নিজস্ব প্রতিবেদক:
নাটোরের সিংড়ায় গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ প্রতিযোগীতা উৎসবমুখর পরিবেশে উপভোগ করলো হাজার হাজার মানুষ। শুক্রবার সকাল থেকে ভীড় জমে সিংড়ার আত্রাই নদীর দুই পাড়ে। হাজার হাজার মা, ভাই,বোন সারাদিন নৌকা বাইচ প্রতিযোগীতা উপভোগ করলো। আর এই নৌকা বাইচ প্রতিযোগীতাকে কেন্দ্র করে নদী পাড়ে জমে উঠেছিল বিভিন্ন পসরা সাজিয়ে মেলা। সারাদিন ঘুড়ে বেড়ায় মনে হল সিংড়া যেন এক মিলন মেলায় রুপ নিয়েছিল।
নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতায় বাঘাবাড়ী, শাহজাদপুর, সিরাজগঞ্জ, উল্লাাপাড়া, পাবনা সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ছোট ও বড় মিলে ৩৪ টি নৌকা অংশ নেয়।
আয়োজকরা জানান, গ্রামবাংলার ঐতিহ্যকে বর্তমান প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতেই তাদের এই আয়োজন।
গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচকে বর্তমান প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে এবং তা টিকিয়ে রাখতে করোনাকালীন সময়ে বন্ধ থাকার পর আবারও আয়োজন করা হয় চলনবিল নৌকা বাইচ উৎসবের। এই উৎসবের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিল বাঘাবাড়ী, শাহজাদপুর, সিরাজগঞ্জ, উল্লাাপাড়া, পাবনা সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ছোট ও বড় মিলে ৩৪ টি নৌকা। আর এই নৌকাবাইচ উপভোগ করতে নদীর দুই তীরে ভীড় জমায় হাজার হাজার সব বয়সের নারী-পুরুষ, শিশু কিশোর। পাবনা ভাঙ্গুড়ার প্রভাস কুমার, সিরাজ গঞ্জের শহিদুল ইসলাম আব্দুল খালেকসহ প্রতিয়োগিতায় অংশগ্রহণকারীরা জানান, আগে নদী-নালা, খাল-বিল বর্ষাকালে পানিতে ভরে গেলে কোন কাজ না থাকায় তখনকার মানুষ নৌকা বাইচের আয়োজন করতো। কিন্তু এখন নদী-নালা ভরাট হয়ে যাওয়ায় ও অতিরিক্ত খরচের সামর্থ না থাকায় এই নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা হারিয়ে যেতে বসেছে। কিন্তু এখনও যদি কোথাও থেকে তাদের প্রতিযোগিতার জন্য ডাকা হয় সেখানেই তারা ছুটে যান। শুধুমাত্র পুরষ্কারের আশায় নয় বরং মানুষকে আনন্দ দিতে। প্রতিযোগিতায় পংকজ কুমারসহ বিজয়ীরা জানান, তারা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে জয়লাভ করে পুরষ্কৃত হয়ে খুব আনন্দিত। আয়োজক কমিটি যাতে এই প্রতিযোগিতা চলমান রাখেন তার দাবী জানান তারা। নয়ন কুন্ডু নামের এক স্থানীয় ব্যাক্তি জানান, এই নৌকাবাইচকে ঘিরে এলাকার প্রতিটি বাড়িতে আত্মীয়-স্বজন আসায় তাদের মধ্যে এক আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্ঠি হয়েছে যা ঈদ ও পূজাসহ বড় উৎসবের মত আনন্দঘন পরিবেশ সবার মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে। নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা দেখতে আসা কাউসার আহম্মেদ, সোনালী আক্তার সহ দর্শকরা জানান, আগে তারা দাদা নানার হাত ধরে এই নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা দেখতে যেতেন। কিছুদিন এটা বন্ধ থাকার পর আবারও শুরু হওয়ায় তারা বেশ আনন্দিত।
আয়োজক কমিটির সভাপতি সিংড়া পৌরসভার মেয়র জান্নাতুল ফেরদৌস জানান, বিভিন্ন এলাকা থেকে নৌকাগুলো প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে এসেছে। ঈদ বা পূজার মত সিংড়ার মানুষ আনন্দ উপভোগ করছে। যাতে করে গ্রামবাংলার প্রাচীন ঐতিহ্যগুলি হারিয়ে না যায় সেজন্য প্রতিবছর এই নৌকাবাইচ প্রতিয়োগিতার আয়োজন করা হয়।
প্রতিযোগিতা উদ্বোধক ও উদ্যোক্তা তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এমপি জানান, প্রধানমন্ত্রীর ভীষণ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য এবং স্মার্ট নাগরিক গড়ে তোলার জন্য বাংলাদেশের যে গ্রামীন সংস্কৃতি শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে এই নৌকাবাইচের আয়োজন করা হয়। যাতে করে তারা শেকরকে না ভুলে শিখরে উঠতে পারে।
প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জণ করে সিরাজগঞ্জের শহজাদপুরের স্বপ্নের তরী, দ্বিতীয় স্থান অধিকার করে শাহজাদপুরের বাংলার বাঘ, তৃতীয় স্থান অধিকার করে সিরাজগঞ্জের শাপলা এক্সপ্রেস ও চতুর্থ স্থান অধিকার করে শাহজাদপুরের নিউ উড়ন্ত বলাকা। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।