নিজস্ব প্রতিবেদক:
সরকারি বিধিমোতাবেক ১০ শয্যার একটি ক্লিনিকে ৩ জন মেডিকেল অফিসার,একজন সার্বক্ষণিক আবাসিক মেডিকেল অফিসার এবং ৬ জন প্রশিক্ষিত (ডিপ্লোমা) সেবিকা (নার্স) থাকার কথা থাকলেও এর কোন শর্তপুরণ না করেই চলছে গুরুদাসপুরের কাচারী পাড়ায় অবস্থিত হাজেরা ক্লিনিক। মাঝে মধ্যে ভুল চিকিৎসা,অব্যবস্থাপনা, চিকিৎসকের অভাবসহ নানাবিধ করনে রোগীর মৃত্যু হলেও অদৃশ্য কারনে বন্ধ করা হয়না ক্লিনিক বা নেওয়া হয়নি কোন প্রশাসনিক ব্যাবস্থা ।
জানা গেছে, গুরুদাসপুর পৌর সদরের হাজেরা ক্লিনিকে রবিবার মধ্যরাতে শম্পা বেগম নামের এক প্রসুতি রোগী ভর্তি হন। পরদিন সোমবার সকাল ৭ টার দিকে সিজারিয়ান অপারেশনে ফুটফুটে এক কন্যা সন্তানের জন্ম দেন তিনি। কিন্তু ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনা ও সঠিক চিকিৎসার অভাবে শিশুটি মারা যাওয়ার অভিযোগ করেছেন স্বজনরা। বিষয়টি ধামাচাপা দিতে ওই পরিবারকে ভয়ভীতি দেখিয়ে দ্রুত সোমবারই শিশুটিকে দাফনের ব্যবস্থা করে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ। শম্পা বেগম গুরুদাসপুর পৌর সদরের চাঁচকৈড় মধ্যমপাড়া মহল্লার জাহিদুল ইসলামের স্ত্রী। ওই দম্পতির এটি ছিলো দ্বিতীয় সন্তান।
প্রসূতির মামী আফরোজা বেগম ও দেবর আবু সাঈদ অভিযোগ করে বলেন, সোমবার ভোরে খবর আসে শিশুর অবস্থা সংকটাপন্ন। খবর পেয়ে তারা ক্লিনিকে ছুটে গেলে সেখানকার সেবিকারা শিশুটিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য জেলা সদর হাসপাতালে নিতে বলেন। এ সময় ওই ক্লিনিকে কোন চিকিৎসক ছিলো না। একজন সেবিকা অক্সিজেন খুলে দেওয়ার কয়েক মিনিটের মধ্যে শিশুটির মৃত্যু হয়। সময়মতো চিকিৎসা পেলে শিশুটির হয়তো এমন করুণ মৃত্যু হতো না। তারা ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনায় শিশু মৃত্যুর অভিযোগে শাস্তি দাবি করেন।
এলাকার অনেকেই জানান,মাঝে মধ্যেই এই হাজেরা ক্লিনিকে রোগীর মৃত্যুর খবর শুনি। কিন্তু অদৃশ্য কারনে সবকিছুই রাতের আঁধারে ম্যানেজ হয়ে যায়। কি কারনে যে তারা ধরা ছোয়ার বাইরে থাকেন,কেন ক্লিনিক বন্ধ হয়না বা প্রশাসনিক ব্যাবস্থাও নেওয়া হয়না সেটা তাদের বোধগোম্য নয়। দ্রুত এ বিষয়ে ব্যাবস্থা গ্রহন করা না হলে আগামি এমন ঘটনা ঘটতেই থাকবে।
প্রসুতি রোগীর সিজার করেন তাড়াশ হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. আমিনুল ইসলাম সোহেল। তিনি ক্লিনিকের চিকিৎসক না থাকার কথা স্বীকার করে জানান, সুস্থ্য শিশুর জন্ম হয়েছিল। অভিভাবকদের অসচেতনতার কারণে শিশুটি মারা যেতে পারে।
হাজেরা ক্লিনিকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল ইসলাম সাগর বলেন, হাজেরা ক্লিনিকে আপাতত আবাসিক মেডিকেল অফিসার নেই। তিনি এবং তার ভাই চিকিৎসক সোহেল ও এ্যানেসথেশিয়া চিকিৎসক বাহাউদ্দিন মিলেই চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। নবজাতক মৃত্যুর বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন,সোমবার সকালে চিকিৎসক না থাকলেও সেবীকাদের (নার্স) মোবাইল ফোনে পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসক সোহেল। সেই চিকিৎসাই দেওয়া হচ্ছিল নবজাতকটিকে।
গুরুদাসপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মুজাহিদুল ইসলাম জানান, হাজেরা ক্লিনিকে শিশু মৃত্যুর খবর তিনি শুনেছেন। ওই ক্লিনিকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও প্রশিক্ষিত নার্স না থাকলে চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যাওয়া ঠিক হয়নি। বিষয়টি নিয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
নাটোরের সিভিল সার্জন মুহাম্মদ মশিউর রহমান জানান, বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসক না থাকা কিংবা অব্যবস্থাপনায় রোগীর মৃত্যুর বিষয় দুঃখজনক। খোঁজ নিয়ে দ্রুত প্রযোজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য-আমিনুল ইসলাম সোহেল তাড়াশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার। এরআগে একই ক্লিনিকে হার্নিয়া অপারেশনে রোগী মৃত্যুর অভিযোগে সে সময় তিনি বিভাগীয় শাস্তির আওতায় ছিলেন। অপর দিকে তার ছোট ভাই আমিরুল ইসলাম সাগর ক্লিনিকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তিনি নিজেকে চিকিৎসক দাবি করে আল্ট্রাসনোগ্রাম,অপারেশন এবং এলোপ্যাথিক চিকিৎসা দিচ্ছেন। সেই দাবী ও তার চিকিৎসাসেবা দেয়ার যোগ্যতা নিয়ে অনেকের প্রশ্ন রয়েছে।