দীর্ঘ দিন অপেক্ষার পর অবশেষে শনিবার থেকে কাতারের রাজধানী দোহায় শুরু হতে যাচ্ছে আফগানিস্তান সরকার ও বিদ্রোহী গোষ্ঠী তালেবানের মধ্যকার আলোচনা। বৃহস্পতিবার (১০ সেপ্টেম্বর) কাতারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, সর্বশেষ বাধা হিসেবে ছয় তালেবান সদস্যের মুক্তির বিষয়টি সমাধান হয়েছে। আলোচনা শুরুর কথা নিশ্চিত করেছে তালেবান কর্তৃপক্ষও। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
কাবুল থেকে আইআরআইবি’র সংবাদদাতা জানিয়েছেন, কাতারে তালেবানের রাজনৈতিক দপ্তরের মুখপাত্র মোহাম্মাদ নাঈম ওয়ারদাক তাদের এ প্রস্তুতির কথা ঘোষণা করেছেন। কাতারে অর্জিত সমঝোতা অনুযায়ী আফগান-আফগান আলোচনা শুরু করতে তালেবান প্রস্তুত রয়েছে। ওয়ারদাক জানান, আফগানিস্তানের জাতীয় স্বার্থ ও ইসলামি মূল্যবোধ রক্ষা করার লক্ষ্যে তালেবান সারাদেশে শান্তি ও প্রকৃত ইসলামি শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চায়।
শনিবার থেকে কাতারের রাজধানী দোহায় শুরু হচ্ছে আফগান সরকারের সঙ্গে তালেবানের শান্তি বৈঠক। সব ঠিক থাকলে বৈঠকে যোগ দেবেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। যদিও ছয় জন তালেবান বন্দিকে নিয়ে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত আলোচনা হয়েছে তালেবান এবং আফগান প্রতিনিধিদের মধ্যে। তাঁদের নিয়ে কী করা হবে তা নিয়ে দ্বিমত থাকায় বৈঠকে বসতে পারছিল না দুই পক্ষ।
কাতারের প্রশাসন জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার দুই পক্ষ সিদ্ধান্ত নেয়, ওই ছয় বন্দিকে কাতারে নিয়ে আসা হবে। সেই মতো শুক্রবার তাদের নিয়েও আসা হয়েছে। আপাতত কাতারের জেলেই বন্দি থাকবেন তাঁরা। বৈঠকের পর তাঁদের নিয়ে কী করা হবে, সেই সিদ্ধান্ত হবে। বস্তুত, এই বন্দি বিনিময়ের জন্যই এতদিন ধরে বৈঠক স্থগিত ছিল। গত মার্চ মাসে আফগান সরকারের সঙ্গে তালেবানের বৈঠকে বসার কথা ছিল। কিন্তু পাঁচ হাজার তালেবান এবং এক হাজার আফগান সেনাকে ছাড়ার ব্যাপারে দুই পক্ষ সম্মত হতে পারছিল না। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক চাপও ছিল।
অস্ট্রেলিয়া এবং ফরাসি প্রশাসন কয়েকজন তালেবান বন্দির মুক্তির বিরোধিতা করেছিল। কারণ তাঁদের হাতে অস্ট্রেলীয় এবং ফরাসি নাগরিকের মৃত্যু হয়েছিল। জটিলতা তৈরি হলেও শেষ পর্যন্ত তার মধ্য থেকেও বেশ কিছু তালেবান জঙ্গিকে ছেড়ে দেয় আফগান প্রসাসন। কিন্তু ছয় বন্দিকে নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়েছিল।
আফগানিস্তানের দ্বিতীয় ভাইস প্রেসিডেন্ট সুরুর দানিশ গতকাল এ সম্পর্কে বলেছেন, আফগান-আফগান আলোচনার পথে সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করেছে কাবুল সরকার; কাজেই সরকার আশা করছে তালেবান যতশীঘ্র সম্ভব আলোচনার টেবিলে ফিরে আসবে।
এদিকে আফগানিস্তানের গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, আফগান সরকারের পক্ষ থেকে তালেবানের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য আব্দুল্লাহ আব্দুল্লাহর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল আজ কাতার যাবে।
তালেবান গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে মার্কিন সরকারের সঙ্গে আলোচনা করলেও কাবুল সরকারর সঙ্গে আলোচনায় বসতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছিল। আফগান কারাগারে আটক সকল তালেবান বন্দিকে মুক্ত করা ছিল আলোচনায় বসতে তাদের অন্যতম শর্ত। সম্প্রতি হাজার হাজার তালেবান বন্দিকে মুক্তি দিয়ে আফগান সরকার তালেবানের সে শর্ত পূরণ করেছে।