নিজস্ব প্রতিবেদক:
নাটোরর গুরুদাসপুরে ক্রেতা বিক্রেতাদের হাঁকডাকে জমজমাট লিচুর হাট। ক্রেতা বিক্রেতাদের পদচারনায় উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরী হয়েছে উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের বেড় গঙ্গারামপুর বটতলা লিচুর হাট। এখান থেকে প্রতিদিন লিচু চলে যাচ্ছে দেশের প্রায় প্রতিটি জেলায়। নাটোর জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি লিচু উৎপাদিত হয় গুরুদাসপুর উপজেলায়। এ ছাড়া জেলার ছয়টি উপজেলাতেই কম-বেশি লিচু উৎপাদিত হয়।কেনাবেচায় নাটোরে গুরুদাসপুরের নাজিরপুর ইউনিয়নে গড়ে উঠেছে ১৫ থেকে ২০ টি লিচুর বাজার। সরেজমিন গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের বেড় গঙ্গারামপুর বটতলা মোড়ে লিচুর বাজার ঘুরে দেখা যায়, চাষিরা বাগান থেকে লিচু পেড়ে ভ্যান গাড়ীতে করে বিক্রির জন্য লিচু নিয়ে আসছে আড়তে। তারপর সেখান থেকে লিচু ক্রয় করছেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা পাইকেররা।
প্রতি মৌসুমে নাজিরপুর, সোনাপুর, জুমাইনগর, মামুদপুর, মোল্লা বাজার, বিন্যাবাড়ী, বিয়াঘাট, কাছিকাটা, ধামাইচসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে আগাম জাতের মোজাফ্ফর লিচু, বোম্বাই ও চায়না জাতের রসালো লাল রঙের লিচু আমদানি হয় এই হাটে।
মায়ের দোয়া বাণিজ্যালয়, ভাই ভাই ফল ভাণ্ডার, সততা ফল ভাণ্ডার, , মোল্লা ফল ভাণ্ডার, বিসমিল্লাহ ফল ভাণ্ডার,, মক্কা-মদিনা ফল ভাণ্ডার, সোনালি ফল ভাণ্ডার, ও তালুকদার ফল ভাণ্ডারসহ কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ টি লিচুর আড়ত রয়েছে।
মায়ের দোয়া বানিজ্যালয়ের স্বত্তাধিকারী মাহবুব ও ভাই ভাই ফল ভান্ডারের মোত্তালেব হোসেন জানান, উপজেলার একমাত্র নাজিরপুর ইউনিয়নেই প্রায় চার হাজার বিঘা জমিতে আগাম মোজাফ্ফর লিচুর চাষ হয়। বৈশাখের শেষ সপ্তাহ থেকেই এসব বাগানের লিচু ওই মোকামে আসতে শুরু করে। তবে এবারের আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় লিচুর ফলন ভালো হওয়ায় চাষিরা খুশি। এ ছাড়া প্রতিবছরের তুলনায় এবারে লিচুর দাম শুরুতেই কম হলেও পরে দাম বেড়েছে। এমন দাম পেলে লাভবান হবেন বলে মনে করেন তারা।
তারা আরো বলেন, এবারে প্রতি হাজার লিচু ১৪০০-১৮০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে ১৫ ট্রাক করে মোকাম থেকে লিচু সরবরাহ করা হচ্ছে।
লিচু মোকাম কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রতিদিন বেলা ১০টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত চলে বিভিন্ন মোকাম থেকে আসা লিচুর ঝুড়ি ট্রাকে বোঝাইয়ের কাজ। কুমিল্লার লিচু ব্যবসায়ী বরকত আলী ও হাজীগঞ্জের জাকির হোসেন জানান, সাত-আট বছর ধরে তাঁরা এই মোকামে লিচু ব্যবসা করছেন। প্রতি মৌসুমে এখান থেকে তাঁরা দুই থেকে আড়াই লাখ করে লিচু কিনে থাকেন। এলাকার লিচুর স্বাদ, রং ও আকার সবই ভালো।
এ বিষয়ে গুরুদাসপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হারুনুর রশিদ বলেন, মোজাফ্ফর লিচুর বৈশিষ্ট্য হলো এগুলো আগাম জাতের এবং সংখ্যায় গাছে বেশি ধরে। এতে পোকার আক্রমণ হয় না বললেই চলে।
গুরুদাসপুর উপজেলায় এবার ৪১০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের লিচুর চাষ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবার লিচুর চাষও বেশি হয়েছে। এবার চাষিদের উৎপাদিত লিচুর পরিমাণ সাড়ে তিন হাজার মেট্রিক টনের বেশী।
নাটোরে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলায় মোট ৯৬০ হেক্টর জমিতে লিচুর চাষ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে পাচ হাজার ৯০০ মেট্রিক টন লিচু।
নাটোরের পুলিশ সুপার সাইফুর রহমান বলেন, লিচু ব্যাবসায়ীদের নিরাপত্তা দিতে পুলিশ নিয়োজিত রয়েছে। বাহির থেকে আসা পাইকেররা যেন নিরাপদে তাদের লিচু ক্রয় বিক্রয় করতে পারে সেদিকে বিশেষ নজর রাখা হয়েছে। এছাড়াও সড়কে যেন কোন প্রকার চাঁদাবাজী ও হয়রানীর শিকার না হয় সেদিকেও তারা নজর রাখছে।
জেলা প্রশাসক আবু নাছের ভুঞাঁ জানান, লিচু ব্যবসায়ীরা যাতে কোন ধরনের সমস্যার মধ্যে না পড়ে সেই দিকে কড়া নজরদারি রাখা হয়েছে। এবং লিচু ব্যবসায়ীদের সব রকম সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।