নিজস্ব প্রতিবেদক:
চলতি বছরের জানুয়ারী মাসের দিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পরিচয় হয় চীনা নাগরিক লি সি জাং এর সাথে নাটোরের কলেজ পড়ুয়া ফাতেমা খাতুনের। এরপর বিভিন্ন উপায়ে চলে তাদের আলাপ আলোচনা। সেখান থেকেই মন দেওয়া নেওয়া শুরু হয় চীনা নাগরিক লি সি জাং ও ফাতেমার। পরে ফাতেমা খাতুনকে বিয়ে করতে হাজার কিলো পাড়ী দিয়ে চীন দেশ থেকে নাটোরের প্রত্যান্ত একটি গ্রামে চলে আসেন লিসি জং। সেখানে এসে প্রথমে তার খ্রীষ্টান ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন লিসি জং। ধর্মন্তরিত হয়ে লি সি জং হয়ে যান আলি। এরপর ইসলামিক শরিয়া মোতাবেক ৭ লাখ টাকা দেনমোহর লিখে কাবিননামায় স্বাক্ষর করে বিয়ে করেন ফাতেমা খাতুনকে। ফাতেমা খাতুন নাটোর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর খোলাবাড়িয়া ইউনিয়নের বড়বাড়িয়া গ্রামের আবু তাহেরের মেয়ে ও নাটোর নবাব সিরাজ উদ দ্দৌলা সরকারী কলেজের ইসলামের ইতিহাসের ৩য় বর্ষের শিক্ষার্থী। ফাতেমা খাতুন তার স্বামী চীনা নাগরিক লি সি জংকে একজন সার্জন চিকিৎসক দাবী করেছেন। এমন ঘটনায় এলাকায় যেমন চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে অপরদিকে বিভিন্ন ধরনের গুঞ্জনও শোনা যাচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন সঠিকভাবে না জেনে বা যাচাই না করে একজন বিদেশী নাগরিকের সাথে এভাবে মেয়ের বিয়ে দেওয়া কতোটা যুক্তিযুক্ত। সদ্য বিবাহিত দম্পতি ও তার পরিবারের সদস্যদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে জামাইয়ের ভাষা। কারো সাথে কথা বলতে গেলেই তাকে ট্যান্সলেট করে কথা বলতে হচ্ছে। অধিকাংশ মানুষ তার কথা বুঝতে পারছেন না। তিনিও বাংলা ভাষা না জানায় পড়েছেন চরম অসুবিধায়।
এ বিষয়ে সদ্য বিবাহিত ফাতেমা বেগম বলেন, কলেজে পড়ার সময়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম উইচ্যাটের মাধ্যমে তার সাথে লি সি জং এর পরিচয় হয়। এরপর থেকে বিভিন্ন উপায়ে তার সাথে যোগাযোগ চলে তার। এরপর তার সাথে চ্যাট করতে করতে দুজন দুজনার প্রেমে পড়ে যান। প্রথম থেকেই লিসি জং তাকে নিয়ে একসাথে থাকার কথা বলতো। পরে তাকে বুঝিয়ে বিয়ের কথা বলতে লি সি জং রাজী হয়ে যায়। তাকে বাংলারেদশে এসে আমাকে বিয়ের করার কথা বলতে সে আসতে চায়। এরপর হঠাৎ গত বৃহস্পতিবার সে দেশে এসে আমার সাথে যোগাযোগ করে। এরপর তাকে ঠিকানা জানালে সে নাটোরে আমার বাবার বাড়ীতে চলে আসে। এরপর পরিবারের ইচ্ছায় আমাদের বিয়ে হয়। বিয়ের আগে সে নিজ ইচ্ছায় তার খ্রীষ্টান ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। সারাজিবন সুখে দূঃখে একসাথে কাটাবেন তার স্বামীর সাথে। তার স্বামী যেখানে থাকবেন তিনিও সেখানেই যাবেন বলে জানান তিনি।
ফাতেমার পরিবারের সদস্যরা জানান, গত বৃহস্পতিবার তার মেয়ের বন্ধু চীন থেকে বেড়াতে এসেছে শুনে তাদের ভালোই লেগেছিল। পরে তাদের সাথে কথা বলে জানা যায় তারা দুজন দুজনকে ভালোবাসে। ভালোবেসে ফাতেমাকে বিয়ে করতে সে চীন থেকে নাটোরে এসেছে। যেহেতু দুজন দুজনকে ভালোবাসে সেজন্য পরিবারের কেউ কোন অমত না করে তাদের বিয়ে দিয়ে দিয়েছে। বিয়ের আগে সবাই যখন জানতে পারেন লি সি জং একজন খ্রীষ্টান ধর্মের মানুষ তখন তাকে বিয়ের বিষয়ে সব বুঝিয়ে বললে সে তার ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে রাজী হন। এরপর ধর্মন্তরিত হয়ে তার নাম পরিবর্তন করে আলি নাম নিয়ে তাদের মেয়ে ফাতেমাকে বিয়ে করেন। সবকিছু এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে আলোচনা করেই করেছেন বলে দাবী তাদের।
এ বিষয়ে চীনা নাগরিক ও সদ্য বাংলাদেশী নাগরিককে বিয়ে করা চিকিৎসক পরিচয় দেওয়া লি সি জং এর সাথে কোনভাবেই কথা বলা সম্ভব হয়নি। কারন তার কোন ভাষা বুঝতে পারেনি এই প্রতিবেদক। তিনি যা বলঝেন তার বাংলা অনেক সময় মোবাইল ফোনে ট্যান্সলেট করে বুঝিয়ে দিচ্ছেন তার সদ্য বিয়ে করা স্ত্রী ফাতেমা খাতুন। ফাতেম খাতুন বলেন সে আমাকে ভালোবেসে বিয়ে করে অনেক খুশি হয়েছে। এখন সে সারাজিবন এক সাথে থাকতে চান। তবে সে কি বলছে তা নিয়ে সবারই একটু কৌতুহল রয়েছে।
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুজ্জামান কালু বলেন, তাদের মধ্য একটা ভালোবাসার সম্পর্ক হয়েছে। সেই সম্পর্কের পর ছেলেটি চীন থেকে এখানে এসছে। এসে ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে তারা বিয়ে করেছে। বিদেশ থেকে অনেকে এসে বাংলাদেশে বিয়ে করছে এ ঘটনা বিভিন্ন এলাকায় ঘটলেও এই এলাকায় এটাই প্রথম। তিনি তাদের সুখের জন্য দোয়া করেন। তবে স্থানীয় অনেকেই তাকে বলেছেন এভাবে একজন মানুষের সঠিক নাম পরিচয় না জেনে এভাবে বিয়ে দেওয়া কি সঠিক হয়েছে। আগে ছেলে পরিচয় প্রশাসনের মাধ্যমে যাচাই বাছাই করে তারপর বিয়ে দিলে হয়তো ভালো হত। এমন বিষয়ে জানতে চাইলে তিনিও এ বিয়য়ে একমত প্রশন করে বলেন, আসলে বিদেশী নাগরিক শুনেই সবাই তার সবকিছু দিয়ে দিতে আগ্রহ প্রকাশ করে। যার মেয়ে তারা যদি বিয়ে দিয়ে তাহলে একজন চেয়ারম্যান হিসেবে তার কি করার আছে। তবে এখানে অনেক গুরুত্বপুর্ন বিষয় থাকে যেগুলো যাচাই বাছাই করা উচিত ছিলো।