ডেস্ক নিউজ
আওয়ামী লীগ আমলে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে যারা সমালোচনা করছেন, তাদের বিএনপি আমলের ‘অপারেশন ক্লিনহার্ট’র কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
কক্সবাজারে পুলিশের গুলিতে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খানের মৃত্যুতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিএনপিসহ অন্যদের সমালোচনার প্রেক্ষাপটে রোববার এক আলোচনা সভায় বক্তব্যে ‘অপারেশন ক্লিন হার্ট’র প্রসঙ্গ তোলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, “এক্সট্রা জুডিসিয়াল কিলিংয়ের কথা আজকে সবাই বলে। সবাই ভুলে গেছে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় আসার পর অপারেশন ক্লিনহার্টের নামে কত মানুষকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে।”
২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় যাওয়ার পর সন্ত্রাস দমনে পরিচালিত ‘অপারেশন ক্লিনহার্টে’ বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটানোর অভিযোগ রয়েছে।
আওয়ামী লীগকে লক্ষ্য করে ওই অভিযান চালানো হয়েছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “রাজনৈতিক কার্যক্রম চালানোর পথ বন্ধ করে দিয়েছিল খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে।
“অপারেশন ক্লিনহার্টের নামে যত্রতত্র যেখানে সেখানে মানুষকে ধরে নিয়ে, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী থেকে শুরু করে যাকে যেখানে পেয়েছে নিয়ে হত্যা করেছে। আর সেই হত্যার বিচার হবে না।”
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের এই আলোচনায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে রাখা বক্তব্যে পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জিয়াউর রহমানের সম্পৃক্ততা এবং খুনিদের মদদ দেওয়ার জন্য খালেদা জিয়াকেও দায়ী করেন শেখ হাসিনা।
এরপর ক্ষমতাসীন এইচ এম এরশাদের শাসনামলের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, “জেনারেল এরশাদ এসেও সেই ২৪শে জানুয়ারির মিছিলে গুলি থেকে শুরু করে এমন কোনো ঘটনা নেই না ঘটিয়েছে।
“ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রতিনিয়ত বোমা-গুলির শব্দ। সারাদেশে একটা আতঙ্ক। আর নির্বাচন মানেই প্রহসন। কোথাও ব্যালটও লাগত না, ভোটও লাগত না। কথায় বলত- ১০টা হোন্ডা, ২০টা গুণ্ডা, নির্বাচন ঠাণ্ডা।”
বিএনপি ও জাতীয় পার্টির শাসনকালের সঙ্গে বর্তমান অবস্থার তুলনা করে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, “আজকে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর থেকে এদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। কারণ এটা জাতির পিতার কাছে আমাদের অঙ্গীকার।
“জাতির পিতার স্বপ্নই ছিল বাংলাদেশের মানুষ অন্ন পাবে,বস্ত্র পাবে,উন্নত জীবন পাবে। সেই উন্নত জীবন দেবার জন্য যা যা করণীয়, আমরা তা করব।”
করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে নিজের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, “এই কাজ করতে গিয়ে অনেকেই করোনা আক্রান্ত হয়েছে। কেউ আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়ে আবার মানুষের কাছে গেছে। আবার কেউ মৃত্যুবরণ করেছে।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রোববার আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় দলের শীর্ষ নেতারা
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রোববার আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় দলের শীর্ষ নেতারা
“আমাদের যে কত নেতাকর্মী এরই মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছে, আমি মনে করি আমাদের পার্টির থেকে সমস্ত তালিকাটা বের করা দরকার। একদম ইউনিয়ন, ওয়ার্ড পর্যন্ত আমি দেখেছি, কীভাবে আমাদের নেতাকর্মীরা ছুটে গেছে অসহায় মানুষের পাশে।”
“সরকার থেকে আমরা যেমন দিয়েছি, তারা নিজেরাও দিয়েছে। আর কোনো রাজনৈতিক দল বা কোনো সংস্থা বা কাউকে তো আমরা এইভাবে দেখিনি। ঠিক মানুষের জন্য এভাবে নিজেকে অকাতরে বিলিয়ে দেওয়া। সেটা কিন্তু আমরা বিলিয়ে দিয়েছি আমাদের নেতাকর্মীরা,” বলেন তিনি।
করোনাভাইরাস মহামারীর পাশাপাশি বন্যা দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব ফেললেও তা থেকে উত্তরণে সরকার কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
“আমি জানি এইবার বন্যায় অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নদী ভাঙনে তারা আক্রান্ত। তাদের জন্য আমরা বিভিন্ন ব্যবস্থা নিচ্ছি। প্রতিটি জায়গায় একটি মানুষও যেন গৃহহারা না থাকে সেইভাবে যা করার আমরা করে যাব।”
বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, “পিতা তোমায় কথা দিলাম তোমার বাংলার দুঃখী মানুষের মুখে আমরা হাসি ফোটাব। এই বাংলা বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে চলবে। এই বাংলার মানুষ উন্নত জীবন পাবে, এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা, এটাই আমাদের শপথ।”
গণভবন থেকে এই আলোচনা সভায় যুক্ত হয়ে বক্তব্য রাখেন শেখ হাসিনা। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক,শাজাহান খান,জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, হাছান মাহমুদ,আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম,সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, আফজাল হোসেন, শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সাখাওয়াত হোসেন শফিক, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ,বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন।