ডেস্ক নিউজ
রাজধানীসংলগ্ন তাঁত ও কৃষিনির্ভর জেলা নরসিংদী। ১৯৮৪ সালে এ জেলা স্বীকৃতি লাভ করে। তাঁত কাপড়ের বিখ্যাত বাজার ম্যানচেষ্টারখ্যাত শেকেরচর বাবুরহাট এ জেলায় অবস্থিত। সবজি ভা-ার বলেও খ্যাতি রয়েছে নরসিংদীর। এ জেলায় প্রচুর পরিমাণে সবজি উৎপাদিত হয়। জেলার চাহিদা মিটিয়ে অন্যান্য জেলায় সরবরাহ হয়ে থাকে এ সবজি। জেলার সর্বত্র লেগেছে উন্নয়নের ছোঁয়া। সময়ের ব্যবধানে উন্নয়নযজ্ঞে এখন পাল্টে গেছে জেলার রূপ।
এ জেলায় ১৮ লাখ মানুষের বসবাস। ৬টি উপজেলা নিয়ে ৫টি সংসদীয় আসন রয়েছে এ জেলায়। বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে জেলার সর্বত্র। চরাঞ্চলের প্রতিটি গ্রাম এখন শহরের মতো বসবাসযোগী হিসেবে খ্যাতি পেয়েছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি থেকে শুরু করে প্রসার ঘটেছে ব্যবসা-বাণিজ্যে। জেলার বিভিন্ন গ্রামগুলোতে রাস্তাঘাট সুউচ্চ ভবন দেখলে মনে হয় শহরের বাইরে আলাদা আলাদা শহর। প্রতিটি গ্রামে রাস্তাঘাট নির্মাণ, বিদ্যুতায়ন, শিক্ষা, ধর্মীয় সামাজিক প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাকরণসহ সার্বিক উন্নয়ন কর্মকা- সাধিত হয়েছে। বিদ্যুত, রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন অবকাঠামোগত সুবিধা ভোগ করছেন এখন জেলাবাসীরা।
শেখ হাসিনা সেতু ॥ স্থানীয় সরকার অধিদফতর নরসিংদীর নির্বাহী প্রকৌশলী শেখ মোঃ আবু জাকির সেকান্দার জানান, চরবাসীদের দীর্ঘদিনের দাবির প্রেক্ষিতে নরসিংদীর মেঘনায় ৮০ কোটি ৬৬ লাখ ৮৭ হাজার টাকা ব্যায়ে ৬শ’ ৩০ মিটার দৈর্ঘ্য শেখ হাসিনা সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। ২০১১ সালে নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে ২০১৮ সালে সেতুটির নির্মাণকাজ শেষ হয়। নরসিংদী পৌরসভার সাবেক মেয়র কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, সেতুটি নির্মাণের ফলে চর এলাকার মানুষ এখন অনায়াসে রিক্সা, অটোরিক্সাসহ অন্যান্য যানবাহনযোগে নিজ নিজ গন্তব্যে আসা যাওয়া করতে পারছে। সেতু নির্মাণের পূর্বে ঝড়-বাদল উপেক্ষা করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চরাঞ্চলের লোকজন মেঘনা নদী পাড়ি দিতে হতো। অনেক সময়েই শোনা যেত ঝড়ের কবলে পড়ে মেঘনায় নৌকা ডুবিতে লোকজনের প্রাণহানি ঘটেছে। সেতুটি নির্মাণের ফলে মানুষ এখন স্বস্তিবোধ করছে এবং অনায়াসে যার যার বাড়িতে যাতায়াত করতে পারছে। এছাড়া সেতুর দুপাশে মনোরম পরিবেশে গড়ে উঠেছে রেস্তরাঁ, কফিশপ। ব্যক্তিগত উদ্যোগে বসানো হয়েছে বাচ্চাদের আনন্দ উপভোগের বিভিন্ন উপকরণ। প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত শহরের কোলাহল ছেড়ে লোকজন এখন মেঘনা নদী ও প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসে এ নদীতে।
নরসিংদী দুর্গম চর এলাকা নজরপুর ইউপি চেয়ারম্যান বাদল সরকারের দাবি, সেতুর আশপাশে প্রাকৃতিক পরিবেশে সরকারী উদ্যোগে বিনোদন কেন্দ্র গড়ে তোলা হলে শহর ও চরবাসীদের চিত্ত বিনোদনের পাশাপাশি অনেকের কর্মসংস্থান হবে।
নদী খনন ও বেড়িবাঁধ নির্মাণ ॥ পানি উন্নয়ন বোর্ড নরসিংদীর তত্ত্বাবধানে ৯শ’ ৩ কোটি ৪১ লাখ ১৭ হাজার টাকা ব্যয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী মেঘনা নদীসহ ৬টি নদীর খননকাজ এবং নদীর দুপাড়ে ২শ’ ৩৪ দশমিক ৪ কিলোমিটার শহররক্ষা বাঁধ ও বেড়িবাঁধ নির্মাণ করছে। এতে শহর ও গ্রামবাসীরা বন্যার পানিতে ভেসে যাওয়া থেকে রক্ষা পাবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড নরসিংদীর নির্বাহী প্রকৌশলী বিজয় ইন্দ্র শংকর চক্রবর্তী জানান, মেঘনা, ব্রহ্মপুত্র, পাহাড়িয়া, আড়িয়াল খাঁ, হাড়িধোয়া ও কলাগাছিয়াসহ ৬টি নদ-নদীর ৮০ ভাগ খননকাজ ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। মেঘনায় খননকাজ ও নদীর দুপাড়ে ২শ’ ৩৪ দশমিক ০৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ অব্যাহত রয়েছে।
ইউরিয়া সার কারখানা ॥ ১০ হাজার ৪শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল ইউরিয়া সার কারখানাকে আধুনিকায়ন করা হচ্ছে। কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রকল্প পরিচালক রাজিউর রহমান মল্লিক জানান, কারখানাটি আধুনিকায়নের কাজ ২০১৯ সালে শুরু হয়েছে। আগামী ২০২২ সালের ডিসেম্বরের দিকে আধুনিকায়নের কাজ শেষ হবে। কারখানাটি চালু হলে কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের কৃষকদের ইউরিয়া সারের চাহিদা মিটে যাবে।
জেলা হাসপাতাল ॥ গণপূর্ত বিভাগ নরসিংদী নির্বাহী প্রকৌশলী এ কে এম দিলদার হোসেন জানান, ৩৫ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে নরসিংদী ১শ’ শয্যাবিশিষ্ট জেলা হাসপাতালটি ২শ’ ৫০ শয্যায় উন্নীত করার লক্ষ্যে নতুন ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। ২০১৮ সালে শুরু হয়ে ভবন নির্মাণ কাজ চলতি বছরের ডিসেম্বরে শেষ হবে। নরসিংদীর সিভিল সার্জন ডাঃ মোঃ নুরুল ইসলাম জানান, হাসপাতালটির ভবন নির্মাণ শেষ হলে নরসিংদী ও আশপাশের জেলাবাসীদের জরুরী উন্নত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত হবে।
সড়ক ও মহাসড়ক উন্নয়ন ॥ নরসিংদী সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোফাজ্জল হায়দার জানান, মদনগঞ্জ-নরসিংদী সড়ক উন্নয়ন ও প্রশস্তকরণের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সড়কটি এখন চলাচল উপযোগী। অপরদিকে চলতি অর্থবছরে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও পাঁচদোনা-ডাঙ্গা সড়ক প্রশস্তকরণের কাজ চলতি অর্থবছরে শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। দুটি সড়কের কাজ সম্পন্ন হলে যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটবে।
পৌরসভা ॥ নরসিংদী পৌর মেয়র আমজাদ হোসেন বাচ্চু জানান, নরসিংদী পৌর এলাকায় ইতোপূর্বে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। রাস্তাঘাটসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে। আগামী দিনেও উন্নয়ন কাজ অব্যাহত থাকবে।
মাধবদী পৌর মেয়র মোশাররফ হোসেন প্রধান মানিক জানান, সরকারের দিক-নির্দেশনায় শিল্প সমৃদ্ধ মাধবদী পৌর এলাকায় উন্নয়নযজ্ঞ চলছে। আগামী দিনেও তা অব্যাহত থাকবে।
ঘোড়াশাল পৌর মেয়র শরিফুল হক জানান, পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল একটি শিল্প সমৃদ্ধ শহর। এখানে সরকারের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে রাস্তাঘাট অবকাঠামো নির্মাণ অব্যাহত রয়েছে।
জেলা পরিষদ ॥ নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ আঃ মতিন ভূইয়া জানান, বর্তমান সরকার মানুষের দুঃখ-বেদনার অবসান ঘটিয়ে একের পর এক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এ জেলার এমন কোন প্রতিষ্ঠান নেই উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। মসজিদ-মন্দির, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, রাস্তাঘাটসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন সর্বস্তরে সাধিত হয়েছে। সরকারের সদিচ্ছার কারণে কোভিড-১৯ মোকাবেলা সম্ভব হয়েছে। এজন্য উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে বাংলাদেশ এখন আন্তর্জাতিক মহলেও প্রশংসিত।
নরসিংদী জেলা প্রশাসক আবু নইম মোহাম্মদ মারুফ খান জানান, উন্নয়নের সকল ক্ষেত্রে সরকারের সক্ষমতা বেড়েছে। জেলার ৬টি উপজেলায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকা- চলছে।
নরসিংদীতে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক নির্মাণ, সরকারী মেডিক্যাল কলেজ নির্মাণ, পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়, কৃষি পণ্য রাখার জন্য একাধিক হিমাগার নির্মাণ, নরসিংদী সদর উপজেলার শ্রীনগর থেকে পার্শ্ববর্তী বাঞ্ছারামপুরের মরিচাকান্দি যাতায়াতে মেঘনায় ফেরি চালু করার দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা নরসিংদীবাসীর।