মোঃ আবু জাফর সিদ্দিকী, সিংড়া থেকে॥
নাটোরের সিংড়া উপজেলার সোনাপুর বটতলা লিচুর জমজমাট হাট বসছে। ফরমালিন মুক্ত বাজার হিসেবে ক্রেতাদের চাহিদাও বাড়ছে। প্রতিদিন লক্ষাধিক লিচু যাচ্ছে দেশের প্রায় ২০টি জেলায়। প্রতিদিন দুপুর হতেই বটতলা প্রাঙ্গণ ভড়ে যায় লিচুর স্বাদ ও গন্ধে। এবার উপজেলায় লিচুর ভালো ফলন হয়েছে। প্রথম দিকে ভালো দাম পেলেও পরে বৈরী আবহাওয়ার কারণে বাজারে দাম না পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন লিচু চাষী ও লিচু বাগান মালিকরা। তবে রসালো ও সুস্বাদু এই লিচু আকৃষ্ট করছে ভোক্তাদের। ফলে প্রকৃতির রসগোল্লা খ্যাত মৌসুমী ফলটি এখন সিংড়া ও গুরুদাসপুরে ব্যাপক হারে চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। লিচু সংগ্রহ, বাছাই, কেনা-বেচা আর বহনের কাজে মৌসুমী কর্ম-সংস্থানের সুযোগ হয়েছে শত শত মানুষের। লাভজনক হওয়ায় এই এলাকায় অন্যান্য আবাদের চেয়ে লিচু চাষে ঝুঁকে পরেছে কৃষকেরা। এ বছর উপজেলায় ১০৫ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে।
সোনাপুরের লিচু আড়তদার আব্দুল মান্নান জানান, বর্তমানে লিচু বিক্রি হচ্ছে ১০০০ থেকে ১৪০০ টাকা হাজার দরে। দাম কম হওয়ায় খুশি নন তারা। গতবার লিচুর দাম ২ হাজার টাকা ছিলো। কিন্তু এবারের দামে অসন্তোষ তারা। লিচু চাষী হানিফ আলী ও কয়েকজন চাষি জানালেন, মৌসুমের শুরুতে শিলা বৃষ্টি আর ঝড়ের কারণে লিচুর কিছুটা ক্ষতি হলেও পরে অনুকূল আবহাওয়া পাওয়ার কারণে লিচু আকারে বড় হয়েছে। কিন্তু গত কয়েকদিনের বৈরী আবহাওয়া ও কাল বৈশাখীর ঝড়ে বাগানের বহু লিচু রোদে নষ্ট ও ঝড়ে পরে গেছে। তারপরেও শুরুতে ভালো দাম পেলেও বর্তমানে বাজার ভালো না।
ঢাকার লিচু ক্রেতা বাদশা জানান, সোনাপুরের লিচু ভালো, এজন্য তিনি ঢাকা থেকে এখানে এসেছেন কিন্তু গত কয়েকদিন আগে ঢাকার কয়েকটি স্থানে সার্জনদের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। রাস্তায় তাদের চাঁদা দিতে হয় আবার কথা বললে গাড়ি থানায় নিয়ে যাবার হুমকি দেয়। গত সপ্তাহে চালকের সাথে কথা-কাটাকাটি হলে থানায় ট্রাক আটক করে নেয়ায় ৮৬ হাজার টাকার লিচু নষ্ট হয় বলে জানান তিনি। লিচু ব্যবসায়ী আবুল হোসেন জানান, তিনি ৭ বছর থেকে আড়ৎ চালান, প্রতি বছর ক্রেতা বিক্রেতার সংখ্যা বাড়ছে, দূর-দূরান্ত থেকে এসে লিচু কিনছে সাধারণ মানুষ। তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ লিচু আমদানী হয়। সোনাপুরে ৫টি বড় আড়ৎ রয়েছে। এর মধ্যে বিসমিল্লাহ্্ ফল ভান্ডার, মায়ের দোয়া ফল ভান্ডার, বন্ধু ফল ভান্ডার, সততা ফল ভান্ডার, আল্লাহ্র দান ফল ভান্ডার।
উপজেলা কৃষি অফিসার সাজ্জাদ হোসেন জানান, উপজেলায় ১০৫ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে। চামারী ইউনিয়নে লিচুর ফলন সবচেয়ে বেশি, দাম অনেকটা স্বাভাবিক। কারণ এটা লাভজনক ব্যবসা। সোনাপুর লিচুর আড়ৎ বিখ্যাত , সেখানে প্রতিদিন লক্ষাধিক লিচু আমদানি হয়।