নাটোর-বগুড়া মহাসড়ক একটি সড়ক নয়। যেন মরণ ফাঁদ। সম্প্রতি কয়েকদিনের ব্যবধানে এই সড়কে প্রাণ হারিয়েছেন দুই শিক্ষকসহ পাঁচজন। গত এক বছরের পরিসংখ্যান অর্ধশতাধিক। সড়ক দূর্ঘটনার অন্যতম কারণ অপ্রশস্ততা। মহাসড়কের শ্রেণী অনুযায়ী সড়কের প্রশস্ততা সর্বনিম্ন ২৪ ফিট হওয়ার নিয়ম থাকলেও নাটোর-বগুড়া মহাসড়কের প্রশস্ততা মাত্র ১৮ফিট। দূর্ঘটনা রোধে দ্রুত সড়কটি প্রশস্ত করার দাবী জানিয়েছেন এই পথে চলাচলকারীরা।
সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, নাটোর-বগুড়া মহাসড়কটির দৈর্ঘ্য ৬৩ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৩২ কিলোমিটার নাটোর এবং ৩১ কিলোমিটার বগুড়ার অংশ। উত্তরাঞ্চলের সাথে দক্ষিণ ও পশ্চিমাঞ্চলে সড়ক পথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম এই মহাসড়কটি। প্রতিদিন এই সড়কে চলাচল করে বিপুর সংখ্যক যাত্রীবাহি বাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন পণ্যবাহী ভারী যানবাহন। গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কটি এখন একটি আতংকের নাম। সড়কের প্রশস্ততা কম থাকায় ওভারটেকিংয়ে করতে গিয়ে ঘটে বিপত্তি। সড়কটির পাশে নেই মানুষজন চলাচলের কোন রাস্তা। এছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকের কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে দূর্ঘটনা। অকালেই ঝড়ে যাচ্ছে তাজা প্রাণ। পঙ্গুত্ব বরণ করছে অনেকেই। দূর্ঘটনা রোধে দ্রুত সড়কটি প্রশস্ত করার দীর্ঘদিনের দাবি এই পথে চলাচলাকারীদের।
নাটোর টিভি রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান বলেন, নাটোর-বগুড়া মহাসড়কে রংপুর দিনাজপুরসহ লং রুটের গাড়িগুলো খুব দ্রুত গতিতে চলাচল করে। অথচ এই মহাসড়কটি খুবই সরু। এই মহাসড়কটি দ্রুত প্রশস্ত করা না হলে প্রতিনিয়ত একের পর এক প্রাণ ঝরতেই থাকবে।
ইলেক্টটনিক্স ব্যবসায়ী ইমরান বাবু জানান, এই মহাসড়কটি এতই অপ্রশস্ত যে দুইটা গাড়ি ওভারটেক করলে মোটরসাইকেল আরোহীদের চলাচল খুবই ঝুঁকির হয়ে দাঁড়ায়। মাঝে মধ্যেই সড়টিতে দূর্ঘটনায় মানুষজন আহত ও নিহত হচ্ছে। মানুষের জান মাল রক্ষায় সড়কটি প্রশস্ত করতে দ্রুত সরকারী প্রদক্ষেপ জরুরী।
ট্রাকচালক মোজাম্মেল হোসেন জানান, এই মহাসড়কটি দিয়ে পঞ্চগড়ের পাথর বোঝাই ট্রাকসহ রংপুর-দিনাজপুরগামী যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী যানবহন চলাচল করে। সে দিক থেকে এই সড়কটির গুরুত্ব অনেক। এ মহাসড়কটি প্রশস্তকরণসহ দ্রুত সংস্কার করা প্রয়োজন।
ঝলমলিয়া হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোজাম্মেল হক জানান, মহাসড়ক নিরাপদ রাখতে তৎপর রয়েছে হাইওয়ে পুলিশ। নির্ধারিত গতিবেগের চেয়ে বেশী গতির যানবাহনগুলো সনাক্তে ব্যবহার করা হচ্ছে স্পিডগান মেশিন। সেই সাথে সব ধরনের কাগজ ঠিকঠাক আছে কিনা তা নির্নয় করা হচ্ছে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন (আরএফআইডি) প্রযুক্তি। এছাড়াও চালক মাদকাসক্ত কিনা তা পরীক্ষা করতে এ্যালকোহল ডিটেক্টর মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে নাটোর বগুড়া মহাসড়কের প্রশস্ততা বাড়ালে দূর্ঘটনার পরিমান কমে আসবে। সড়কে মৃত্যুঝুঁকি নিরসনে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন এমনটাই প্রত্যাশা করেন তিনি।
নাটোর সড়ক বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী ইউনুস আলী জানান, মহাসড়কটি ৩৪ ফিট প্রশস্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে নাটোর অংশের ৩২ কিলোমিটারের জন্য প্রায় ৪০০ কোটি টাকার ডিপিপি (ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রোপোজাল) পাস হয়েছে। পরবর্তীতে প্রাক্কলন ব্যয় সংশ্লিষ্ট প্রজেক্ট ডিরেক্টর (পিডি) অফিসে পাঠানো হয়েছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যেই কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি।