ডেস্ক নিউজ
১৯৮১ সাল থেকে আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে রয়েছেন বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সবশেষ আওয়ামী লীগের ২১তম কাউন্সিলেও নবমবারের মতো তিনি দলটির সভাপতি নির্বাচিত হলেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকন্যা নির্বাচিত হওয়ার সময় সকলের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমি চাচ্ছিলাম, আমাকে একটু ছুটি দেবেন। আপনাদের ভাবতে হবে আমার বয়স হয়েছে। আমার বয়স এখন ৭৩। এবারও আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন।’
আবেগতাড়িত হয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘১৯৭৫ সালে মা-বাবা, ভাই-বোন সব হারিয়েছি। আপনজন যাদেরকে রেখে গিয়েছিলাম তারা আর কেউ নেই। আওয়ামী লীগকে আমার পরিবার হিসেবে নিয়েছি। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের ভালোবাসাই ছিল আমার চলার শক্তি।’
১৯৭৫ সালে যখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করা হয়, সে সময় বিদেশে অবস্থান করায় প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন শেখ হাসিনা এবং তার বোন শেখ রেহানা।
বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে আওয়ামী লীগ। এর প্রেক্ষাপটে নির্বাসিত জীবনে ভারতে অবস্থানকালে ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারিতে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পান। সেই থেকে তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে আসছেন এবং দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
শেখ হাসিনা কীভাবে আওয়ামী লীগের নেতা হয়ে উঠলেন সে প্রসঙ্গ উঠে আসে তার প্রয়াত স্বামী এম এ ওয়াজেদ মিয়ার রচিত ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ঘিরে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ’ বইতে।
বইয়ের বিবরণে বলা হয়, ১৯৮১ সালের ১৩-১৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ দ্বিবার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশনে হাসিনাকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করে। এরপর ঢাকা ও লন্ডন থেকে অনেকে টেলিফোনে হাসিনাকে অভিনন্দন জানান।
১৯৮১ সালে ১৭ মে দেশে ফেরেন শেখ হাসিনা। মেয়ে পুতুল ও আওয়ামী লীগের কয়েকজনকে নিয়ে ঢাকায় পৌঁছান তিনি। তখন জিয়াউর রহমান ক্ষমতায়। এই বছরই প্রথমবারের মত সভাপতি হিসেবে আওয়ামী লীগের হাল ধরেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। এরপর দীর্ঘ ৩৮ বছর ধরে দল পরিচালনা করছেন তিনি। এর মধ্যে অনেক প্রতিকূলতার মুখোমুখি হয়েছেন। এখন পর্যন্ত ২১ বার তাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়।
এর মধ্যে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট রাজধানীর বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশস্থলে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। এতে শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতা অল্পের জন্য বেঁচে যান। তবে আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমান এবং আরও ২৩ নেতাকর্মী নিহত এবং ৪০০ জন আহত হন।
এ ছাড়া লালদীঘির ময়দানে পুলিশ ও বিডিআরের গুলি, ১৯৮৯ সালের ১১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ভবনে হামলা, ১৯৯৯ সালে শেখ হাসিনা ও তার ছেলেমেয়েসহ ৩১ জনকে হত্যার পরিকল্পনা এমন আরও অনেক ঘটনার সাক্ষী তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভাগ্য তার সঙ্গী, এ কারণেই বেঁচে আছি।’
এখানেই শেষ নয়, এই দীর্ঘ সময়ে এরশাদের স্বৈরশাসন বিরোধী আন্দোলন, বিএনপির অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের চেষ্টার বিরুদ্ধে ১৯৯৫-৯৬ সালে আন্দোলন, ২০০১ সাল থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত চলা বিএনপি-জামায়াত সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর আন্দোলনে রাজপথে থেকে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দুই বছরের শাসনের বড় একটি সময় কারাগারে থাকতে হয়েছে তাকে। এ সময় ‘স্লো পয়জনিং’-এর মাধ্যমে তাকে হত্যার চেষ্টাও করা হয়।
অনেক চড়াই-উৎরাই, ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগকে আজকের অবস্থানে এনে দাঁড় করিয়েছেন। দৃঢ় মানসিকতা ও পরিকল্পনায় আজ এমন এক নেতৃত্বের অধীনে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বর্তমানে মানবসম্পদ সূচক, অর্থনৈতিক সূচক থেকে শুরু করে সকল ক্ষেত্রে দুর্দান্ত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা।
শেখ হাসিনার সফল নেতৃত্বের ফলেই আওয়ামী লীগ তিনবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসেছে। আওয়ামী লীগের এই শাসন আমলেই দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের নতুন মাত্রা সূচিত হয়েছে। আর বাংলাদেশ উন্নীত হয়েছে উন্নয়নশীল দেশে।