নিজস্ব প্রতিবেদক:
আজ ১৩ ডিসেম্বর নাটোরের লালপুর মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে পাক হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে লালপুরে স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা ওড়ানো হয়। ১২ ডিসেম্বর লালপুর থানা আক্রমণ করে সেখান থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করে মুক্তিযোদ্ধারা। ১৩ ডিসেম্বর লালপুরের মহেশপুর এলাকায় মুক্তিকামী মানুষের সাথে পাক হানাদার বাহিনীর সম্মুখ যুদ্ধে ছয়জন পাকসেনা ও একজন মুক্তিযোদ্ধা সহ ৩৬ জন মুক্তিকামী মানুষ নিহত হয়। লালপুরে হানাদার বাহিনীর হত্যাযজ্ঞের বিভৎসতায় এখন আঁতকে উঠেন এলাকার মানুষ। মুক্তিযোদ্ধা খন্দকার আনোয়ার হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা তসলিম উদ্দিন শেখ ও লালপুরের ময়না গ্রামের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আলী মোল্লার ছেলে আবদুল কুদ্দুস মোল্লা জানান, লালপুরের বিভিন্ন এলাকায় যুদ্ধ হয়। ১৯৭১ সালের ৩০ মার্চ লালপুরের ময়না গ্রামে প্রথম হামলা চালায় পাকহানাদাররা। সেখানে সম্মুখযুদ্ধে মুক্তিসেনারা দেশীয় অস্ত্র ও থ্রি নট থ্রি রাইফেল নিয়ে পাক হানাদারদের প্রতিহত করে। এসময় পাকসেনারা একটি আমগাছের সাথে সাতজন মুক্তিযোদ্ধাকে বেঁধে হত্যা করে। ৫ মে পাকবাহিনী, স্থানীয় অবাঙালি ও রাজাকারদের সহযোগিতায় নর্থ বেঙ্গল চিনিকল এলাকা ঘেরাও করে। তারা মিলের তৎকালীন প্রশাসক লে. (অব.) আনোয়ারুল আজীমসহ কর্মরত প্রায় দুইশ’ কর্মকর্তা , শ্রমিক ও কর্মচারীদের ধরে এরে চিনিকল এলাকার পুকুর পাড়ে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করে। এর মধ্যে ৪৩ জনের নাম পাওয়া যায়। ঐ দিন গোপালপুর বাজারে নৃসংসভাবে আরো ১২ জনকে গুলি করে হত্যা করে পাক সেনারা। ৩০ জুলাই বিলমাড়িয়া হাট ঘেরাও করে বেপরোয়া গুলিবর্ষণ করে ৫০ জনেরও অধিক লোককে হত্যা করে পাকসেনারা। সর্বশেষ ১৩ ডিসেম্বর লালপুরের মহেশপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ মানুষের শক্ত প্রতিরোধের মুখে হানাদার বাহিনী পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। উচ্ছ্বসিত মুক্তিকামী মানুষ স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করে লালপুর হানাদার মুক্ত করে। স্বাধীনতা লাভের পর নর্থবেঙ্গল চিনিকলের ওই পুকুরের নাম দেওয়া হয় শহীদ সাগর এবং প্রশাসক শহীদ লে. (অব.) আনোয়ারুল আজীমের নাম অনুসারে আব্দুলপুর রেল স্টেশনের নাম দেওয়া হয় আজিম নগর। জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক জেলা কমান্ডার আব্দুর রউফ সরকার জানান, তারপর থেকে ১৩ ডিসেম্বর লালপুর মুক্ত দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।