ডেস্ক নিউজ
দুই হাজার নয় সালের ৬ জানুয়ারি দিনবদলের অঙ্গীকারের পানসিতে চড়ে সোনালি ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের। সেই সরকারের ক্ষমতার টানা মেয়াদ ১৩ বছর পেরিয়ে গেছে। টানা দুই মেয়াদের ধারাবাহিকতায় বর্তমান তৃতীয় মেয়াদের সোয়া তিন বছরেই আলোকোজ্জ্বল পথে বাংলাদেশের উন্নয়ন অভিযাত্রায় জনগণকে দেয়া নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির প্রায় ৯০ ভাগ বাস্তবায়নে সক্ষম হয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।
২০০৮ সালের নির্বাচনে ‘দিনবদলের সনদ, ২০১৪ সালে ‘শান্তি গণতন্ত্র উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে’ এবং সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনে ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ শীর্ষক জনগণকে দেয়া নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ভয়াল করোনা মহামারী এবং প্রাকৃতিক-মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ মোকাবেলা করেই অধিকাংশই বাস্তবায়ন করতে পেরেছে আওয়ামী লীগ। গত ১৩ বছরে দেশকে বদলে দেয়ার মতো দেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন-অগ্রগতির ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রতিশ্রুতি রেখে এখন আগামী দ্বাদশ নির্বাচনের ইশতেহার প্রণয়নের কাজে হাত দিয়েছে আওয়ামী লীগ।
আর এই ১৩ বছরে শুধু জনগণকে দেয়া প্রতিশ্রুতি পূরণই নয়, বরং উন্নয়ন-অগ্রগতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বিস্ময়। সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকা ও সমৃদ্ধির সকল সুযোগ ও সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ দেশের মানুষের আস্থা-অর্জন বহুগুণ বাড়িয়ে নিতেও সক্ষম হয়েছে। নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণের পাশাপাশি দেশের জনগণের সঙ্গে গোটা বিশ্বই দেখেছে বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রগতি ও সফলতার ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন সরকারের ম্যাজিক।
সর্বশেষ শত ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্ন করে নিজস্ব অর্থায়নে দেশের সর্ববৃহৎ স্থাপনা স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়নের এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে আওয়ামী লীগ। টানা তৃতীয়বারের মতো সরকারে থেকে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা দেশের উন্নয়ন এমন এক পর্যায়ে নিয়ে গেছেন যে, একাত্তরের পরাজিত পাকিস্তানও এখন বাংলাদেশ হতে চায়। পদ্মা সেতুর পাশাপাশি এ বছরেই খুলে যাবে আরেক বৃহৎ মেগা প্রকল্প মেট্রোরেল। সরকারের সাফল্যের পালকে আরেক নতুন মাইলফলক রচিত হবে।
সম্প্রতি সরকারী এক অনুষ্ঠানে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার দলের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণের কথা দেশবাসীর সামনে তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, আমরা রাজনীতি করি, আমার একটি রাজনৈতিক দল রয়েছে। যখন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করি তখন যে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করি সেখানে এই দেশকে কিভাবে আর্থ-সামাজিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যাব সেই কর্মপরিকল্পনারই একটা কাঠামো থাকে।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে এবং বাজেট প্রণয়ন করেছে তখন তার নির্বাচনী ইশতেহারটা সামনে রেখে কতটুকু তার বাস্তবায়ন হয়েছে এবং কতটুকু করতে হবে তা ধরেই সব সময় কর্মনির্ধারণ করে থাকে। এক্ষেত্রে দলের জন্যও পৃথক কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়। কাজেই আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে কখনও আমাদের নির্বাচনী ইশতেহারটা কিন্তু ফেলে দেইনি। জনগণকে দেয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছি।
সর্বশেষ ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ শীর্ষক নির্বাচনী ইশতেহারে আওয়ামী লীগ পদ্মা সেতুসহ মেগা প্রজেক্টসমূহের দ্রুত বাস্তবায়ন. সন্ত্রাস-সাম্প্রদায়িকতা-জঙ্গীবাদ ও মাদক নির্মূল, পদ্মা সেতুসহ মেগা প্রকল্পসমূহ দ্রুত ও মানসম্মত বাস্তবায়ন, তারুণ্যের শক্তি-বাংলাদেশের সমৃদ্ধি, দারিদ্র্য নির্মূল, মানব উন্নয়নে ডিজিটাল প্রযুক্তির অধিকতর ব্যবহার, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স, প্রত্যেক গ্রামে শহরের সুযোগ-সুবিধা গড়ে তোলা, মানুষের ঘরে ঘরে বিদ্যুতের আলো পৌঁছে দেয়াকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছিল। করোনার মহামারীর মধ্যেও প্রায় সকল নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণ করতে সক্ষম হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেয়া এই রাজনৈতিক দলটি। সমাজের দুষ্টক্ষত বলে পরিচিত দুর্নীতি নির্মূলে পুরোপুরি সফল না হলেও আওয়ামী লীগ সরকার দুর্নীতিবাজ নিজ দলের বড় নেতা হলেও তাকে কোন ছাড় দেয়নি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, নির্বাচন এলেই বিএনপিসহ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলো জনগণকে আকৃষ্ট করতে অনেক প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি দিয়ে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করে। অতীতে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগ ছাড়া বিএনপি-জাতীয় পার্টি বা অন্যান্য দল যারা বৈধ-অবৈধভাবে ক্ষমতায় এসেছে, তারা তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে জনগণকে দেয়া অঙ্গীকারের ৩০ ভাগও বাস্তবায়ন করেনি। বরং যে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়ে তারা ক্ষমতায় এসেছে, ক্ষমতায় গিয়ে জনগণকে দেয়া সব প্রতিশ্রুতি পূরণে তেমন কোন উদ্যোগ দেখা যায়নি।
সেক্ষেত্রে ব্যতিক্রম একমাত্র আওয়ামী লীগ, নির্বাচনের আগে যে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি দিয়ে তারা ক্ষমতায় এসেছে, ক্ষমতায় এসে তার শতভাগ পূরণ করার চেষ্টা করেছে এবং সেক্ষেত্রে সফল হয়ে জনগণের আস্থা-বিশ্বাস আরও দৃঢ় করতে সক্ষম হয়েছে। আর এই বিশাল সফলতা ও দেশকে বদলে দেয়ার অর্জনগুলো সামনে রেখেই আওয়ামী লীগ আগামী দ্বাদশ নির্বাচনে টানা চতুর্থবারের মতো বিজয়ের রেকর্ড অর্জনে আরেকটি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি প্রণয়নের কাজ সম্পন্ন করছে।
২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে আওয়ামী লীগ যখন ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রার বাংলাদেশ’ শিরোনামে নির্বাচনী ইশতেহার দিয়ে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে, তখন দলটির কেন, সারা বিশ্বের মানুষ জানত না করোনা নামক এক মহামারী গোটা বিশ্বকে লন্ডভন্ড করে দেবে। ক্ষমতায় আসার এক বছর না যেতেই ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর চীনে প্রথম এই প্রাণঘাতী করোনা মহামারী ধরা পড়ে। পরের বছর অর্থাৎ ২০২০ সালের ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এরপর করোনা মহামারীতে সারা বিশ্ব অচল হয়ে পড়ে, লাখ লাখ মানুষের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। গোটা বিশ্বের মানুষকে ‘লকডাউন’ নামে ঘরবন্দী করে ফেলে। বিশ্বের অর্থনীতি ধসে পড়ে, যার প্রভাব এখনও চলমান।
টানা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায় এসে এই ভয়াল করোনা নামক মহামারীর সঙ্গে যুদ্ধ করে আওয়ামী লীগ সরকার একদিকে মানুষের জীবন-জীবিকা রক্ষা করতে প্রাণপণ চেষ্টা করেছে, বিশ্বের উন্নত দেশও যখন করোনার ভ্যাকসিন আনতে পারেনি, তখন আওয়ামী লীগ সরকার বাজেটের বিপুল টাকা ব্যয় করে ভ্যাকসিন এনে বিনামূল্যে তা মানুষকে দিয়ে তাদের জীবন রক্ষা করেছে। করোনা মোকাবেলার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রশংসায় এখন পঞ্চমুখ সারাবিশ্ব।
অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, করোনা মহামারী মোকাবেলা করেও আওয়ামী লীগ জনগণকে দেয়া নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণের কথা ভুলে যায়নি। করোনার মধ্যেও পদ্মা সেতুসহ বড় বড় মেগা প্রকল্পের কাজ চলেছে দুর্বার গতিতে। গত ২৫ জুন দেশী-বিদেশী সকল ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত সর্ববৃহৎ স্থাপনা স্বপ্নের পদ্মা সেতুর দুয়ার খুলে দিয়ে দেশের ইতিহাসে এক নবদিগন্তের দ্বার উন্মোচন করেছেন। আগামী ডিসেম্বরে আরেকটি বৃহৎ মেগা প্রকল্প মেট্রোরেলও জনগণের যাতায়াতের জন্য খুলে দেয়া হবে। আগামী নির্বাচনের আগেই জনগণকে দেয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কর্ণফুলী বঙ্গবন্ধু টানেলসহ অন্যান্য মেগা প্রকল্পের কাজ শেষ করে তা উদ্বোধন করার সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার।
এ ছাড়া নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, আওয়ামী লীগ সরকার শক্তহাতে জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাস-সাম্প্রদায়িকতা দমন করতে সক্ষম হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলে তারুণ্যের শক্তিকে দেশের সমৃদ্ধির কাজে লাগাতেও সফল হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরেই বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। দেশের প্রতিটি গ্রামে শহরের উন্নয়ন পৌঁছে দিয়েছে। দেশের কোথাও আজ কুঁড়েঘর, বেড়ার ঘর নেই। প্রতিটি গ্রামে এখন পাকা রাস্তা, বিদ্যুতের আলোর রোশনাইয়ে আলোকিত। দেশের শতভাগ মানুষের ঘরে ঘরে বিদ্যুতের আলো পৌঁছে দেয়ার মতো বিশাল কর্মযজ্ঞও সফলভাবে সম্পন্ন করেছে ক্ষমতাসীন দলটি। আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথেই দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলেছে আওয়ামী লীগ সরকার।
গত ১৩ বছরের শাসনামলের প্রকৃত চিত্র বিশ্লেষণ করে রাজনৈতিক বোদ্ধারাও স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছেন- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী বিশ্বস্ততার সঙ্গে কাজ করে জনগণের আস্থা অর্জন করতে সচেষ্ট থেকেছে, অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের মহাযজ্ঞে জনগণকে সম্পৃক্ত করে বিশ্ববাসীর চোখে উন্নয়নের এক অভূতপূর্ব রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। সৃষ্টি হয়েছে সরকার, আওয়ামী লীগ ও জনতার পবিত্র মেলবন্ধন, যাকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আলোকে আরও সুদৃঢ় ও সুসংহত করতে কাজ করে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকার।
জাতিসংঘসহ বিশ্ব পরিম-লে উন্নয়ন-অগ্রগতির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বিস্ময়। এটা এখন দিবালোকের মতো স্পষ্ট যে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে জনগণ কিছু পায়। সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকা ও সমৃদ্ধির সকল লুক্কায়িত সুযোগ ও সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে জনগণের দল আওয়ামী লীগ। আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে টানা চতুর্থবারের মতো পুনরায় জনগণের ভোটে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ অসমাপ্ত আরদ্ধ কাজ সমাপ্ত করতে কাজ করে যাচ্ছে।
আগামী নির্বাচনেও বিজয়ের ব্যাপারে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক নেতারা বলেছেন, এ দেশের মানুষ মায়ের ভাষায় কথা বলার সুযোগ পেয়েছে নৌকার জন্য। স্বাধীন দেশ পেয়েছে। দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে নৌকায় ভোট দিয়ে। দেশ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হয়েছে নৌকার জন্য, পরমাণু যুগে প্রবেশ নৌকার হাত ধরে, স্যাটেলাইট যুগে প্রবেশ করেছে নৌকার কারণেই। নৌকায় জনগণ ভোট দিয়েছে বলেই নিজস্ব অর্থায়নে স্বপ্নের পদ্মা সেতু এখন বাস্তব। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, আগামী নির্বাচনেও দেশের জনগণ সকল ভেদাভেদ ভুলে সম্মিলিতভাবে দেশ ও জনগণের উন্নয়নের স্বার্থে হক-ভাসানী-সোহরাওয়ার্দীর নৌকা, বঙ্গবন্ধুর নৌকা, শেখ হাসিনার নৌকার পক্ষে স্বতঃস্ফূর্ত রায় দিয়ে উন্নয়নের চাকাকে আরও বেগবান করবে। ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ বিনির্মাণে জনগণ আবারও গণজোয়ারের মতো নৌকার পক্ষেই রায় দেবেন।