল্লেখ করেছিল। চলতি বছরে পরিসংখ্যান ব্যুারোর পরিসংখ্যানে দেশের হিজড়াদের সংখ্যা ১২ হাজার ৬২৯ জন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। জরিপে যা-ই উঠে আসুক না কেন, বাস্তবে হিজড়াদের সংখ্যা আরও বেশি হবে বলে মনে করছেন খোদ জরিপ করা দুই সংস্থার কর্মকর্তারা। তাহলে জরিপে কম এলো কেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তারা মাঠ পর্যায়ে কাজ করা কর্মীদের দোষারোপ করছেন।
জনকণ্ঠের অনুসন্ধানে খোদ রাজধানীতে ১২ হাজার হিজড়ার তথ্য উঠে এসেছে। হিজড়া ও এদের নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলো বলছে, সারাদেশে হিজড়ার সংখ্যা আরও বেশি। তবে কোন সংস্থার কাছেই সঠিক তথ্য নেই। সমাজসেবা অধিদফতরের বেদে, অনগ্রসর ও হিজড়া জনগোষ্ঠী শাখায় দায়িত্বে থাকা উপ-পরিচালক মাইনুদ্দিন সরকার জনকণ্ঠকে বলেন, হিজড়াদের সংখ্যা নিয়ে গরমিল থাকায় তাদের উদ্যোগে পরিসংখ্যান ব্যুরো ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা সংস্থা আরেকটি জরিপ চালাবে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, হিজড়াদের জাতীয় পরিচয়পত্রের আওতায় আনার কাজ করছে সরকার। বর্তমানে তাদের হিসেবে ১১ হাজার হিজড়ার মধ্যে যাদের বয়স ৫০’র অধিক, তাদের মাসিক ৫০০ টাকা করে ভাতা দেয়া হচ্ছে। হিজড়াদের সন্তান-সন্তানাদিদের বিশেষ করে হিজড়ার পরিবারের সন্তানকে উপবৃত্তি দেয়া হচ্ছে। সেলাই, মোবাইল সার্ভিসিং, কম্পিউটার ট্রেনিং, পার্লারের ওপর ট্রেনিংসহ ২০/২৫ ধরনের প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। প্রশিক্ষণ শেষে এদের ১০ হাজার টাকা করে দেয়া হচ্ছে। এটি ৫০ হাজারে করার চেষ্টা চলছে। সমাজসেবা অধিদফতরের জরিপে উঠে আসা ১১ হাজার যে জন্মগত হিজড়া তা নয়, লিঙ্গ পরিবর্তন করেছেন এমনও রয়েছেন।
হিজড়াদের বেশ কয়েকজন গুরু মা বলছেন, সমাজসেবা অধিদফতর তাদের ডেরায় থাকা হিজড়াদের প্রায়ই প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন। প্রশিক্ষণ শেষে যে ১০ হাজার করে টাকা দেয়া হয়, তা দিয়ে কিছুই করা সম্ভব হয় না। অর্থের এই পরিমাণটা বাড়ানোর দাবি তাদের। তবে এই অর্থেই অনেকে সেলাই মেশিন কিনে নিজে স্বাবলম্বী হচ্ছেন, কেউ পার্লারে কাজ করছেন। তাদের দাবি, সরকারীভাবে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হোক।