ডেস্ক নিউজ
সমুদ্রগামী জাহাজ সুষ্ঠুভাবে হ্যান্ডলিংয়ের সক্ষমতা অর্জনের লক্ষ্যে এবার ৭৬৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে মোংলা বন্দরে নিরাপদ চ্যানেল তৈরির উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এ উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়াতে জরুরি উদ্ধার কাজও পরিচালন করা সম্ভব হবে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ‘মোংলা বন্দরের জন্য সহায়ক জলযান সংগ্রহ’ নামের প্রকল্পটি হাতে নিচ্ছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি ইতোমধ্যে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় উপস্থাপনের উপযোগীও করা হয়েছে। একনেকে অনুমোদন পেলে ২০২২ সালের ৩০ জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ।
পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা বলেন, প্রকল্পটির প্রস্তাব পাওয়ার পর চলতি বছরের জুলাইয়ে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় প্রকল্পের জন্য বেশ কিছু সুপারিশ দেয়া হয়। সেসব সুপারিশ বাস্তবায়ন করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করা হয়েছে। ফলে প্রকল্পটি এবার একনেক সভায় উপস্থাপন করা হবে।
নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে বড় অবদান রেখে আসছে মোংলা বন্দর। সক্ষমতা ও ব্যবহার বাড়লে বন্দরটি দেশের অর্থনীতিতে আরো বেশি ভূমিকা রাখতে পারবে। সে কারণেই বন্দরটি ঘিরে বেশ কিছু উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন শুরু করেছে সরকার। খুলনা-মোংলা রেললাইন স্থাপন, খানজাহান আলী বিমানবন্দর নির্মাণ, রামপালে কয়লাভিত্তিক ১৩২০ মেগাওয়াট সক্ষমতার বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ, মোংলা বন্দর এলাকায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন ও মোংলা ইপিজেড সংরক্ষণ প্রভৃতি প্রকল্প এগিয়ে চলছে দ্রুতগতিতে। এছাড়া পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হলে সেটিও মোংলা বন্দরের ব্যবহারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। সরকার আশা করছে, ২০২০-২১ সালের মধ্যে এসব উন্নয়ন কার্যক্রম শেষ হবে।
সূত্র আরও জানায়, পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হলে ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের আমদানি-রপ্তানি পণ্য, বিশেষ করে তৈরি পোশাক মোংলা বন্দরের মাধ্যমে রপ্তানি হওয়ায় সহজ সুযোগ তৈরি হবে। ভারত-বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হলেও মোংলা বন্দরে নতুন নতুন পণ্য আমদানি-রপ্তানির দ্বার উন্মোচিত হবে। এছাড়া বাংলাদেশের সীমান্ত সংলগ্ন ভারত, নেপাল ও ভুটানের ট্রানজিট পণ্য এ বন্দরের মাধ্যমে রপ্তানি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে আগামী দিনগুলোতে মোংলা বন্দরের ব্যবহার বহুগুণে বাড়বে। মোংলা বন্দর ঘিরে গৃহীত প্রকল্পের সমীক্ষা প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, মোংলা বন্দরে ২০২৫ সালে ৮ লাখ ৭২ হাজার টিইউজে কন্টেইনার এবং ২০৪৯ সালে ৪৫ লাখ ৩২ হাজার টিইউজে কন্টেইনার। পাশাপাশি ৩০ হাজারেরও বেশি গাড়ি হ্যান্ডলিংয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পর বার্ষিক ৪৫ লাখ টন কয়লা কাঁচামাল হিসেবে আমদানি করতে হবে। সে হিসাবে ২০১৮-১৯ সালের পর এই বন্দরে প্রতিদিন জাহাজের আগমন-নির্গমন বাড়বে। এই সমুদ্রগামী জাহাজগুলো বন্দরে আনা-নেয়া, তীরে ভেড়ানোর জন্য বাড়তি সক্ষমতার প্রয়োজন হবে।
মন্ত্রণালয় বলছে, মোংলা বন্দরে জাহাজের আসা-যাওয়া বাড়লে সার্বিক সেবা নিশ্চিত করতে বন্দরের ১৪৫ কিলোমিটার চ্যানেলে নিয়মিত সার্ভের মাধ্যমে নাব্য নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি বন্দরে যাতায়াতকারী জাহাজগুলোর সুষ্ঠু হ্যান্ডলিং ও দ্রুত পাইলটিং এবং পাইলটদের নিরাপদ অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় জরুরি উদ্ধার কাজ পরিচালনার সক্ষমতাও থাকতে হবে। এর জন্য নিরাপদ চ্যানেল তৈরি জরুরি। আর এই নিরাপদ চ্যানেল তৈরিতেই বয়া ও অন্যান্য নৌ-সহায়ক যন্ত্রপাতি স্থাপনের কাজ পরিচালনার জন্য একটি পাইলট মাদার ভেসেল, দুটি টাগ বোট, একটি সার্চ এন্ড রেসকিউ ভেসেল, একটি সার্ভে এন্ড রিসার্চ ভেসেল ও একটি বয়া লেইং ভেসেল সংগ্রহের প্রস্তাব করা হয়েছে প্রকল্পে।