ডেস্ক নিউজ
কোভিড-১৯ মহামারী ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে অর্থনীতি কিছুটা মন্থর হলেও দেশের মেগাপ্রকল্পগুলোর কাজ স্বাভাবিক গতিতেই এগিয়ে চলছে। এর মধ্যে ডিসেম্বরে উদ্বোধন হবে মেট্রোরেল ও কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মিত বঙ্গবন্ধু টানেল। কিছু মেগাপ্রকল্পের কাজ রয়েছে শেষ পর্যায়ে।
সরকারের প্রকল্প তদারকির দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠান ‘বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের’ (আইএমইডি) সেপ্টেম্বরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- মেগাপ্রকল্পের কাজের অগ্রগতি গত বছরের তুলনায় অনেক ভালো। পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নানও বলেছেন, ‘মেগাপ্রকল্পগুলোর কাজের অগ্রগতি ভালো। করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কার মধ্যেও মেগাপ্রকল্পের কাজ চলছে। এসব প্রকল্প দেশের অর্থনীতিতে যথেষ্ট প্রভাব ফেলবে। শুধু তাই নয়, জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।’ সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী জানান, ডিসেম্বরের মধ্যেই মেট্রোরেল ও বঙ্গবন্ধু টানেল চালু করা সম্ভব হবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।
আইএমইডির হালনাগাদ তথ্য বলছে, ডিসেম্বরে মেট্রোরেল প্রকল্পের উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশের উদ্বোধনের কথা রয়েছে। তবে উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত পুরো প্রকল্প শেষ হবে ২০২৪ সালের জুনে।
প্রাথমিকভাবে ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ে কাজটি সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও সম্প্রতি প্রকল্পটির ব্যয় ও মেয়াদ দুটোই বাড়ানো হয়েছে। সংশোধনের পর ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৩৩ হাজার ৪৭১ কোটি টাকা। ২০১২ সালের জুলাইয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ৫৯ দশমিক ৯১ শতাংশ। আর সার্বিক অগ্রগতি ৬৩ শতাংশে।
বঙ্গবন্ধু টানেল সম্পর্কে আইএমইডির প্রতিবেদন বলছে, ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের ৯১ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। এটি হলে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারের দূরত্ব ২০ থেকে ৩০ কিলোমিটার কমে আসবে।
কর্ণফুলী নদীর দুই পাড়ে চীনের সাংহাইয়ের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ গড়ে তুলতে টানেল প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে। নির্মাণকাজের দায়িত্বে আছে চীনা কোম্পানি ‘চায়না কমিউনিকেশন কনস্ট্রাকশন লিমিটেড’ (সিসিসি)।
প্রকল্পসংশ্লিষ্টদের তথ্যানুযায়ী, ৩ দশমিক ৩২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এই টানেলে প্রতিটি টিউব বা সুড়ঙ্গের দৈর্ঘ্য ২ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। একটির সঙ্গে আরেক টিউবের দূরত্ব ১২ মিটারের মতো। প্রতিটি টিউবে দুটি করে মোট চারটি লেন তৈরি করা হয়েছে। টানেলের পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে থাকছে ৫ দশমিক ৩৫ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক। এ ছাড়া ৭২৭ মিটার দৈর্ঘ্যরে একটি ওভারব্রিজ রয়েছে আনোয়ারা প্রান্তে।
পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। এটির বাস্তবায়ন মেয়াদ শুরু হয় ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে। শেষ হবে ২০২৪ সালের জুনে। গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পটির বাস্তবায়ন অগ্রগতি ৬৪ শতাংশ। একই সময়ে প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ২৫ হাজার ৩৪৯ কোটি ৫১ লাখ টাকা। প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৬৪ দশমিক ৫৯ শতাংশে।
৫০ হাজার ৩২৭ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে মাতারবাড়ি ১২০০ মেগাওয়াট আলট্রাসুপার ক্রিটিক্যাল বিদ্যুৎকেন্দ্র। আইএমইডির প্রতিবেদন বলছে, ২০১৪ সালের জুলাই থেকে শুরু হওয়া প্রকল্পটি প্রথম সংশোধনীর পর ২০২৬ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের কথা রয়েছে। এ বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পটিতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার ৫০১ কোটি টাকা। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৫৩ শতাংশ। প্রকল্পটির ভৌত অগ্রগতি ৬৬ শতাংশ।
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভৌত অগ্রগতি দাঁড়িয়েছে ৫২ শতাংশে। প্রকল্পের আওতায় এখন পর্যন্ত খরচ হয়েছে ৫৫ হাজার ৭১৮ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এ ক্ষেত্রে আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ৪৯ দশমিক ২৭ শতাংশ।
পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর প্রকল্পে গত জুলাই পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ৫৭৬ কোটি টাকা। আর্থিক অগ্রগতি ৮১ দশমিক ৭৫ শতাংশ। ভৌত অগ্রগতি ৮৭ শতাংশ।
১৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়ন হচ্ছে ১৩২০ মেগাওয়াট মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়ার প্রজেক্ট (রামপাল) বিদ্যুৎকেন্দ্র। ২০০৯ সালের জুলাই থেকে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন শুরু হয়। গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ১৩ হাজার ১২৮ কোটি টাকা। প্রকল্পের আর্থিক অগ্রগতি ৮৩ দশমিক ৫৬ শতাংশ। ভৌত অগ্রগতি ৮৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ। ২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
দোহাজারী-রামু হয়ে কক্সবাজার ও রামু-ঘুমধুম পর্যন্ত সিংগেল লাইন ডুয়েল গেজ রেলপথ নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি টাকা। প্রকল্পের মেয়াদ শুরু হয় ২০১০ সালের জুলাইয়ে। ২০২২ সালের জুনে কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে ৬ হাজার ৯৩৬ কোটি ৬ লাখ টাকা। সে হিসাবে প্রকল্পটির আর্থিক অগ্রগতি ৩৫ দশমিক ২৮ শতাংশ, তবে ভৌত অগ্রগতি ৭৫ শতাংশ।