ডেস্ক নিউজ
একটি পাঙ্গাশ মাছের ওজন হবে তিন শ’ কেজি। গত ১০ বছর ধরে গবেষণা চলছে বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) পুকুরে। ময়মনসিংহের বিএফআরআইয়ের গবেষণার পুকুরে অন্যান্য মাছের মতো, মেকং নদীর জায়ান পাঙ্গাশ নিয়ে গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা। প্রায় এক দশক ধরে ৫০টি পাঙ্গাশ মাছ নিয়ে এই গবেষণাকার্যক্রম চলছে। এরই মধ্যে মাছগুলোর আকার বেড়েছে সর্বোচ্চ ১৫০ কেজি পর্যন্ত। কিন্তু ব্রিডিং বা প্রজননে এখনো সফলতা আসেনি। বিএফআরআইয়ের মহাপরিচালক ড. ইফতেখার মাহমুদ জানিয়েছেন, আমরা ব্রিডিং এখনো করতে পারিনি। চেষ্টা অব্যাহত আছে। ১৫-১৬ বছর লাগে ব্রিডিং করতে। এই সময় এখনো পার হয়নি।
মাছে ভাতে বাঙালির অন্যতম প্রিয় মাছের নাম পাঙ্গাশ। আবহমানকাল থেকে পাঙ্গাশ মাছ এদেশের মানুষের জন্য রসনার উৎস হিসেবে পরিচিত। এই মাছ প্রাকৃতিক মুক্ত জলাশয়ে বিশেষ করে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের নদীসহ উপকূলীয় অঞ্চলে পাওয়া যায়। এক সময়ে পাঙ্গাশ মাছ আভিজাত্যের প্রতীক হিসেবে উচ্চবিত্তের মাছ হিসেবে বিবেচিত ছিল। বর্তমানে পরিবেশগত পরিবর্তনের ফলে নদীর নাব্যতা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। সাথে সাথে এর প্রাকৃতিক প্রজনন ক্ষেত্রগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ফলে পাঙ্গাশ মাছের উৎপাদনও ক্রমশ কমে যাচ্ছে। তবে পুকুরে পাঙ্গাশ চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা থাকায় আশির দশক থেকেই এর ওপর কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পাঙ্গাশের বিভিন্ন জাত থাকলেও বাংলাদেশে দেশী এবং থাই জাতের জনপ্রিয়তা সবচেয়ে বেশি। এখনো আমাদের দেশীয় প্রজাতির পাঙ্গাশ সুস্বাদু এবং বেশি মূল্যে বিক্রি হয়ে থাকে। দেশের পদ্মা, মেঘনা, ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীতে এ মাছটি বেশি পাওয়া যায়। এরা প্রতিকূল পরিবেশে বেঁচে থাকতে পারে। মার্চ থেকে জুন মাস পর্যন্ত দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন নদীসহ প্রধান নদীগুলোতে এর পোনা পাওয়া যায়। অন্য দিকে, থাই পাঙ্গাশের আদিবাস থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম এবং পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে। ১৯৯৩ সালে সর্বপ্রথম বিদেশী এ প্রজাতির মাছের সফল প্রজনন হয়। বর্তমানে বাণিজ্যিক চাষাবাদের ক্ষেত্রে থাই পাঙ্গাশ একটি জনপ্রিয় নাম। দেশী পাঙ্গাশের চেয়ে এ জাত দ্রুত বৃদ্ধি পায়। এ মাছটি সর্বোচ্চ ১০-১২ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে, বাংলাদেশে মুক্তজলাশয়ে চাষাবাদের জন্য মেকং নদীর জায়ান পাঙ্গাশ জাতটি নিয়ে গবেষণার অন্যতম কারণ হচ্ছে, এই জাতটি দ্রুত বর্ধনশীল। মেকং নদীটি ভিয়েতনাম, লাওস, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, চীন এবং মিয়ানমারের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত। এই নদীর জায়ান পাঙ্গাশ পৃথিবী বিখ্যাত এবং সুস্বাদু। এটি ৩০০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিএফআরআই) একদল বিজ্ঞানী জায়ান পাঙ্গাশের জাত নিয়ে গবেষণা করছেন। বিএফআরআইয়ের গবেষণা পুকুরে ৫০টি জায়ান পাঙ্গাশ নিয়ে গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা। ২০১২ সালের দিকে, এই মাছগুলো নিয়ে গবেষণা শুরু করে বিএফআরআই। সম্প্রতি মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের পুকুর থেকে মাছগুলো তোলা হয়। সেখানে সাংবাদিকদের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন, সংস্থার মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদ। তিনি জানান, প্রাইভেট পর্যায়ের এক চাষি এই মাছ নিয়ে এসেছিল। আমাদের কাছে ২০১২ সালের দিকে ৫০টি মাছ সরবরাহ করেছে। আমরা ব্রিডিং করার চেষ্টা করছি। যখন আমরা এই মাছ নিয়ে আসি, তখন একেকটার সাইজ ২০-৩০ কেজির মধ্যে ছিল। বর্তমানে একেকটা সর্বোচ্চ ১৫০ কেজি পর্যন্ত ওজন হয়েছে। এগুলো সর্বোচ্চ ৩০০ কেজি পর্যন্ত হয়।
বিএফআরআই জানায়, জায়ান পাঙ্গাশের পোনা উৎপাদন করতে গবেষণা চলছে। ব্যাপক পরিসরে পোনা উৎপাদন করে চাষিদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে পারলে এই মাছ চাষে লাভবান হবেন চাষিরা। এই মাছটির গবেষক সিনিয়র বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম। তিনি এই বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি। গবেষণার প্রধান এবং বিএফআরআইয়ের পরিচালক (গবেষণা) ড. খলিলুর রহমানের সাথে এ বিষয়ে কথা বলতে বলেন তিনি। খলিলুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, এ নিয়ে রিপোর্ট করার মতো অবস্থা এখনো আসেনি। আগে সাকসেস আসুক, এরপর প্রেস রিলিজ দেব। তখন ছাপিয়ে দিয়েন। এখন দেয়ার মতো কিছু নেই। এ ব্যাপারে আর কথা বলতে চাননি তিনি।
বিএফআরআই সূত্র জানায়, বাংলাদেশে মাছটি চাষাবাদের আওতায় আনাই মূল লক্ষ্য। বাংলাদেশে এটিকে এত বড় আকৃতির করা নিয়ে বিজ্ঞানীদের যথেষ্ট সন্দেহ ছিল। তবে গবেষণায় ইতোমধ্যে মাছটি সর্বোচ্চ ১৫০ কেজি পর্যন্ত ওজন হয়েছে। এটি সর্বোচ্চ ৩০০ কেজি পর্যন্ত বড় করা সম্ভব। গবেষণা পুকুরে এটির রেণুপোনা উৎপাদনের চেষ্টা করছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রজননের মাধ্যমে মাছটিকে সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়ার প্রচেষ্টায় ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা এটি নিয়ে গবেষণাকার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। এখনো প্রজননে সফলতা না এলেও শেষ পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা জায়ান পাঙ্গাশ ব্রিডিংয়ে সফল হবেন বলেই মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। গবেষণার সাথে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনেকে মনে করতে পারেন জায়ান পাঙ্গাশ রাক্ষুসে মাছ। কিন্তু একদম রাক্ষুসে স্বভাব নেই এর মধ্যে। খৈল, কুঁড়া ও ভুসি এই মাছের খাবার।