খিচুড়ি রান্না শিখতে নয়, পুরো ব্যবস্থাপনা দেখতে কর্মকর্তাদের বিদেশ পাঠানোর প্রস্তাব করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন। মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা জানান।
খিচুড়ি রান্না শিখতে এক হাজার কর্মকর্তাকে বিদেশ পাঠানোর প্রস্তাব করা হয়েছে মর্মে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হলে বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চান সাংবাদিকরা। খিচুড়ি রান্না প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশে পাঠাচ্ছেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে সিনিয়র সচিব বলেন, ‘সেটার জন্য কিন্তু আমরা বিদেশে লোক পাঠাচ্ছি না। এ প্রকল্পটি এখনও অনুমোদন হয়নি। গতকাল পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যের সভাপতিত্বে এটার পিইসি মিটিং ছিল। মিটিংয়ে সেটির বিষয়ে আমাদের কাছে কিছু কোয়ারি করেছে। সেগুলোর আমরা জবাব দেবো। জবাবের পরে যদি তারা সন্তুষ্ট হয়, তাহলে একনেকে উত্থাপিত হবে। একনেকে অনুমোদিত হলে জানুয়ারি থেকে বাস্তবায়ন করতে পারবো। সুতরাং আমরা খিচুড়ি রান্না করার জন্য কোনও কর্মকর্তা বা কর্মচারীকে বিদেশে পাঠাচ্ছি না। আমরা টাকাও চাই না এটার জন্য। কোনও একটা পত্রিকা লিখেছে যে ৫/১০ কোটি টাকা চেয়েছি, নো।’
সিনিয়র সচিব বলেন, ‘এটা একটা বিশাল কর্মযজ্ঞ। ৬৫ হাজার ৬২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক কোটি ৪০ লাখ শিক্ষার্থীর জন্য মিড ডে মিল চালু করতে হবে। কীভাবে ম্যানেজ করবো? সেই ম্যানেজমেন্ট দেখার জন্য আসলে যে সমস্ত উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশে এই ব্যবস্থা চালু আছে সেই ব্যবস্থা দেখার জন্য এবং দেশে-বিদেশে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য কম্পোনেন্ট রেখেছি সক্ষমতা অর্জনের জন্য। খিচুড়ি রান্না করার জন্য আমরা কোনও কর্মকর্তা বা আমরা বিদেশে যাচ্ছি না।’
সিনিয়র সচিব বলেন, ‘মন্ত্রিসভায় স্কুল ফিডিং পলিসি অনুমোদিত হয়েছে। এই পলিসির ভিত্তিতে ১৯ হাজার ২৯৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প পরিকল্পনা কমিশনে দাখিল করেছি। বর্তমানের প্রকল্পটি ১০৪টি উপজেলায়। সেটি ৩১ ডিসেম্বর শেষ হবে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারে পর্যায়ক্রমে ২০২৩ সালের মধ্যে দেশের সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মিড ডে মিল চালু করা হবে। সেই নির্বাচনি ইশতেহারকে সামনে রেখে আমরা ২০২৩ সাল পর্যন্ত একটা প্রকল্প প্রণয়ন করে দাখিল করেছি।’
এই প্রকল্পে দুটি বিষয় আছে উল্লেখ করে সিনিয়র সচিব বলেন, ‘বাচ্চাদের আমরা দুপুর বেলা খাবার দেবো। খাবারটা হবে দুই ধরনের। তিন দিন বিস্কুট এবং তিন দিন রান্না করা খাবার। বর্তমানে ছয় দিন বিস্কুট দেওয়া হয়। রান্না করা খাবারের মধ্যে খিচুড়িটি সবচেয়ে প্রোটিন সমৃদ্ধ।’
তিনি বলেন, ‘আর যারা এটি বাস্তবায়ন করবেন, আমাদের প্রধান শিক্ষক, কর্মকর্তা যারা মাঠ পর্যায়ে আছেন, তাদের সক্ষমতার জন্য প্রত্যেকটা প্রকল্পে দেশে এবং বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রেখেছি। প্রত্যেক প্রকল্পে এ ধরনের একটা কম্পোনেট থাকে। এই কম্পোনেন্টে আছে যে, এক হাজার কর্মকর্তাকে বিভিন্ন দেশে যে স্কুল ফিডিং চালু আছে, সেখানে পাঠানো হবে। বিভিন্ন দেশে যে স্কুল ফিডিং চালু আছে যেমন আমাদের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী এবং আমাদের এডিশনাল সেক্রেটারি আমাদের যাওয়ার কথা ছিল, কেরালা, দিল্লিতে। কীভাবে বিভিন্ন দেশে মিড ডে মিল চালু আছে, কীভাবে তারা ম্যানেজ করছে সেই বিষয়গুলোতে অভিজ্ঞতা অর্জন করার জন্য। একটা কম্পোনেট আছে বিদেশে কর্মকর্তাদের যেয়ে প্রশিক্ষণ নিয়ে আসে।’
যারা চালু করেছে তাদের নিয়ে এসে প্রশিক্ষণ করা যাচ্ছে না কেন−প্রশ্নে সচিব বলেন, ‘যে সমস্ত দেশ চালু করেছে সেখানে অভিজ্ঞতাটা দেখার থাকে, এটা তো একদিনে হয়নি। তারা অনেক দিন ভুল-ভ্রান্তি সংশোধন করে কীভাবে পারফেক্টলি কাজ করছে। সেই অভিজ্ঞতা অর্জনের একটা প্রস্তাব, এটা পরিকল্পনা কমিশন এবং একনেক অনুমোদন না করলে থাকবে না। ভারত নিশ্চয় কোনও দেশকে ফলো করেছে, তাই না। মানসম্মত শিক্ষা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে কোনও কোনও দেশকে তো আমরা ফলো করি।’
তিনি বলেন, ‘প্রশিক্ষণে কত টাকা রাখা হয়েছে, এই মুহূর্তে বলতে পারছি না। দেখতে হবে।’
এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এক হাজার কর্মকর্তাকে কেন, আমাদের তো কত হাজার কর্মকর্তা, ৫০৯টি থানা থেকে একজন করে গেলেও তো ৫০৯ জন হয়, তাই না? কাজগুলো ফিল্ড লেভেলের কর্মকর্তারা বাস্তবায়ন করবেন, পিডিপি-৪ এ প্রত্যেক ব্যাচে ২০-২৫ জন করে পাঠাই। তারা সরেজমিনে গিয়ে সেটা দেখে এসে ইমপ্লিমেন্ট করবে, কীভাবে তারা স্কুল পর্যায়ে বাস্তবায়ন করছে। সেটার একটা ইমপ্যাক্ট হবে। একটা ভিডিও বা হ্যান্ডআউট ধরায় দেবো, সেটার থেকে সরেজমিনে দেখে আসার অনেক বিষয় আছে। শুধু প্রাথমিকের না, সব মন্ত্রণালয়ে প্রকল্পে বিদেশে প্রশিক্ষণগুলো দেখে আসার কম্পোনেন্ট আছে।’
তিনি বলেন, ‘যেখানে রান্না করা খাবার দিচ্ছি সেখানে ঝরে পড়ার হার একদম কমে গেছে, ৩ শতাংশের নিচে চলে এসেছে। বাচ্চাদের পুষ্টির পরিমাণ বেড়েছে, ভর্তির হার বেড়েছে। উপস্থিতির হার বেড়েছে। অপচয় কিনা−মিড ডে মিল চালু করার ক্ষেত্রে আমাদের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের থাকার কথা সেটা নাই। এটা একটু নতুন সিস্টেম। ভারতে যেখানে চালু আছে সেখানে কিচেন করা আছে, হাইজিন আছে। সেই জায়গাগুলো অর্জন করার জন্য প্রশিক্ষণের কোনও বিকল্প নাই। সেই কারণে আমি মনে করছি যে এটা কোনও অপচয় নয়, এটা বরং আমাদের সক্ষমতা, দক্ষতা, ইফিসিয়েন্সিকে বৃদ্ধি করবে।’
তিনি জানান, সরকারের একটি প্রভিশন আছে যে, কোনও প্রকল্পে স্ট্যাবলিশমেন্ট কস্ট, ফরেন ট্রেনিং, অভ্যন্তরীণ ট্রেনিং কোনোভাবেই ৮ শতাংশের ওপরে হবে না। প্রশিক্ষণের জন্য মোট প্রকল্প ব্যয়ের ০.২ শতাংশ।
সচিব বলেন, ‘দারিদ্র্যপীড়িত ১০৪টি উপজেলায় স্কুল ফিডিং পাইলট প্রকল্প, সেখানে আমরা বিস্কুট দিচ্ছি। ১৬টি উপজেলায় রান্না করা খাবার চালু আছে।’